বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
শনিবারের ঘটনার রেশ বজায় ছিল রবিবার দুপুর থেকেই। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং গেরুয়া শিবিরের মনোভাবাপন্ন একটি পত্রিকার স্টলের বাইরে বিধাননগর পুলিস কমিশনারেটের কর্তারা এবং পুলিস কর্মীদের ছয়লাপ ছিল। যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে তাঁরা তৎপর ছিলেন। কিন্তু তারপরেও বিকেলের পর থেকে অশান্তি শুরু হতে থাকে নির্দিষ্ট ওই দু’টি স্টলের সামনেই। এদিন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা ‘হনুমান চালিশা’ মেলার ভিতরে বিতরণ করার সিদ্ধান্ত নেন। তাঁরা সেইমতো বিলিও করছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, পুলিস এসে সেই কাজে বাধা দেয়। কোনওমতেই ‘হনুমান চালিশা’ বিলি করা যাবে না বলে পুলিস বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের জোর করে স্টলে ঢুকিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। তখনই তাঁদের সরকারি বিরোধী এবং পুলিসকে ধিক্কার স্লোগানে তপ্ত হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। পুলিসের সঙ্গে সাময়িক ধস্তাধস্তি হতে থাকে। প্রায় শ’দেড়েক কর্মী-সমর্থক চারপাশ থেকে স্লোগান তুলতে থাকেন। সেই সময় পাশ দিয়ে যাওয়া সাধারণ মানুষ আতঙ্কে
পার্শ্ববর্তী অন্যান্য প্রকাশনার স্টলের ভিতরে ঢুকে যান। পরে পুলিসকর্তাদের সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের দু’-তিনজন নেতা আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
কিন্তু তারপরেও পুলিসের বিশাল সংখ্যক কর্মী ঘটনাস্থলে আশপাশেই মোতায়েন ছিলেন। এরই কিছুক্ষণের মধ্যে বাইরে থেকে কিছু যুবক এসে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের স্টলের বাইরে সিএএ-এনআরসি বিরোধী ব্যানার লাগানোর চেষ্টা করেন। তখন আবার পরিস্থিতি তপ্ত হয়ে ওঠে। ওই যুবকদের সঙ্গে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী-সমর্থকদের ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। রীতিমতো মারপিটের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ব্যানার ছিঁড়ে দেয় গেরুয়া শিবিরের লোকজন। পুলিস সঙ্গে সঙ্গে ওই ব্যানার লাগাতে আসা যুবকদের সরিয়ে নিয়ে যায়। বিশ্ব হিন্দু পরিষদের এক নেতার কথায়, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বইমেলায় ঝামেলা লাগানোর চেষ্টা হচ্ছে। শনিবারও একইভাবে গণ্ডগোল পাকানো হয়েছে। এরপরই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের কর্মী-সমর্থকরা ‘আজাদি’ স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে। প্রায় আধ ঘণ্টার কাছাকাছি সিএএ’র সমর্থনে এবং ‘আজাদি’ স্লোগান দিতে থাকে তারা। যার জেরে মেলার অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতি আরও গরম হয়ে ওঠে। তা বজায় ছিল মেলার শেষ হওয়া পর্যন্ত।
গিল্ডের সাধারণ সম্পাদক সুধাংশুশেখর দে অবশ্য পরে বললেন, এমন একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে, তাতে আমাদের এই আন্তর্জাতিক বইমেলার আনন্দে চোনা পড়ে গিয়েছে। সম্পূর্ণ অনভিপ্রেত ঘটনা। কত মানুষ, কত বিদেশি আসেন। তাঁদের কাছে কলকাতাকে ছোট করা হচ্ছে। এখানে সবধর্মের স্থান রয়েছে। রয়েছে সব রাজনৈতিক দলের মুখপত্রের স্টল। কিন্তু যা হচ্ছে, তা কখনওই মেনে নেওয়া যায় না। আগামী বছর এব্যাপারে নতুন করে ভাবতে হবে।
এই ঘটনাগুলি বাদ দিয়ে এদিন মোটামুটি শান্তিপূর্ণই ছিল বইমেলা চত্বর। বইপ্রেমীরা মজে ছিলেন সেলফিতে। কাউকে আবার দেখা গেল, স্টল থেকে বই কিনেই সেটিকে নিয়ে সেলফি তুলছেন অথবা ভিডিও কল করে নিজের পছন্দের মানুষকে জানাচ্ছেন। যদিও নেটওয়ার্কের অত্যন্ত খারাপ থাকায় সেই কাজটি করতে গিয়ে বেগ পেতে হয়েছে তাঁদের অনেককেই। দে’জ, আনন্দ, দেব সাহিত্য কুটীর, লালমাটির মতো বেশ কয়েকটি নামজাদা প্রকাশনার স্টলে মানুষের ভিড় ছিল চোখ টানার মতো। তবে বাদ যায়নি খাবারের স্টলও। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের স্টলের বাইরে লোকগীতি গাইছিল একটি দল। তাদের মূল সুর ছিল ঐক্য। সারা দেশে বিদ্বেষের বিষ ছড়াচ্ছে। সেই আবহকে নস্যাৎ করতে একের পর এক মিলনের গান শুনিয়ে যাচ্ছিলেন গায়ক। তাঁকে ভিড় করে দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকেই। অন্যদিকে, সার্বিকভাবে বইমেলার যা পরিবেশ, তা থেকে খুব একটা আলাদা ছিল না লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়ন চত্বরও। সেখানে ভিড় উপচে পড়েছে। কিন্তু বিক্রির চেয়ে আড্ডা আর বই ঘেঁটে দেখাই চলেছে বেশি।