গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
(রয় কৃষ্ণা, মনবীর, লিস্টন)
সঞ্জয় সরকার, কলকাতা: খেলা শেষ হওয়ার সঙ্গেসঙ্গে টিং করে বেজে উঠল ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকের মুঠোফোন। মেসেঞ্জারে বন্ধু মোহন বাগান অনুরাগীর টিপ্পনি, ‘পাঁচ গোল হয়নি বলে আফশোস করিস না। ফিরতি ডার্বিতে সেই আশাও পূরণ করে দেব।’ দেখেই মেজাজ আর নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেন না লাল-হলুদ প্রেমী। লিখলেন, ‘এবার যা টিম হয়েছে তাতে এটাই তো হওয়ার ছিল। তোকে আর কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে হবে না।’
সত্যিই তাই। প্রত্যাশিতভাবেই মরশুমের প্রথম ডার্বির রং সবুজ-মেরুন। শনিবাসরীয় সন্ধ্যায় ভাস্কোর তিলক ময়দানে আইএসএলের গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে সব বিভাগেই এসসি ইস্ট বেঙ্গলকে টেক্কা দিল এটিকে মোহন বাগান। ২৩ মিনিটের মধ্যে তিন গোল। এরপর তো ৫-০’র আশা তীব্রতর হওয়ারই কথা। সবুজ-মেরুন সাইড বেঞ্চে সুভাষ ভৌমিক কিংবা সুব্রত ভট্টাচার্য থাকলে হয়তো মোহন বাগান সেই লক্ষ্যেই ঝাঁপাত। কিন্তু স্প্যানিশ কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস জানেন, মরশুম সবে শুরু। এখনই চূড়ান্ত আক্রমণাত্মক ফুটবল খেললে চোট-আঘাত লাগতে পারে ফুটবলারদের। তাই বিরতির পর স্রেফ পজেশনাল ফুটবল উপহার দিলেন রয় কৃষ্ণারা। তা সত্ত্বেও প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে পারলে ১৯৭৫’এর শিল্ডের ম্যাচের উলটপুরাণের সাক্ষী থাকতেন ফুটবলপ্রেমীরা। পরিসংখ্যান বলছে, ডার্বি জয়ের হ্যাটট্রিক হল হাবাস-রয় কৃষ্ণাদের।
গত মরশুমের দু’টি ডার্বিই জিতেছিলেন হাবাস। তিনি জানতেন, এই ইস্ট বেঙ্গল দলটি অন্তঃসারশূন্য। পরিকল্পিত ফুটবল খেললে গোলের জন্য দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হবে না। বাস্তবে তাই হয়েছে। কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে নামানো প্রথম একাদশে কোনও পরিবর্তন আনেননি তিনি। পক্ষান্তরে, চারটি চেঞ্জ ছিল ম্যানুয়েল ডিয়াজের লাইন-আপে। কিন্তু তিন ডিফেন্ডারে দল সাজানোই তাঁর সবচেয়ে বড় ভুল। উল্টোদিকে রয় কৃষ্ণা, হুগো বোমাসরা থাকা সত্ত্বেও রক্ষণ সংগঠনে মনোযোগী হননি তিনি। ১২ মিনিটে প্রথম গোলের দেখা পায় মোহন বাগান। মনবীরের পাস ডানদিকে খুঁজে নেয় প্রীতম কোটালকে। তাঁর মাইনাস পেয়ে অনবদ্য ফ্লিকে জাল কাঁপান রয় কৃষ্ণা (১-০)। লাল-হলুদ ডিফেন্ডাররা তখন সমান্তরাল রেখায় দাঁড়িয়ে! প্রথম গোলের রেশ কাটার আগেই ব্যবধান বাড়ে। জনি কাউকোর পাস ধরে ডান পায়ের শটে লক্ষ্যভেদ মনবীর সিংয়ের (২-০)। লাল-হলুদ গোলরক্ষক অরিন্দম ভট্টাচার্য প্রথম পোস্টে দাঁড়িয়েও যা রুখতে ব্যর্থ। এই গোলের পর ডান পায়ের ঊরু চাপড়ে মনবীরের আস্ফালন মোহন বাগান সমর্থকদের মনের মণিকোঠায় বহুদিন অক্ষত থাকবে।
১৪ মিনিটের মধ্যেই দু’গোল হজম করার পর অসহায় আত্মসমর্পণ করা ছাড়া উপায় ছিল না ম্যানুয়েল ডিয়াজ-ব্রিগেডের। ২৩ মিনিটে অরিন্দমের ক্ষমাহীন ভুলের জন্য তৃতীয় গোল পায় এটিকে মোহন বাগান। বোমাসের থ্রু অবলীলায় ধরা উচিত ছিল তাঁর। কিন্তু তিনি তা ক্লিয়ার করতেও ব্যর্থ। বল পেয়ে কৃতজ্ঞচিত্তে জালে ঠেলে দেন লিস্টন কোলাসো (৩-০)। উল্লেখ্য, আক্রমণাত্মক মিডিও হিসেবে দুরন্ত ফুটবল উপহার দিলেন জনি কাউকো। আপফ্রন্ট ও রক্ষণের মধ্যে অনবদ্য সেতু বন্ধনের জন্য তিনিই হয়েছেন ম্যাচের সেরা।
বিরতির পর বেশ কয়েকটি পরিবর্তন করেন লাল-হলুদ কোচ। মাঠে নামেন চিমা, আদিল খান ও আমির। তা সত্ত্বেও এই পর্বে মোহন বাগানের আধিপত্য ছিল। রয় কৃষ্ণা, ডেভিড উইলিয়ামস ও মনবীর সিং সহজ সুযোগ হারান। পক্ষান্তরে, ইস্ট বেঙ্গলের আক্রমণ রুখতে খুব বেশি পরিশ্রম করতে হয়নি ম্যাকহাগ-শুভাশিসদের।
এসসি ইস্ট বেঙ্গল: অরিন্দম (শুভম), রাজু (আদিল), মার্সেলা (আমির), ফ্রানজো, লরেন্সো, সিডল (ড্যানিয়েল চিমা), হামতে (অমরজিৎ), বিকাশ, রফিক, নাওরেম, পেরোসেভিচ।
এটিকে মোহন বাগান: অমরিন্দর, প্রীতম, শুভাশিস, ম্যাকহ্যাগ, টাংরি (আশুতোষ), লেনি, কাউকো, লিস্টন (প্রবীর), বোমাস (উইলিয়ামস), মনবীর ও রয় কৃষ্ণা।