বিদ্যার্থীদের ক্ষেত্রে ভাবনা-চিন্তা করে বিষয় নির্বাচন করলে ভালো হবে। প্রেম-প্রণয়ে বাধাবিঘ্ন থাকবে। কারও সঙ্গে মতবিরোধ ... বিশদ
অন্যদিকে, লোকসভা ভোটে দলীয় প্রার্থীদের প্রচারে ওইদিনই কেশপুর থেকে চন্দ্রকোণা যাচ্ছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর যাত্রাপথের পাশ থেকে কয়েকজন যুবক মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেয়। মমতা গাড়ি থেকে নামতেই ওই যুবকরা দ্রুত পালিয়ে যায়।
ঘটনা দুটি আপাতদৃষ্টিতে দু’রকম মনে হলেও সামগ্রিক বিচারে দু’য়ের মধ্যে যথেষ্ট মিল দেখা যাচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর গালে থাপ্পড় মেরে তাঁকে সরাসরি অসম্মান করেছে সুরেশ নামে তেত্রিশ বছর বয়সি এক যুবক। বিষয়টিকে হামলা বললে বেশি বলা হয় না। অন্যদিকে, ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়া কোনও অপরাধ নয়। তা একটি গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের পরিপন্থীও নয়। যে কেউ শ্রীরামচন্দ্রের নাম নিতেই পারে। কোটি কোটি মানুষের কাছে রামচন্দ্র ভগবান। অনেকেই তাঁর পুজো করেন। জয় শ্রীরাম ধ্বনি কোনও অবৈধ বা অশালীন স্লোগানও নয়। তবু মুখ্যমন্ত্রীর যাত্রাপথের পাশ থেকে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দেওয়ার ঘটনাটিকে প্রশ্নের ঊর্ধ্বে রাখা যায় না। কারণ, ওইসময় ওই ধ্বনি দেওয়ার পিছনে যুবকগুলির উদ্দেশ্য সম্পর্কে সন্দেহ রয়েই যায়। প্রশ্ন ওঠাই স্বাভাবিক, নিছক শ্রীরামচন্দ্রের প্রতি অবিচল ভক্তি প্রদর্শন করতেই কি ওই গুটিকয় যুবক উচ্চস্বরে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়েছিল? না কি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করাই তাদের লক্ষ্য ছিল? মুখ্যমন্ত্রীর চোখের সামনে ওই আচরণ করে তাঁকে হেয় প্রতিপন্ন করাও কি ওই যুবকদের উদ্দেশ্য ছিল না?
ভুললে চলবে না উৎস যাই হোক না কেন, জয় শ্রীরাম ধ্বনিটি বেশ কিছুকাল যাবৎ বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের প্রধান স্লোগানে পরিণত হয়েছে। মিটিং মিছিল থেকে শুরু করে নিজেদের যাবতীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ও দলের লোকজন ওই ধ্বনিটি ব্যবহার করে থাকেন। কোথাও কোথাও নিজেদের দাপট দেখাতেও সম্মিলিতভাবে জয় শ্রীরাম ধ্বনি তোলেন ওই দলটির কর্মী সমর্থকরা। কোনও বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বা মুখ্যমন্ত্রী বা প্রধানমন্ত্রীকে কালো পতাকা দেখালে বা দেখানোর চেষ্টা করা হলে পুলিস ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করে। গোটা দেশে, গোটা বিশ্বেই এ প্রথা চলে আসছে। শনিবারের ঘটনার পরও পুলিস সংশ্লিষ্ট তিন যুবককে পাকড়াও করেছে। জানা গিয়েছে, ধৃতদের একজন বিজেপির এক যুবনেতা। এই দলটি এই মুহূর্তে রাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তিতে পরিণত হওয়ার জন্য যাবতীয় চেষ্টা চালাচ্ছে। এবারের লোকসভা ভোটে বিজেপির প্রধানতম মুখ তথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মোদির ‘দু’চোখের বিষ’ এখন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলায় মমতার একচেটিয়া আধিপত্যে আঘাত হানতে ভোটের মুখে মোদি ও তাঁর দলের কেষ্টবিষ্টুরা দফায় দফায় এরাজ্যে হানা দিচ্ছেন। আজ সোমবারও রাজ্যের দু’টি এলাকায় মোদির নির্বাচনী জনসভা হওয়ার কথা। তাই, মোদির দলের এক যুবনেতার নেতৃত্বে শনিবার মমতাকে উদ্দেশ করে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি দেওয়ার ঘটনাটি নিছক রামভক্তির স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ না-হয়ে পরিকল্পিত সূচি অনুসারে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে হেয় করার প্রয়াস হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ওই ঘটনা ঘটিয়ে তাঁকে প্ররোচিত করার অপপ্রয়াসও বলা চলে। বিষয়টি রাজনৈতিক সৌজন্যের পরিপন্থী। তাই তা যথেষ্ট নিন্দনীয়। অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে শনিবার যে পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল ভবিষ্যতে তার পুনরাবৃত্তি না হওয়াই বাঞ্ছনীয়।