দেবাশিস মুখার্জি: একসময়ে ডুরান্ড কাপে কলকাতার দুই প্রধানের বেশ দাপট ছিল। ১৮৮৪ থেকে ’৮৬ সাল পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মোহন বাগান। চুনী গোস্বামী-জার্নেল সিংয়ের আমলেও মোহন বাগান ডুরান্ড কাপ জয়ের হ্যাটট্রিক (১৯৬৩ থেকে ১৯৬৫) করেছিল। ১৯৯১ সালে ইস্ট বেঙ্গলের সাফল্য ঘিরে দারুণ উন্মাদনার সৃষ্টি হয়েছিল ফুটবল মহলে। আমি ভাগ্যবান যে, ১৯৮৬ সালে মোহন বাগানের মতোই ’৯১ সালে চ্যাম্পিয়ন ইস্ট বেঙ্গল দলের সদস্য ছিলাম। দুই প্রধানের হয়ে ডুরান্ড কাপ জয়ের হ্যাটট্রিক বর্ষের সাক্ষী থাকতে আমি গর্বিত। অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন, কোনটি বেশি তৃপ্তিদায়ক? আমি ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে ১৯৯১ সালের জয়কেই এগিয়ে রাখব। মূলত দু’টি কারণে। সেবার লাল-হলুদে নায়িমদার কোচিংয়ে আমার সোনার বছর। কলকাতা লিগে সব ম্যাচ (১৮টি) খেলেছিলাম। একটিও গোল খাইনি। রক্ষণে ছিল তরুণ দে ও বাংলাদেশের আসলাম। মনাদা (মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য) সেই বছর মোহন বাগানে। ১৯৭২ সালেও ইস্ট বেঙ্গল গোল না খেয়ে কলকাতা লিগে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। তবে প্রথম চারটি ম্যাচে শেষ প্রহরী ছিলেন বলাই দে। বাকি ম্যাচগুলিতে অরুণ ব্যানার্জি। তাই ’৯১ সালে আমার কৃতিত্ব ছিল বেশি। প্রচণ্ড আত্মবিশ্বাস নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলাম। পুজোর পর ক্লাবের অন্তর্বর্তী সচিব হয়েছিলেন শচীন সেন। পালাবদলের পর টিমের ব্যাটন সরাসরি চলে যায় ফুটবল সচিব প্রদীপ সেনগুপ্তর হাতে। পল্টুদার আনা রুমি-মুন্না-আসলাম ফিরে গিয়েছিল ঢাকায়। বিকল্প হিসেবে কর্তারা ইংল্যান্ড থেকে নিঃশব্দে নিয়ে আসেন তিন ব্রিটিশ ফুটবলার স্ট্রাইকার ম্যাগুইরি, লেফট ব্যাক প্রিন্ডিভেলি ও মিডফিল্ডার ফিল এন্ডমন্সকে। প্রিন্ডিভেলি ও ম্যাগুইরি দারুণ সার্ভিস দিয়েছিল। ডুরান্ড কাপের ফাইনালে আমরা সেবার মুখোমুখি হয়েছিলাম বিএসএফের। নির্ধারিত সময়ের খেলা ১-১ গোলে শেষ হয়। টাই-ব্রেকারে দু’টি শট বাঁচিয়েছিলাম। ৫-৩ ব্যবধানে জিতেছিল ইস্ট বেঙ্গল। বাংলার বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রী। সেদিন রাতে আমাদের অভিনন্দন জানাতে এসেছিলেন ক্যাসল গেস্ট হাউসে। টাই-ব্রেকারে নায়ক হওয়ায় আমার ঘরে এসে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন। তারপর গিয়েছিলেন শুধু নায়িমদার ঘরে। সেখানে অনেকক্ষণ ছিলেন তিনি। এর কিছুদিন পরেই কেন্দ্রীয় ক্রীড়ামন্ত্রক নায়িমদাকে দ্রোণাচার্য সম্মানে ভূষিত করেছিল।
এই টুর্নামেন্টেই হাত দিয়ে কিপারদের ব্যাক পাস ধরা নিষিদ্ধ হয়েছিল। যা নিয়ে বেশ সতর্ক ছিলেন নায়িমদা। ডিফেন্ডারদের বাড়ানো পাস যাতে হাত দিয়ে না ধরি, তার জন্য বিশেষ অনুশীলন করিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ভুল করায় কোচের কাছে বকুনি খেয়েছিলাম। তবে এরপর আর তার পুনরাবৃত্তি হয়নি।