আবুধাবি: সুপার ওভারে সানরাইজার্সকে হারিয়ে ফের জয়ের সরণীতে ফিরে এল কলকাতা নাইট রাইডার্স। ন’টি ম্যাচ খেলে ১০ পয়েন্ট নিয়ে চতুর্থ স্থানেই রইল মরগ্যান বাহিনী। সমসংখ্যক ম্যাচ খেলে হায়দরবাদ ৬ পয়েন্টেই আটকে রইল।
তারকাদের ছাপিয়ে কেকেআরের জয়ের নায়ক লকি ফার্গুসন। ত্রয়োদশ আইপিএলে এটাই ছিল তাঁর প্রথম ম্যাচ। দীর্ঘদিন তাঁকে বসিয়ে রাখা হয়েছিল ডাগ-আউটে। সেই ক্ষোভ ও যন্ত্রণার বিস্ফোরণ ঘটল বোলিংয়ে। শুধু গতি নয়, পিচের চরিত্রকে কাজে লাগিয়ে বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়েই প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের বশ মানিয়েছে কিউয়ি পেসারটি। প্রথমে চার ওভার হাত ঘুরিয়ে মাত্র ১৫ রান দিয়ে তুলে নেন ৩টি উইকেট। সেই কারণেই সুপার ওভারেও ফার্গুসনের উপর ভরসা রাখেন মরগ্যান। ক্যাপ্টেনের আস্থার পূর্ণ মর্যাদা দিয়েছেন কিউয়ি পেসারটি। প্রথম বলেই তিনি ফিরিয়ে দেন মারকুটে ডেভিড ওয়ার্নারকে। দ্বিতীয় ডেলিভারিতে সামাদ দৌড়ে দু’রান নিলেও, পরেই বলেই তাঁর স্টাম্প ছিটকে দেন ফার্গুসন। ২ রানেই শেষ হয়ে যায় সানরাইজার্সের সুপার ওভারের লড়াই।
জবাবে মরগ্যানের সঙ্গে ব্যাট করতে নামেন দীনেশ কার্তিক। স্পিনার রশিদ খানের প্রথম বলে কোনও রান নিতে পারেননি কেকেআর ক্যাপ্টেন। পরের বলে সিঙ্গলস নিয়ে স্ট্রাইক রোটেট করেন। তৃতীয় বলেও কোনও রান হয়নি। আসলে দুই দলের ক্রিকেটাররা প্রবল স্নায়ুর চাপে ভুগছিলেন। চতুর্থ বলে লেগবাই থেকে দৌড়ে দু’রান যোগ করে দলকে কাঙ্খিত জয় এনে দেয় প্রাক্তন ও বর্তমান অধিনায়কের যুগলবন্দি।
তবে জয়ের জন্য হয়তো সুপার ওভার পর্যন্ত অপেক্ষা করার প্রয়োজন পড়ত না নাইটদের। অন্তিম ওভারে সানরাইজার্সের প্রয়োজন ছিল ১৮ রান। উইকেটে ডেভিড ওয়ার্নারের মতো বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান থাকলেও বল পড়ে ঠিক মতো ব্যাটে আসছিল না। শট খেলতে তিনিও সমস্যায় পড়ছিলেন। কিন্তু একেবারেই আনফিট এবং অফ ফর্মে থাকা আন্দ্রে রাসেলের হাতে বল তুলে দেওয়াটাই ছিল বড় ভুল। রাসেল শুধু নিজে ডুবছেন না, দলকেও ডোবাচ্ছেন। প্রথমেই তিনি নো বল করেন। দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ডেলিভারিতে বাউন্ডারি হাঁকান ওয়ার্নার। শেষ দু’বলে চার রান করতে হত সানরাইজার্সকে। কিন্তু ওয়ার্নার কোনওক্রমে তিন রান যোগ করতে সফল হন। ম্যাচ টাই হয়। গড়ায় সুপার ওভারে। শেষ হাসি হাসেন নাইটরাই।
টুর্নামেন্ট যত এগোচ্ছে, আমিরশাহির তিনটি ভেন্যুতেই উইকেট ক্রমশ মন্থর হয়ে পড়ছে। তার উপর শিশির সমস্যায় পড়ছেন বোলাররা। সেকথা মাথায় রেখেই হায়দরাবাদ টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেয়। শুরুতেই শুভমান গিলের (১) ক্যাচটা যদি রশিদ খান ধরতে পারতেন, তাহলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেও পারত। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গিল ৩৬ রান করেন। রাহুল ত্রিপাঠির সংগ্রহ ২৬ রান। নীতীশ রানা ২৯ রান করে আউট হন। রান রেট বাড়াতে রাসেলকে নামানো হয়েছিল চার নম্বরে। কিন্তু ক্যারিবিয়ান তারকাটি ব্যর্থতার কানাগলি থেকে বেরোতে পারেননি। ১১ বল খেলে করেন ৯ রান। তুলনায় মরগ্যান ও কার্তিক কিছুটা হলেও স্বস্তি জুগিয়েছেন দলকে। পঞ্চম উইকেটে তাঁরা ৫৮ রান যোগ না করলে কেকেআরের স্কোর ৫ উইকেটে ১৬৩ রানে পৌঁছাত না। মরগ্যান ৩৪ রানে আউট হন। ২৯ রানে অপরাজিত থাকেন কার্তিক।
কৌশল বদলে সহজেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চেয়েছিল সানরাইজার্স। জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে ওপেন করেন কেন উইলিয়ামসন। বেশ ভালোই খেলছিলেন তাঁরা। আচমকাই স্বদেশীয় ফার্গুসনের বলে উইলিয়ামসন ২৯ রানে আউট হয়ে যান। তরুণ প্রিয় গর্গও (৪) পরাস্ত হন ফার্গুসনের বলেই। কিউয়ি পেসারটি বোকা বানিয়ে ডাগ-আউটে ফেরান মণীশ পাণ্ডেকেও (৬)। তার আগেই তরুণ স্পিনার বরুণ চক্রবর্তীর বলে বেয়ারস্টো (৩৬) আউট হয়ে দলকে আরও চাপে ফেলে দেন।
ডেভিড ওয়ার্নার ব্যাটিং অর্ডার বদলে চার নম্বরে নেমে ধীরে ধীরে জয়ের পথ প্রশস্ত করতে থাকেন। বিজয় শঙ্কর মাত্র ৭ রানে আউট হলেও, সামাদের সাহসী ব্যাটিং হায়দরাবাদ শিবিরে আশা জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু ক্রিকেট দেবতা অন্য কিছুই চেয়েছিলেন। ১৯তম ওভারে সামাদের ব্যাটে নিশ্চিত ছক্কাকে ক্যাচে রুপান্তরিত করেন ফার্গুসন। তিনি বলটি ধরেই ছুঁড়ে দেন গিলের হাতে। না হলে হারের হ্যাটট্রিকের গ্লানি নিয়ে হয়তো মাঠ ছাড়তে হতো নাইটদের।