বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
একই মাঠ। একই প্রতিপক্ষ। ফলও একই। গত ম্যাচে ভারত হেরেছিল ৬৬ রানে। দ্বিতীয় ম্যাচেও ফিনচ বাহিনী জিতল ৫১ রানে। তৃতীয় ম্যাচের আর কোনও গুরুত্ব থাকল না। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে অস্ট্রেলিয়া ৪ উইকেটে ৩৮৯ রান তোলার পরেই কোমায় চলে গিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। সেখান থেকে এই ম্যাচ জিতে রেকর্ড গড়তে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের আরও দায়িত্বশালী হওয়া দরকার ছিল। কিন্তু শুরুটা ভালো করেও মায়াঙ্ক আগরওয়াল ২৮ রানে কামিন্সের বলে আউট হন। শিখর ধাওয়ানকে ৩০ রানে ফেরান হ্যাজলউড। জোড়া ধাক্কার মুখে শ্রেয়াস আয়ারকে সঙ্গে নিয়ে ৯৩ রান যোগ করেন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি। কিন্তু শ্রেয়াস (৩৮) উইকেটে সেট হয়েও যেভাবে স্মিথের হাতে ক্যাচ দিয়েছেন, তা তাঁর নামের সঙ্গে বেমানান।
নায়ক হয়ে উঠতে পারতেন বিরাট কোহলি। সেঞ্চুরির সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। প্রথম দিকের জড়তা কাটিয়ে ভিকে যখন পুরানো মেজাজে ফিরছিলেন, তখন ফিনচের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ দেখা যাচ্ছিল। উল্টো দিকে স্টিভ স্মিথ যখন ব্যাক টু ব্যাক সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে অস্ট্রেলিয়াকে পথ দেখাচ্ছেন, তখন ভারতীয় সমর্থকরা বিরাটের ব্যাটে বড় রান আশা করতেই পারেন। কিন্তু বিরাট গত ম্যাচের মতো একই ভুল করে আউট হলেন হ্যাজউডের রাইজিং ডেলিভারিতে। প্রশংসা করতে হবে মোজেস এনরিকের। মিড উইকেটে বাঁদিকে ঝাঁপিয়ে অনবদ্য প্রয়াসে তিনি কোহলির ক্যাচটি ধরেন। এটাই ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট। কোহলি ৮৯ রানে মাঠ ছাড়ার পরেই ভারতের জয়ের আশা ক্ষীণ হয়ে যায়। তবুও লোকেশ রাহুল ও হার্দিক পান্ডিয়া জুটি কিছুটা লড়াই চালান। কিন্তু অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার মতো সাহসী মনোভাব তাঁরা দেখাতে পারেননি। লোকেশ ৭৬ রানে জাম্পার বলে আউট হন। এরপর ৪৭তম ওভারে প্যাট কামিন্স পর পর দু’টি ডেলিভারিতে জাদেজা (২৪) ও হার্দিকের (২৮) উইকেট তুলে নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার জয় নিশ্চিত করে দেন। কুঁতিয়ে কুঁতিয়ে ভারত শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ৩৩৮ রান তোলে।
ভারতের এই ব্যর্থতার অন্যতম কারণ-- দুর্বল বোলিং। যা নাকি কোচ রবি শাস্ত্রীর গড়া ভারতের সর্বকালের সেরা বোলিং ইউনিট। পাওয়ার প্লে’তে ভারতীয় পেসারদের বেহাল অবস্থার ছবি ধরা পড়বে এই ছোট্ট পরিসংখ্যানে। এবছর ৮টি ওয়ান ডে খেলেছে টিম ইন্ডিয়া। পাওয়ার প্লে’তে ভারতীয় বোলাররা দিয়েছেন ৪৭৬ রান। পেয়েছেন মাত্র ৩টি উইকেট। গড় ১৫৮.৬৬। ইকোনমি রেট ৫.৯৫। এমন ছন্নছাড়া বোলিং নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে বশ মানানো যে সম্ভব নয়, সেটা নিশ্চিত বুঝে গিয়েছে ভারতীয় সমর্থকরা।
অ্যারন ফিনচ ও ডেভিড ওয়ার্নার শুরু থেকেই ছিলেন আক্রমণাত্মক মেজাজে। তা সত্ত্বেও বিরাট কেন বুমরাহর মতো স্ট্রাইক বোলারকে দু’ওভার হাত ঘুরিয়ে কেন বসিয়ে দিলেন, সেটা বোধগম্য হয়নি। সাইনির প্রথম অস্ট্রেলিয়া সফর। তিনি কখনও বুমরাহর বিকল্প হতে পারেন না। কথায় বলে বিনাশ কালে বুদ্ধি নাশ। বিরাটের অবস্থা সেরকই। সাইনি, চাহালদের উপর যেভাবে তিনি আস্থা দেখালেন, তাতে মনে হচ্ছিল আরসিবি’র অধিনায়কত্ব থেকে এখনও বেরোতে পারেননি। রবীন্দ্র জাদেজার মতো ইউটিলিটি ক্রিকেটার এই মুহূর্তে ভারতীয় দলে নেই। নতুন বলেও তিনি টার্ন করাতে পারেন। ওয়ার্নার, ফিনচ জুটি যখন জমাট বাঁধছে, তখন জাড্ডুকে কাজে না লাগিয়ে তিনি কেন চাহাল প্রীতি দেখালেন?
তবে প্রশংসা করতেই হবে অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যানদের। বিশেষ করে স্টিভ স্মিথের। পর পর দু’টি শতরান হাঁকালেন তিনি। ১০৪ রানের ইনিংস খেলে ছিনিয়ে নিলেন ম্যাচের সেরা পুরস্কার। কম গেলেন না ওয়ার্নার (৮৩), ফিনচ (৬০), লাবুশানে (৭০), ম্যাক্সওয়েলরাও (৬৩)। তাঁদের গোড়ে তোলা রানের পাহাড় ডিঙোতে গিয়ে ফের একবার মুখ থুবড়ে পড়ল টিম ইন্ডিয়া। হাত থেকে ফস্কে গেল ২০১৮-১৯ মরশুমে জেতা সুদৃশ্য ট্রফিটাও।
ভারত-অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের সংক্ষিপ্ত স্কোর: অস্ট্রেলিয়া- ৩৮৯/৪ (স্মিথ ১০৪, ওয়ার্নার ৮৩, লাবুশানে ৭০, ম্যাক্সওয়েল ৬৩, ফিনচ ৬০; হার্দিক ১-২৪)।
ভারত- ৩৩৮/৯ (বিরাট ৮৯, কেএল রাহুল ৭৬; কামিন্স ৩-৬৭, হ্যাজলউড ২-৫৯, জাম্পা ২-৬২)।
ম্যাচের সেরা: স্টিভ স্মিথ।