পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
ব্রিসবেন: শতবর্ষ পরেও আলোচনায় উঠে আসবে গাব্বায় শার্দূল ঠাকুর ও ওয়াশিংটন সুন্দরের এই লড়াই। সপ্তম উইকেটে ১২৩ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তাঁরা শুধু দলকে খাদের কিনারা থেকে টেনে তোলেননি, পাল্টা চাপে ফেলে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়াকে। ফল যাই হোক না কেন, এই সিরিজে লোয়ার অর্ডারের সাহসী ব্যাটিং স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে। ১৯৯১ সালে এই ব্রিসবেনেই সপ্তম উইকেটে ভারতের কপিল দেব ও মনোজ প্রভাকর যোগ করেছিলেন ৫৮ রান। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন শার্দূল-সুন্দর।
অ্যাডিলেডে ছিল পূর্ণ শক্তির দল। তা সত্ত্বেও শোচনীয়ভাবে আত্মসমর্পণ করেছিল কোহলি ব্রিগেড। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ৩৬ রানে অলআউট হওয়ার কলঙ্কিত অধ্যায় দেখার পর অনেকেই ভেবেছিলেন সিরিজে হোয়াইটওয়াশই হবে টিম ইন্ডিয়া। তার উপর অধিনায়ক কোহলির ছুটি নিয়ে দেশে ফিরে যাওয়া ছিল গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো। একের পর এক চোট-আঘাতও ক্রমাগত দুর্বল করেছে দলের ভিত। কার্যত দ্বিতীয় সারির দল নামিয়ে অদম্য জেদ আর নাছোড়বান্দা মানসিকতার জোরে অসম্ভবকে সম্ভব করে দেখিয়েছে ভারত। মেলবোর্নে পাল্টা জয় দিয়ে দুর্দান্ত কামব্যাক করেছিল টিম ইন্ডিয়া। সিডনিতে ঋষভ, হনুমা, অশ্বিনরা বুক চিতিয়ে লড়ে দলের পতন রোধ করেছিলেন। ভারতীয় ক্রিকেটারদের বীরগাথার আরও এক অনন্য নিদর্শনের সাক্ষী থাকল ব্রিসবেনের গাব্বা। টেল এন্ডারদের কাঁধে ভর করে ম্যাচে ফিরল টিম ইন্ডিয়া। ওয়াশিংটন সুন্দর এবং শার্দূল ঠাকুরের রক্তচক্ষুর সামনে কার্যত বশ মানল অস্ট্রেলিয়ার তারকাখচিত বোলিং আক্রমণ।
তৃতীয় দিনে একটা সময় টিম ইন্ডিয়ার স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১৮৬। অস্ট্রেলিয়ার ৩৬৯ রানের বিপরীতে সেটা যেন শুশুনিয়া পাহাড়! পেইনদের বড় রানের লিড নেওয়া ছিল শুধু সময়ের অপেক্ষা। তার উপর হ্যাজলউড, স্টার্কদের হাতে তখন চকচকে নতুন বল। দু’শোর গণ্ডি অতিক্রম করাই ছিল টিম ইন্ডিয়ার কাছে কঠিনতম চ্যালেঞ্জ। কিন্তু আচমকাই পুরো চিত্রনাট্য বদলে গেল শার্দূল ও সুন্দরের যুগলবন্দিতে। যেমন চোখ ধাঁধানো কভার ড্রাইভ, তেমনই রক সলিড ডিফেন্স। অস্ট্রেলিয়ার বোলারদের যাবতীয় পরিকল্পনাকে ভোঁতা করে দিয়েছেন তাঁরা। সেই সুবাদেই প্রথম ইনিংসে ভারত ৩৩৬ রান তুলতে সক্ষম হয়। অস্ট্রেলিয়া ৩৩ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংস শুরু করে। তৃতীয় দিনের শেষে ডনের দেশ বিনা উইকেটে তুলেছে ২১ রান।
