ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
পাট পরিবেশ বান্ধব। তাকে কাজে লাগাতে এবং পাট শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সরকার ১০০ শতাংশ খাদ্য দ্রব্য এবং ২০ শতাংশ চিনির মোড়ক বা প্যাকেজিংয়ে চটের বস্তার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক করার নীতি আনে। এদিকে, কেন্দ্রীয় তথ্য বলছে, এদেশে ২০১৯-’২০ সালে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে খাদ্যশস্য চাষ হয়েছে এবং প্রায় ৭.৫ কোটি মেট্রিক টন খাদ্যশস্য মজুত করা হয়েছে। সরকারি তথ্য বলছে, ১৯৫০-’৫১ সালের পর এবারই এতটা খাদ্যশস্য উৎপাদন হল। এই খাদ্যশস্যকে মজুত করতে প্রতি মাসে তিন থেকে সাড়ে তিন লক্ষ গাঁট জুট ব্যাগের প্রয়োজন, বলছে শিল্পমহল। প্রতিটি গাঁটে ৫০০টি পাটের ব্যাগ থাকে। কিন্তু চটকলগুলির যে উৎপাদন ক্ষমতা, সেখানে মাসে দু’থেকে আড়াই লক্ষ গাঁট জুট ব্যাগ তৈরি হতে পারে। অর্থাৎ প্রয়োজনের তুলনায় উৎপাদন সমান হারে হবে না, এমনটাই জানাচ্ছেন পাট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত কর্তারা। সেই খামতি ঢাকতে কেন্দ্রীয় সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে ৩.৫ লক্ষ গাঁট প্লাস্টিক ব্যাগ ব্যবহৃত হবে জুট ব্যাগের পরিবর্তে। এর দায় নিতে হবে সেই পাট শিল্পকেই। কারণ, ওই পরিমাণ ব্যাগের বরাত এবার কম পাবে চটকলগুলি। এতে পাটের দাম কমে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তাতে ক্ষতি কৃষকেরও।
কেন এত বছর পরও চটকলগুলি উৎপাদন ক্ষমতা বাড়াতে পারল না? কেন তারা আধুনিকীকরণের পথে হাঁটছে না? সংশ্লিষ্ট মহলের ব্যাখ্যা, এর মূল কারণ, চটকল মালিকদের একাংশ কাঁচা পাট বাকিতে কেনে, নগদে নয়। অনেক ক্ষেত্রেই সময়ে সেই টাকা পায় না চাষিরা, এমনটাই অভিযোগ। ফলে পাটের বাজারে স্থিতাবস্থা থাকে না। মালিকরাও পরিকাঠামো উন্নয়নের পথে হাঁটেন না। সরকার পক্ষেরও চাষিদের দাম মেটানোর উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষেত্রে সদিচ্ছার অভাব দেখা যায়।
দেশের প্রায় ৮০ শতাংশ পাট এবং ৭০ শতাংশ পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন কেন্দ্র পশ্চিমবঙ্গ। কিন্তু এখানে পাটের ব্যবহার বাড়ানোর বিষয়ে কেন্দ্র ও রাজ্য— দুই প্রশাসনই উদাসীন, এমনটাই অভিযোগ। আগে যেখানে আলু, পেঁয়াজ, বা চালের বস্তায় পাট ব্যবহার করা হতো, সেখানে এখন প্লাস্টিকের রমরমা। অনেকেরই যুক্তি, পাটের চেয়ে প্লাস্টিক সস্তা। কিন্তু পাটের বস্তা বারবার ব্যবহারযোগ্য, তা জীবাণু বিয়োজ্য— একথাকে কোনও গুরুত্ব দেয় না বা প্রচার করে না সরকার। এই সচেতনতাই পাটের বাজারকে চাঙ্গা করতে পারত। পাটের দাম না পেয়ে অন্যান্য ফসল চাষের দিকে ঝুঁকছে চাষিরা। ২০১১-’১২ সালে যেখানে ন’লক্ষ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হতো, সেখানে তা এবার ছ’লক্ষ হেক্টরে নেমে এসেছে। এখন চাষে সার্টিফায়েড পাট বীজ ব্যবহার করা হয় মাত্র ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। বাদবাকির অনেকটাই ভেজাল থাকে। তাই উৎপাদনেও খামতি থাকে। এমন অনেক অসুবিধার যতক্ষণ না সমাধান হবে, ততক্ষণ পাটের বাজার বাড়ানো যাবে না, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।