বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
এক নিঃশ্বাসে বলে চলেছে বেয়ারা। দু’পাশে সাজানো টেবিল, চেয়ারে বসা খাদ্যরসিকরা। তাদের হাল্কা ‘ডজ’ করে এগতে এগতে দু’হাতও চলছে সমানে। অদূরে কাউন্টারে বসা মালিক। তিনিই ম্যানেজার। এ দৃশ্য খুব চেনা। অতিথিসেবার এই কায়দাও। ঠিক যেন জানবাজারের হোটেল সিদ্ধেশ্বরী আশ্রম। কিন্তু এ যে কলকাতা থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরে বেদুইনদের দেশ। সেখানে বসে বিশুদ্ধ বাঙাল উচ্চারণে বেয়ারাদের এই মেনু-নামতা! স্বপ্নেও কি ভাবা সম্ভব?
হোটেলের নাম ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট। কালো রঙের গ্লোসাইন বোর্ডে লাল-হলুদে ইংরেজি-আরবিতে লেখা। মাঝেই ছোট্ট করে বাংলা হরফ। খুঁজে পেতে অবশ্য বিশেষ সমস্যা হয়নি। তবে এর জন্য ধন্যবাদ প্রাপ্য পথচারী এক শুভানুধ্যায়ীর। দোহার উম গুয়াইলিনা স্টেশনে নেমে হাঁটাপথ। ফ্যান ফেস্ট থেকে মিনিট দশেকের দূরত্ব। আল হিলাল স্ট্রিটের অদূরে। কাচের দরজা খুলে ঢুকতে না ঢুকতে এমন চমক অপেক্ষা করবে কে জানত! রেস্তরাঁজুড়ে তখন গমগম করছে বাংলাদেশি শিল্পী আয়ুব বাচ্চুর ব্যান্ডের গান ‘হাসতে দেখো, গাইতে দেখো’। গোটা ইন্টেরিয়র সেজে উঠেছে বিশ্বকাপের মোড়কে। বেয়ারার নামতা শুনে ব্যোমকে গিয়েছি বুঝতে পেরে আলাপ করতে এগিয়ে এলেন মালিক। বাংলাদেশের ফরিদপুরের লোক। নাম মহম্মদ আমিন। আপ্যায়ন করে টেবিলে বসালেন। এগিয়ে দিলেন মেনুকার্ড। সর্ষে ইলিশ ভাত ২৫ কাতারি রিয়াল। ভারতের হিসেবে ৫৬০ টাকা মতো। খেতে খেতেই স্বয়ং মালিকের মুখ থেকে জানা গেল এই রেস্তরাঁর ইতিহাস।
আমিনকে অবশ্য মালিক বললে ভুল হবে। কারণ, কাতারে কোনও ব্যবসা করতে গেলে সেখানকার স্থায়ী নাগরিকের সঙ্গে পার্টনারশিপ বাধ্যতামূলক। সেভাবেই তৈরি হয়েছে এই রেস্তরাঁও। সেই ২০০৩ সালে। আমিন বলছিলেন, ‘দোকানের নাম আব্বা দিসে। ঘরোয়া রান্না পরিবেশন করার ইস্সা ছ্যাল। তাই ঘরোয়া।’ ভাত, ডাল, আলুভাতে, নবরত্ন কারি, চিকেন, মাটনের দুই-তিনরকম পদ সবই মেলে। সঙ্গে দই-মিষ্টি। তবে এ রেস্তরাঁর স্পেশালিটি মাছে। রুই, কাতলা, চিংড়ি, বোয়াল, পাবদা, ইলিশ, ট্যাংরা— কী নেই! বাংলাদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও অন্ধ্রপ্রদেশ ও মায়ানমার থেকে আসে সেই সব মাছ। আর মশলা কোচির। দিন বিশেষে স্পেশাল মেনুও থাকে। সোমবার মোরগ পোলাও, মঙ্গলবার ইলিশ পোলাও, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের মেজবান, শুক্রবার দম বিরিয়ানি, স্পেশাল কাচ্চি বিরিয়ানিও। বিদেশ ভাবলে দামও বিরাট নয়— ৩৩৬ থেকে ৬৫০ টাকার মধ্যে। বিশ্বকাপ বলে ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকছে রেস্তরাঁ। আবার আসার জন্য আমন্ত্রণ জানালেন আমিন। গল্প-পেটপুজো সেরে যখন বেরচ্ছি, সাউন্ড সিস্টেমে তখন জলের গান... ‘এমন যদি হতো’।