শার্দূল, সুন্দর ভালো ব্যাট করতে পারেন। সেই কারণেই মূলত তাঁদের দলে রাখা। কিন্তু সিদ্ধান্তটা যে এভাবে কাজে দেবে, সেটা হয়তো ভাবেননি কোচ রবি শাস্ত্রী স্বয়ং। ৯০ বলে টেস্টে প্রথম অর্ধশতরান পূর্ণ করেন শার্দূল। আর অভিষেক টেস্টে হাফ-সেঞ্চুরি হাঁকাতে সুন্দরের লেগেছে ১০৮ বল। শার্দূল যখন ৬৭ রানে কামিন্সের বলে বোল্ড হলেন, তখন দলের স্কোর ৩০৯। বড় রান করতে পারেননি সাইনি (৫)। দ্রুত রান তুলতে গিয়ে সুন্দর ৬২ করে মাঠ ছাড়েন। সিরাজ ১৩ রানে আউট হতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে অস্ট্রেলিয়া।
শার্দূল-সুন্দর শুধু অস্ট্রেলিয়াকে সবক শেখাননি, ভারতের তারকা ব্যাটসম্যানদেরও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন, কীভাবে মাটি কামড়ে পড়ে থেকে রান করতে হয়। অজিঙ্কা রাহানে ও চেতেশ্বর পূজারার মতো স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যানরা প্রত্যাশা পূরণে ফের ব্যর্থ। তবে ২ উইকেটে ৬২ নিয়ে শুরুটা ভালোই করেছিলেন তাঁরা। আচমকা অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে কট বিহাইন্ড হন পূজারা (২৫)। সেট হয়েও স্টার্কের বলে ওয়েডের হাতে ৩৭ রানে ধরা পড়েন ক্যাপ্টেন রাহানে। বড় রান করার আরও একটা সুযোগ হাতছাড়া করলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৩৮)। উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান ঋষভকে (২৩) কার্যত ফাঁদে ফেলেন হ্যাজলউড।
চতুর্থ দিনের খেলায় বিঘ্ন ঘটাতে পারে বৃষ্টি। তবে প্রকৃতির দিকে না তাকিয়ে ম্যাচ বাঁচাতে রোহিত, পূজারা, রাহানেদের আরও সতর্ক হয়ে খেলতে হবে।
স্কোরবোর্ড: অস্ট্রেলিয়া (প্রথম ইনিংস)-৩৬৯।
ভারত (প্রথম ইনিংস) ২ উইকেটে ৬২ থেকে- পূজারা ক পেইন বো হ্যাজলউড ২৫, রাহানে ক ওয়েড বো স্টার্ক ৩৭, মায়াঙ্ক ক স্মিথ বো হ্যাজলউড ৩৮, পন্থ ক গ্রিন বো স্টার্ক ২৩, ওয়াশিংটন ক গ্রিন বো হ্যাডলউড ৬২, শার্দূল বো কামিন্স ৬৭, সাইনি ক স্মিথ বো হ্যাজলউড ৫, সিরাজ বো হ্যাজলউড ১৩, নটরাজন অপরাজিত ১, অতিরিক্ত ১৪। মোট ১১১.৪ ওভারে ১০ উইকেটে ৩৩৬। উইকেট পতন: ৩-১০৫, ৪-১৪৪, ৫-১৬১, ৬-১৮৬, ৭-৩০৯, ৮-৩২০, ৯-৩২৮, ১০-৩৩৬। বোলিং: স্টার্ক ২৩-৩-৮৮-২, হ্যাজলউড ২৪.৪-৬-৫৭-৫, কামিন্স ২৭-৫-৯৪-২, গ্রিন ৮-১-২০-০, লিয়ঁ ২৮-৯-৬৫-১, লাবুশানে ১-১-০-০।
অস্ট্রেলিয়া (দ্বিতীয় ইনিংস)- হ্যারিস ব্যাটিং ১, ওয়ার্নার ব্যাটিং ২০, অতিরিক্ত ০। মোট ৬ ওভারে বিনা উইকেটে ২১। বোলিং: সিরাজ ২-১-১২-০, নটরাজন ৩-০-৬-০, সুন্দর ১-০-৩-০।