বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দ্বিতীয় দৃশ্য: ২৪ জুলাই, ২০২১। টোকিও ওলিম্পিকসের পোডিয়ামে সেই চানুর গলায় রুপোর পদক। মোট ২০২ কেজি ওজন তোলার পর শোনা গেল গর্বের হুঙ্কার। তারপর হাসিমুখে গ্যালারির দিকে করজোড়ে প্রণাম। চাপা উচ্ছ্বাসের মধ্যেই ঠিকরে বেরচ্ছিল পাহাড়প্রমাণ আত্মবিশ্বাস ও কঠিন চ্যালেঞ্জ জিতে নেওয়ার তৃপ্তি।
‘দ্য পেইন ইউ ফিল টুডে ইজ দ্য স্ট্রেংথ ইউ উইল ফিল টুমরো’- অর্থাৎ আজকের যন্ত্রণা আগামীকাল তোমার শক্তিতে পরিণত হবে। ভারোত্তোলকদের জীবনে এটাই তো মূলমন্ত্র। ব্যর্থতার কানাগলি থেকে সাফল্যের রাজপথে পদার্পণ মীরাবাঈ চানুর। ইতিহাসে লেখা থাকবে, টোকিও গেমসে ভারতের প্রথক পদকজয়ী মীরাবাঈ। রূপকথার রুপো বললেও অত্যুক্তি হয় না। একদা কলকাতায় অনুষ্ঠিত জাতীয় ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতা থেকে ওলিম্পিকসের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছিলেন চানু। ৪৯ কেজি বিভাগে এদিন চানু প্রথম প্রয়াসে স্ন্যাচ করেন ৮৪ কেজি। দ্বিতীয় প্রয়াসেই তোলেন ৮৭ কেজি। ক্লিন অ্যান্ড জার্কের প্রথম দু’টি প্রয়াসেই ১১০ ও ১১৫ কেজি উত্তোলনের মাধ্যমে কাজ হাসিল করেন। মোট ২১০ কেজি তুলে সোনা জেতেন চীনের হৌ ঝিহুই। এটি তাঁর ওলিম্পিক রেকর্ড। তিন কেজি বেশি তুলে বিশ্বরেকর্ডও তাঁরই দখলে।
এদিন চানুর কানে ঝলমল করছিল ওলিম্পিক রিংয়ের আদলে দুল। টোকিওতে আসার আগে মায়ের উপহার। ওটাই যেন সৌভাগ্যের প্রতীক। এই রুপো দুম করে পাননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই তিলতিল করে নিজেকে গড়ে তুলেছেন মণিপুরের এই লিফটার। ৫ বছর বয়সেই ভারি জলের ড্রাম, ১২ বছরে কয়েক বান্ডিল কাঠ নিয়ে অনায়াসে পাড়ি দিতেন মাইলের পর মাইল। অভিভাবকরা অবাক হয়ে দেখতেন, ওজনের চাপ নিয়েও বন্ধুর পথে স্বচ্ছন্দে হাঁটছে ছোট্ট চানু। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সাহসী মেয়ের গুণ চোখ এড়ায়নি চানুর মা-বাবার। শারীরিক শক্তি দেখে চমকে উঠেছিল নংপক কাকচিং গ্রাম। যা ইম্ফল থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে। প্রথমে অবশ্য তিরন্দাজ হওয়ার স্বপ্ন ছিল চানুর। ভর্তিও হতে গিয়েছিলেন স্থানীয় অ্যাকাডেমিতে। কিন্তু কোনও কারণে সেদিন তা বন্ধ ছিল। ভাগ্যিস। না হলে এই দিন দেখতে পেত না আসমুদ্রহিমাচল। তারপর তাঁকে ভারোত্তোলনে ভর্তি করে দেওয়া হয়। মীরাবাঈয়ের জীবনে প্রথম প্রশিক্ষক অনিতা চানু। অনুপ্রেরণার উৎস কুঞ্জরানি দেবী। ২০১৪ গ্লাসগো কমনওয়েলথ গেমসে রুপো জয় তাঁর প্রথম বড় সাফল্য। ২০১৮ সালে একই প্রতিযোগিতায় জেতেন সোনা। তাঁর ক্যাবিনেটে রয়েছে বিশ্ব ও এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপের সোনা ও ব্রোঞ্জ। আছে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন, পদ্মশ্রী সম্মান। এই তালিকায় যুক্ত হল ওলিম্পিক রুপো। টোকিওতে পদক জেতার পর চানুর কোচ বিজয় শর্মাকে ১০ লক্ষ পুরস্কার দেবে আইওএ।