বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
এমন পরিস্থিতিতে ভারতের দিক থেকে একটি কঠোর প্রত্যাঘাত জরুরি হয়ে পড়েছিল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আগেই ঘোষণা করেছিলেন, সেনাবাহিনীকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। কবে, কখন, কীভাবে পুলওয়ামা-কাণ্ডের জবাব দেবে তা তারাই ঠিক করবে। প্রধানমন্ত্রীর ওই ঘোষণা যে নিছকই ফাঁকা আওয়াজ ছিল না তা প্রকাশিত হতে খুব সময় লাগেনি। পুলওয়ামার ঠিক বারো দিনের মাথায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর একদল অকুতোভয় সৈনিক ভোররাতে পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের অনেকটাই ভিতরে ঢুকে বোমাবর্ষণ করে এসেছে। এই পর্যন্ত কারও কোনও সংশয় নেই। বিষয়টি পাকিস্তানও অস্বীকার করেনি। কিন্তু সাম্প্রতিককালের ওই নজিরবিহীন অপারেশনের ফল ঠিক কী- প্রশ্ন সেটা নিয়েই। আমাদের সরকার বা বিমান বাহিনীর কোনও পদাধিকারীই সরকারিভাবে জানাননি ওই অপারেশনে ঠিক কতজন জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে অথবা তাদের বা তাদের মদতদাতা রাষ্ট্রটির ঠিক কতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তবে, সেদিন সকাল থেকেই বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হতে থাকে বিমান বাহিনীর হানায় বালাকোটে জয়েশ-ই-মহম্মদ সংগঠনের মূল ঘাঁটিটি ধুলোয় মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, ওই ঘাঁটিতে হাজির-থাকা প্রায় সাড়ে তিনশো জঙ্গির ভবলীলা সাঙ্গ হয়েছে। ওই খবরে আপমর ভারতবাসী একইসঙ্গে গর্বিত ও স্বস্তিবোধ করেছিল। পাকিস্তানকে মুখের মতো জবাব দেওয়া হয়েছে বলে খানিক শ্লাঘাও অনুভূত হয়েছিল।
অন্যদিকে, বালাকোটে হানার কয়েকঘণ্টা পর থেকেই পাকিস্তান সরকার দাবি করছিল, ভারতীয় বিমান বাহিনী হামলা চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। বালাকোটে কোনও মৃত্যু বা ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি। পরদিন থেকে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিরাও প্রায় পাকিস্তানের সুরেই কথা বলতে থাকে। তারাও দাবি করে, তথাকথিত ঘটনাস্থলে গিয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে এবং স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে ভারতীয় বিমান বাহিনী বালাকোট এলাকায় গিয়ে বোমা ফেললেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়েছে। কোনও প্রাণহানির ঘটনাই ঘটেনি। এই পরস্পর-বিরোধী তথাকথিত তথ্যে দেশবাসীর বড় অংশের মধ্যে যথেষ্ট বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ওই বিভ্রান্তি দূর করতে সরকারের পক্ষ থেকেও এখনও তেমন কার্যকরী কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে কেন্দ্রের শাসক দলের নেতারা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ গোছের ভূমিকা অবলম্বন করেছেন। শাসক দলের নেতাদের বক্তব্য এবং শরীরী ভাষা জানা দিচ্ছে বালাকোট-কাণ্ডের জেরে দেশবাসীর মধ্যে সৃষ্টি হওয়া তীব্র আবেগকে তাঁরা আসন্ন লোকসভা ভোটে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে উদগ্রীব। কিন্তু, বালাকোট অভিযানে ঠিক কী হয়েছিল তা এখনও প্রায় অন্ধকারেই।
সরকার ও শাসক দলের এই ভূমিকা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে দেশের বেশ কয়েকজন বিরোধী নেতা-নেত্রীও বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি, বালাকোট অভিযান আমাদের অসমসাহসী বিমান বাহিনীর সাফল্য। সেজন্য আমরা গর্বিত। কিন্তু, ওই অভিযান সম্পর্কে সৃষ্টি-হওয়া সংশয়গুলির দ্রত নিরসন করতে হবে। বালাকোট নিয়ে রাজনীতি করা চলবে না। মমতা দেবীর দাবি যথার্থই। বিমান বাহিনীর পক্ষ থেকেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, বালাকোট অপারেশনের সব তথ্য সরকারের কাছে দেওয়া হয়েছে। সরকারই ঠিক করবে কবে তা জনসমক্ষে আনা হবে। দেশের সাধারণ নাগরিকরাও চান, সরকার বিষয়টিকে যথাযথ গুরুত্ব দিক। বাতাসে ভেসে বেড়ানো সংশয় দূর করতে দ্রুত উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক।