কর্মে অগ্রগতি ও নতুন কাজের বরাত প্রাপ্তি। আইটি কর্মীদের শুভ। মানসিক চঞ্চলতার জন্য বিদ্যাচর্চায় বাধা। ... বিশদ
ট্রেভর জেমস মরগ্যান: ২০১০-১১ মরশুম। মহানদীর তীরে ফেডারেশন কাপ ফাইনাল। জীবনের প্রথম কলকাতা ডার্বি। সকাল থেকেই ইস্ট বেঙ্গল টিম হোটেলের সামনে সমর্থকদের ভিড়। প্রত্যাশার চাপ আকাশচুম্বী। ব্যারেটো, চিডি ও মুরিতালা সমৃদ্ধ মোহন বাগানের আপফ্রন্ট। প্রথমার্ধে আমার ছেলেরা কিছুটা হলেও স্নায়ুর চাপে ভোগায় ওরা দু’টি সুযোগ পায়। কিন্তু গোল হয়নি। বিরতিতে ফুটবলারদের জন্য তাই ছিল একটিমাত্র টিপস। বলেছিলাম, ফার্স্ট হাফ অতীত। মনে করো, এখনই খেলা শুরু হবে। বিপক্ষের ডিপ ডিফেন্সে ডায়মন্ডস্টার ও সাগরাম মান্ডি। তাই ওদের বিব্রত করলেই গোল আসবে। প্রান্তিক আক্রমণ নয়, প্রয়োজন মিডল থার্ড দিয়ে ওঠ। ইসফাক ও ভাসুম পরিকল্পনামতো খেলেছিল। রবিন সিংয়ের পাস থেকে ডার্বির একমাত্র গোলটি ছিল ভাসুমেরই। তারপর হরমনজ্যোৎ সিং খাবরার বদলে সুশান্ত ম্যাথুকে নামিয়ে লিড ধরে রাখি। বলতে দ্বিধা নেই যে, ওই জয় আত্মবিশ্বাস জুগিয়েছিল কোচ মরগ্যানকে। সেই মরশুমে পাঁচটির মধ্যে চারটি বড় ম্যাচেই জিতেছিল ইস্ট বেঙ্গল।
ইস্ট বেঙ্গলে কোচিংয়ে দিনগুলি ভোলার নয়। দু’দফায় প্রায় পৌনে চার বছর লাল-হলুদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলাম। এছাড়া কেরল, পুনে ও গোয়ায় কোচিংয়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে কলকাতাই ভারতীয় ফুটবলের মক্কা। শুধু ফুটবলাররা নয়, বড় ম্যাচের গুরুত্ব বাড়িয়েছে সদস্য-সমর্থকরাও। ডার্বির আগে লাল-হলুদ অনুরাগীদের আব্দার এখনও কানে বাজে। রোদ-ঝড়-বৃষ্টি উপেক্ষা করে ওঁরা মাঠে আসতেন স্রেফ প্রিয় দলের জয়ের সাক্ষী থাকার জন্য। এই আবেগই দুই প্রধানের মূলধন। মনে পড়ে, বড় ম্যাচ জিততে পারলে সমর্থকদের ভালোবাসার কথাও। বাড়ি ফেরার পথে ওঁদের মুখে নিজের জয়ধ্বনিও শুনেছি। এই পাওনা স্মৃতিতে আজীবন থেকে যাবে।
গত দু’বছর ভারতে কোচিং না করালেও সব খোঁজখবরই রাখি। সুদেভা এফসি’র কোচ আমার বন্ধু। অনেক কথাবার্তা হয়। এবার এসসি ইস্ট বেঙ্গলের টিম গতবারের থেকে হয়তো ভালো। তবে বিদেশিরা তেমন পরীক্ষিত নয়। প্রথম ম্যাচে জামশেদপুর এফসি’র সঙ্গে ড্র করার ঘটনা নিশ্চয়ই ভুলে যাবে ফুটবলাররা। ঠিক যেমন কটকের ফার্স্ট হাফ মন থেকে মুছে ফেলতে সক্ষম হয়েছিল রবিন সিংরা। এই ম্যাচ নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন। কারণ, কাগজে-কলমে ফুটবল হয় না। হয় দিনের পারফরম্যান্সের নিরিখে। এটিকে মোহন বাগান এবার যথেষ্ট শক্তিশালী দল। মুম্বই থেকে হুগো বোমাস আসায় রয় কৃষ্ণাকে আরও বিপজ্জনক মনে হচ্ছে। তবে কেরল ব্লাস্টার্সের বিরুদ্ধে ম্যাচে প্রীতম কোটালরা দু’গোল হজম করেছে। লাল-হলুদ কোচ ম্যানুয়েল ডিয়াজ তা নিশ্চয়ই দেখেছেন। বোমাসকে রুখেই জয়ের নীল-নকশা আঁকতে হবে এসসি ইস্ট বেঙ্গলকে।
করিম বেঞ্চারিফা: মোহন বাগান তাঁবুতে প্রথম পা রাখার দিনটা এখনও স্পষ্ট মনে আছে। ২০০৮’এর জুলাই। বিশাল ফটক পেরিয়ে কয়েক পা হাঁটলেই ডানদিকে সবুজ গালিচার মতো লন। কাঠের বেঞ্চে বসে ফুটবল-আড্ডায় মেতেছেন প্রবীণরা। আর তরুণ প্রজন্ম অপেক্ষমান ক্যান্টিনের সামনে। তাঁবুতে বিশালাকার ফ্রেমবন্দি অতীতের দিকপাল ফুটবলাররা। প্রতিটি ধূলিকণায় ঐতিহ্যের গন্ধ। সাংবাদিক সম্মেলন শুরুর আগেই ভেসে এল ডার্বির কথা। সালগাওকরে কোচিং করানোর সময়ই এই মহাম্যাচের কথা শুনেছিলাম। তবে মোহন বাগান তাঁবুতে ঢুকে ডার্বির কথা কানে আসতেই শিরদাঁড়া দিয়ে বয়ে গিয়েছিল রোমাঞ্চের স্রোত।
আগস্টেই এল সেই বহু প্রতীক্ষিত মুহূর্ত। ঘরোয়া লিগের ডার্বি। মোহন বাগানের সাইড বেঞ্চে এই মরক্কান কোচ। উল্টোদিকের বেঞ্চে ইস্ট বেঙ্গলের ঘরের ছেলে মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য। গ্যালারিতে আবেগের ঘনঘটা। ১৯ মিনিটে আলভিটোর গোলে আমরা পিছিয়ে পড়ি। লাল-হলুদ সমর্থকরা জয়ের গন্ধ পেতেই শ্মশানের নিস্তব্ধতা সবুজ-মেরুন গ্যালারিতে। কিন্তু আমি তো হাল ছাড়ার বান্দা নই। দ্বিতীয়ার্ধে পরিবর্ত হিসেবে লালম পুইয়াকে নামাই। বাকিটা নিশ্চয়ই আপনাদের মনে আছে। ওর জোড়া গোলেই জীবনের প্রথম কলকাতা ডার্বিতে জয়ের স্বাদ পেয়েছিলাম। তবে সেরা বড় ম্যাচ অবশ্যই ২০০৯’এর ২৫ অক্টোবর। ম্যাচের ফল ৫-৩। ১৯৭৫’এর গ্লানি মোছার ইতিহাসে এই অধমের নামও লেখা থাকবে। ম্যাচ শেষে কখন যে ফুটবলাররা আমায় কোলে তুলে নিয়েছে তা বুঝতেই পারিনি। বেশ কয়েক মিনিট মাটিতে পা পড়েনি। তবে তা গর্বে কিংবা অহঙ্কারে নয়, মণীশ-সুরকুমারদের ভালোবাসায়। শেষ পর্যন্ত নিজের গায়ে চিমটি কেটে বুঝেছিলাম, স্বপ্ন সত্যি হলেও বাস্তবেই আছি।
ভারত ছেড়েছি প্রায় বছর ছয়েক হল। কিন্তু মোহন বাগান-ইস্ট বেঙ্গলের সব খবর রাখি। ডার্বি এলেই মন কেমন করে। স্মৃতিমেদুরতায় আচ্ছন্ন হই এখনও। অনেকেই প্রশ্ন করেন, ৫-৩ ম্যাচের পর দ্বিতীয় সেরা ডার্বি জয় কোনটি? অবশ্যই বলব ২০১৩’র কলকাতা লিগের ম্যাচ। প্রথম পর্বে ইস্ট বেঙ্গলের দায়িত্বে ছিলেন মার্কোস ফালোপা। তারপর সেই জায়গা নেন আর্মান্দো কোলাসো। তবে গোয়ায় ফিরে যাওয়ায় বড় ম্যাচের সাইড বেঞ্চে তিনি ছিলেন না। সেবার ইস্ট বেঙ্গল লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও কাটসুমির গোলে ডার্বি জিতেছিলাম আমরা।
শনিবারের মর্যাদার ম্যাচে এটিকে মোহন বাগানই এগিয়ে। তবে লিগের প্রথম দিকে ডার্বি হলে দুই দলই সমস্যার মুখোমুখি হয়। সবুজ-মেরুন কোচ আন্তোনিও লোপেজ হাবাস অবশ্য ফুটবলারদের হাতের তালুর মতো চেনেন। কিন্তু চিমা-পেরেসোভিচ-বিকাশ জাইরুদের জানার যথেষ্ট সময় পাননি এসসি ইস্ট বেঙ্গল প্রশিক্ষক ম্যানুয়েল ডিয়াজ। লাল-হলুদে এবার অধিকাংশই নতুন ফুটবলার। বিদেশিদেরও এই ম্যাচ সম্পর্কে তেমন ধারণা নেই। তবে রয় কৃষ্ণাদের বলব, আত্মবিশ্বাস ও আত্মতুষ্টির মধ্যে পার্থক্য কিন্তু খুব সূক্ষ্ম। প্রতিপক্ষকে আন্ডার-এস্টিমেট করলে ঠকতে হতে পারে।