সংবাদদাতা, কাটোয়া: প্রায় দু’মাস ধরে পুজো-পার্বণ বন্ধ থাকায় চাহিদা নেই বাতাসা, নকুলদানার। এর জেরে ধুঁকছে কাটোয়ার বাতাসা, নকুলদানা তৈরির কারখানাগুলি। এই পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে কার্যত হিমশিম খাচ্ছেন বাতাসা তৈরির কারিগররা। কাটোয়া মহকুমারজুড়ে অনেকেই বাড়িতে ছোট কারখানা খুলে অল্প সংখ্যক কর্মী রেখে নকুলদানা, কদমা, হরেক রকম ছাঁচের বাতাসা তৈরি করেন। সেইসব সামগ্রী গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন দশকর্ম এবং মুদিখানা দোকানে সরবরাহ করেন। কিন্তু করোনার জেরে গত দু’মাসে বন্ধ হয়েছে মহকুমার একের পর এক পুজো, অনুষ্ঠান। শুধুমাত্র নিয়মরক্ষার পুজো করছেন কমিটির সদস্যরা। তাই বাতাসা, নকুলদানার চাহিদাও কমেছে। বাজারে চাহিদা না থাকায় কারখানাগুলিও ধুঁকছে। এতেই রুজির টান পড়েছে কারিগরদের। মঙ্গলকোটের জালপাড়ার বাসিন্দা শ্যামল বালো, দুলাল রায় বলেন, বাতাসা, কদমা, নকুলদানা তৈরি করে তা শহর ও গ্রামাঞ্চলের বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করতাম। তাছাড়া পুজো ও মেলাগুলিতে বাতাসার স্টল তৈরি করে যা আয় হতো, তা দিয়ে কারখানার কর্মীদের বেতন মিটিয়ে দিব্যি সংসার চলে যেত। কিন্তু করোনার জেরে সব শেষ হয়ে গেল। চাহিদা না থাকায় এখন অল্প পরিমাণে বাতাসা, নকুলদানা তৈরি করছি। কিন্তু তাতে কর্মীদের বেতন মেটানো যায় না। বাজারে ঠিকমতো দোকান না খুললে বরাতও পাওয়া যাচ্ছে না। সংসার কীভাবে চালাব বুঝতে পারছি না। কাটোয়ার পানুহাটের আর এক বাতাসা কারখানার মালিক রতন দেবনাথ বলেন, বৈশাখ মাস থেকে শুরু করে জ্যৈষ্ঠ মাসে বিভিন্ন গ্রামের হরিনাম সংকীর্তন সহ সারা বছরই মুড়কি, নকুল দানা, বাতাসা, কদমার চাহিদা তুঙ্গে থাকে। বাড়িতে গৃহস্থের পুজোতেও নকুলদানার চাহিদা রয়েছে। এখন সবই বন্ধ। দশকর্মার দোকানগুলি থেকেও আর সেভাবে বরাত আসছে না। বিক্রি না হওয়ায় বেশি পরিমাণে বাতাসা তৈরি করে লাভ নেই। তাছাড়া কাঁচামাল ঠিক মতো পাওয়া যাচ্ছে না। কর্মীদের বেতন মিটিয়ে সংসার চালাব কীভাবে? জানা গিয়েছে, পূর্বস্থলীর জামালপুরের বুড়োরাজ মেলা, মঙ্গলকোটের ক্ষীরগ্রামের যোগাদ্যা মেলায় প্রতি বছর কয়েক হাজার টাকার বাতাসা, কদমা, ছাঁচের কদমা প্রভৃতি বিক্রি হতো। এবছর মেলাগুলি বন্ধ থাকায় কারিগরদের মাথায় হাত পড়েছে। দশকর্ম দোকানগুলিতে পুরনো মজুত বাতাসা, নকুলদানা বিক্রি করা এখন রীতিমতো চ্যালেঞ্জের। নতুন করে বরাত দিতেও সাহস পাচ্ছেন না তাঁরা।
কেতুগ্রামের ব্যবসায়ী নিতাই ঘোষ বলেন, আগে মানকর থেকে কদমা আনতাম। এখন কাটোয়া শহরেরই বাতাসা, কদমা এনে বিক্রি করি। কিন্তু ক্রেতা না থাকলে বরাত দিয়ে কী করব।