পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
বেশ কিছুদিন ধরেই আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছিল সংস্থাটি। বাড়ছিল ঋণের পরিমাণ। অনলাইন ভ্রমণ সংস্থাগুলির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারছিল না। ক্রমাগত পিছিয়ে পড়ছিল ১৭৮ বছরের সংস্থাটি। বিপদ বুঝেই পকিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে তৎপর হয়েছিলেন টমাস কুকের বোর্ড সদস্যরা। তাদের অন্যতম অংশীদার তথা চীনা সংস্থা ফোসান-এর সঙ্গে ৯০ কোটি পাউন্ড বিনিয়োগের চুক্তিও চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তার মধ্যে আরও অর্থের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। সেই অর্থাভাবই টমাস কুকের কফিনে শেষ পেরেকটি পুঁতে দেয়। এদিনের সিদ্ধান্তের পর বন্ধ করে দিতে হবে সংস্থার ট্রাভেল এজেন্সিগুলিও।
সংস্থাটির তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হয়েছে, প্রচুর চেষ্টা সত্ত্বেও সংস্থার শেয়ার হোল্ডার ও লগ্নিকারীদের মধ্যে যে আলোচনা হয়েছিল, তা শেষ অবদি চুক্তিবদ্ধ হয়নি। তারপরেই বোর্ড সংস্থাটিকে দ্রুত দেউলিয়া ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়। টমাস কুকের চিফ এগজিকিউটিভ পিটার ফ্রাঙ্কহাউস বলেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের দিন। বিষয়টি আমার কাছে গভীর অনুতাপের যে, আমি ও অন্যান্য বোর্ড সদস্যরা সফল হলাম না।’ দেউলিয়া ঘোষণার পরেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সংস্থার শীর্ষকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন।
এদিকে, সংস্থার এই পরিণতিতে বিপাকে পড়েছেন টমাস কুকের সঙ্গে বেড়াতে যাওয়া বিশ্বব্যাপী প্রায় ছ’লক্ষ পর্যটক। ইতিমধ্যে তাঁরা অভিযোগ জানাতে শুরু করেছেন। সংস্থার থেকে ক্ষতিপূরণও দাবি করেছেন তাঁরা। এই পরিস্থিতিতে ব্রিটিশ পর্যটকদের নিজেদের দেশে ফিরিয়ে দিতে ‘অপারেশন ম্যাটোরহর্ন’ শুরু করেছে জনশন প্রশাসন। সেইমতো বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বিমানে করে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে পর্যটকদের। যার জন্য বহু চাটার্ড বিমান ভাড়া নিচ্ছে ১০ ডাউনিং স্ট্রিট। এই লক্ষ্যে সরকার ও অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক একজোটে কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ব্রিটেনের পরিবহণ সচিব গ্র্যান্ট শ্যাপস। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৭ সালে মোনার্ক এয়ারওয়েজ ভেঙে পড়ার পর যাত্রীদের ফিরিয়ে আনতে ‘অপারেশন ম্যাটোরহর্ন’ চালু করেছিল ব্রিটিশ প্রশাসন।
১৮৪১ সালে পথচলা শুরু করেছিল সংস্থাটি। ডার্বিশায়ারের আইনপ্রণেতা টমাস কুক এর প্রতিষ্ঠাতা। কম খরচে ট্রেনে করে পর্যটকদের ব্রিটেনের বিভিন্ন শহর ঘুরিয়ে দেখানো দিয়ে শুরু হয়েছিল টমাস কুকের যাত্রা। প্রথম লাওবরা থেকে ১২ মাইল দূরে লিসেস্টার নিয়ে যাওয়া হয়েছিল পর্যটকদের। এরপর উনিশ শতকের মধ্যেই ইউরোপ ও বিশ্বভ্রমণ শুরু করে টমাস কুক। কিন্তু, ১৯২৮ সালে সংস্থাকে বেলিজিয়ামের ওরিয়েন্ট এক্সপ্রেসের কাছে বিক্রি করে দেয় কুক ফ্যামিলি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সরকারি সংস্থা ব্রিটিশ রেলওয়েজ তাকে অধিগ্রহণ করে। ১৯৭২ সালে আবার বেসরকারি সংস্থায় পরিণত হয় টমাস কুক। তারপর থেকে বিভিন্ন সময় মালিকানা বদল এবং বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে সংযুক্তি হয়েছে টমাস কুকের। অবশেষে সেই ঐতিহ্যে দাঁড়ি পড়ল।