সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: লোন পরিশোধ স্থগিত টানা ছ’মাস। ধুঁকছে শিল্প-বাণিজ্যে আর্থিক লেনদেনও। এই পরিস্থিতিতে বেহাল অর্থনীতি সামাল দিতে ফের ব্যাঙ্কিং সেক্টরই সুদের হারে কোপ দিতে পারে কেন্দ্র। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠকের আগে এই সম্ভাবনাই প্রবল হয়ে দেখা দিয়েছে। আগস্টেই অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে আর্থিক ও ব্যাঙ্কিং সেক্টরে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে চলেছে কেন্দ্র। সেই সূত্রেই ৪ থেকে ৬ আগস্ট পর্যন্ত রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আর্থিক নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছে। ওই তিনদিনের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকের পর ৬ আগস্ট, বৃহস্পতিবার বেশ কিছু নতুন অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত ঘোষণা করবে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গেও বৈঠক হয়েছে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের। বিষয়, অর্থনীতিকে ট্র্যাকে ফেরানো। বিষয় যতই থাকুক না কেন, সবকিছু ছাপিয়ে উঠে আসছে ঋণের ইএমআই স্থগিত রাখার বিষয়টি। যা নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে প্রবল টানাপোড়েন শুরু হয়েছে ব্যাঙ্কিং সেক্টরের। লকডাউন শুরুর পর কেন্দ্র ঘোষণা করেছিল, ব্যাঙ্ক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণ তিন মাস শোধ করতে হবে না। পরে সেই সময়সীমা বাড়িয়ে ছ’মাস করা হয়। অর্থমন্ত্রক এখন চাইছে, নভেম্বর মাস পর্যন্ত লোন পরিশোধ স্থগিত থাকুক। কিন্তু ব্যাঙ্কিং সেক্টর তা মানতে নারাজ। ৩১ আগস্টের পরও এই সময়সীমা বাড়ানো হলে ঋণ খেলাপের হার আকাশ ছোঁবে। ধসে পড়বে ব্যাঙ্কের আর্থিক জোগান। ঠিক এরকম অবস্থায় জমা টাকায় সুদের হারে ফের কোপ পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। রেপো রেট কমানো হলে সুদের হার কমবেই। কিন্তু অপরিবর্তিত থাকলেও বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যাঙ্ক আর্থিক চাপ কমাতে সুদের হার কমিয়ে দিতে পারে। শুক্রবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, লোন পরিশোধ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নিয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ও সরকারের মধ্যে আলোচনা চলছে। শীঘ্রই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। সরকার চায়, বিশেষ করে পর্যটন ও হোটেল শিল্পে লোন পরিশোধ স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত আরও কিছুদিন চালু থাকুক। একইভাবে সরকারের একাংশ মনে করছে, অটোমোবাইল ও ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকেও এই ছাড় দেওয়া হোক। আরও একটু সময় দেওয়া হোক শিল্প-বাণিজ্য মহলকে ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য। কিন্তু বেসরকারি ও রাষ্ট্রায়ত্ত—কোনও ব্যাঙ্কই এই সিদ্ধান্ত মানতে চাইছে না। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ইএমআই স্থগিত রাখা হলে ব্যাঙ্কের আয় বন্ধ থাকবে টানা ৯ মাস। যা চরম সঙ্কট নিয়ে আসবে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে। পাশাপাশি সুদের হার যদি এভাবেই ক্রমাগত কমতে থাকে, তাহলে সাধারণ গ্রাহকদের চরম আর্থিক ধাক্কার সম্মুখীন হতে হবে। শিল্পমহলের আশা, আর্থিক নীতি নির্ধারক কমিটির বৈঠকে আবার রেপো রেট কমানো হবে। তবে পাল্টা একটা ধারণাও রয়েছে যে রেপো এবার অপরিবর্তিত থাকবে।
পাশাপাশি ডেভেলপমেন্ট ফিনান্স ইনস্টিটিউশন (ডিএফআই) নামক একটি প্রতিষ্ঠান গঠন করতে চলেছে কেন্দ্র। শুক্রবার অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন বলেছেন, ডিএফআই কীভাবে কাজ করবে সেটা শীঘ্রই চূড়ান্ত হবে। ব্যাঙ্কিং সেক্টরের উপর চাপ কমাতে এই প্রতিষ্ঠান অতিরিক্ত অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করবে। ইতিমধ্যেই গঠিত হয়েছে একটি কমিটি। ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন প্রকল্পের মাধ্যমে বাছাই হবে রাস্তা, সড়ক, উড়ালপুল, আবাসন নির্মাণের রোডম্যাপ।