বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
সারা দুনিয়া মানে, এই সমস্ত অন্যায়ের হাত থেকে মেয়েদের বাঁচানোর একমাত্র রাস্তা হল নারীর ক্ষমতায়ন। প্রথমে প্রয়োজন উপযুক্ত শিক্ষা—যে শিক্ষা নারীকে সর্বার্থে পুরুষের সমকক্ষ করে তোলে। তারপর দরকার তাঁদের আর্থিক এবং রাজনৈতিক স্বাধীনতা। সত্যিকার উন্নতি কাম্য হলে নারীর এই সার্বিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে হবে। কোনও রাজনৈতিক দল এই প্রশ্নে সামনা-সামনি দ্বিমত পোষণ করে না। কিন্তু, বাস্তবে যে দৃষ্টান্ত তারা রাখে তার সঙ্গে তাদের আসর কাঁপানো ভাষণের মিল খুঁজে পাওয়া যায় সামান্যই। তাই আমরা দেখছি, এ-দেশের সব কাজে মেয়েদের পুরুষদের সমান মজুরি বা বেতন দেওয়া হয় না। সম্প্রতি প্রকাশিত একটি বেসরকারি সমীক্ষা রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে—কর্মক্ষেত্রে মহিলাদের অংশগ্রহণের হার বৃদ্ধির পরিবর্তে কমছে! ২০০৫ সালে ৩৬.৭ শতাংশ মহিলা নানা ক্ষেত্রে কাজ করতেন। সংখ্যাটি ২০১৮ সালে ২৬ শতাংশে নেমে এসেছে। ওই সমীক্ষায় আরও প্রকাশ যে ২০১৮ সালে যত মহিলা কর্মরত ছিলেন তাঁদের মধ্যে সাড়ে ১৯ কোটি অসংগঠিত ক্ষেত্রে নিযুক্ত অথবা তাঁরা কাজ করে থাকেন বিনা পারিশ্রমিকে। একদিকে আছে চূড়ান্ত লিঙ্গবৈষম্য, অন্যদিকে ডিজিটাল যুগের উপযুক্ত না-হয়ে ওঠার কারণেও অনেক মহিলা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। রিপোর্টটিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে যে, বিশেষত তরুণীদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের উপযুক্ত করে তুলতে হবে। মেয়েদের ডিজিটাল সাক্ষরতার প্রসারের সঙ্গে পরিচালনা ও নেতৃত্ব দানের দক্ষতা বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব দিতে হবে। মেধার বিকাশের সঙ্গে পুঁজি ও প্রযুক্তিকেও সহজলভ্য করতে হবে তাঁদের কাছে। এই সবই সহজ হতে পারে রাষ্ট্রপরিচালনায় নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে পারলে।
এই লক্ষ্যেই অটলবিহারী বাজপেয়ির আমলে সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণ করার চিন্তাভাবনা শুরু হয়। সেই সরকার বিদায় নেওয়ার পর মাঝখানে পেরিয়ে গিয়েছে মনমোহন সিংহের দুটি ইউপিএ সরকার। দ্বিতীয় এনডিএ (নরেন্দ্র মোদির) সরকারেরও বিদায় আসন্ন। তবু, এই দীর্ঘদিনেও মহিলা সংরক্ষণ বিল সংসদে পাশ করানো যায়নি। অথচ ইউপিএ-র চেয়ারপার্সন ছিলেন সোনিয়া গান্ধী স্বয়ং এবং এই সময়ে সংসদ দু’জন মহিলা স্পিকারও পেয়েছে। সেই দিক থেকে ব্যতিক্রমী রাজনৈতিক সংস্কৃতি তুলে ধরেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। চলতি লোকসভায় তাঁর দলের এমপিদের মধ্যে ৩৫ শতাংশ মহিলা—যে দাবি আর কোনও দল করতে পারবে না। মঙ্গলবার তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের পশ্চিমবঙ্গের যে প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করেছেন, তাতে মহিলা প্রার্থী ৪১ শতাংশ। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত এবং পুরসভায় ৫০ শতাংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষণের পর সংসদের জন্য তৃণমূলের এই দৃষ্টান্ত ঐতিহাসিক। তবে, এটাও মাথায় রাখতে হবে যে মহিলা জনপ্রতিনিধি নির্বাচনটাই যথেষ্ট নয়, তাঁদের কাজকর্মের স্বাধীনতাও গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যেন কোনোভাবেই স্বামী, বাবা, ভাই কিংবা দলের পুরুষ নেতৃত্বের হাতের পুতুলটি না হয়ে যান—যে ব্যাধি এ-দেশের সর্বস্তরে কিন্তু প্রকট। নারীর ক্ষমতায়নের পক্ষে এই দৃষ্টিভঙ্গির বিকল্প নেই।