কর্মপ্রার্থীরা বেশ কিছু সুযোগের সংবাদে আনন্দিত হবেন। বিদ্যার্থীরা পরিশ্রমের সুফল নিশ্চয় পাবে। ভুল সিদ্ধান্ত থেকে ... বিশদ
শেষ পর্যন্ত পরিবারের সঙ্গে তীব্র অশান্তি সত্ত্বেও চাকরি ছেড়ে যোগ দিয়েছিলাম ইস্ট বেঙ্গলে। লিগের বড় ম্যাচই ছিল পাখির চোখ। সই করার সময়ে ক্লাব চাকরির জোগাড় করে দেওয়ার কথা বললেও তখনও আমি বেকার। বেলেঘাটায় দিদির বাড়িতে থাকতাম। জীবনের প্রথম বড় ম্যাচ খেলার দিন বাস থেকে বটতলায় নেমে দেখি, ইডেন চত্বরে পা ফেলার জায়গা নেই। লোকে লোকারণ্য। সেদিন এক বহুল প্রচারিত দৈনিকে চুনী গোস্বামী লিখেছিলেন,‘ম্যাচে মোহন বাগানই এগিয়ে, তবে সুব্রতদের সতর্ক থাকতে হবে মিহিরকে নিয়ে। মিহিরই খুবই বিপজ্জনক স্ট্রাইকার।’ সন্দেহ নেই, চুনীদার লেখা আমায় উদ্দীপ্ত করেছিল। এখনও চোখ বন্ধ করলে সেই ম্যাচ ছবির মতো ভেসে ওঠে। প্রথম দশ মিনিট মোহন বাগানই ঝড় তুলেছিল। ভাস্কর দু’টি অনবদ্য সেভ না করলে ম্যাচের ফল অন্যরকম হতেই পারত। দুরন্ত হাবিবকে স্কোরশিটে নাম তুলতে দেয়নি ও। ১৭ মিনিটে পিন্টুদার সেন্টার এবং রঞ্জিৎ মুখার্জির ব্যাকহেড মারফত বল চলে আসে আমার কাছে। চলতি বলেই বাঁ পায়ের ভলি নিয়েছিলাম। মোহন বাগান গোলরক্ষক বিশ্বজিৎ দাসের কিছু করার ছিল না। ও কিছু বোঝার আগেই বল জালে জড়াল। ওই গোল দেখে পরের দিন অজয় বসু লিখেছিলেন,‘ইস্ট বেঙ্গলের নতুন যুবরাজ মিহির।’ সাত-আট মিনিটের মধ্যে বক্সের বাইরে থেকে ফ্রি-কিক থেকে অনবদ্য গোল পিন্টুদার। ম্যাচের আগের দিন টিকিট না পেয়ে সমর্থকরা মাঠে ঢুকে প্র্যাকটিস পণ্ড করেছিল। তারই মধ্যে কোচ অমল দত্তের নির্দেশে দুই উইং থেকে পিন্টুদা ও সুরোদা বল ভাসিয়েছিলেন। আর আমি ভলি প্র্যাকটিস করেছিলাম। দ্বিতীয়ার্ধে মোহন বাগান প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক খেললেও শ্যামল ঘোষ আর শ্যামল ব্যানার্জির দৃঢ়তায় ব্যবধান কমাতে পারেনি। ইস্ট বেঙ্গল জনতার কাঁধে চেপে তাঁবুতে ফিরেছিলাম। আমার ছোট ভাই প্রবীর সেদিন মাঠে এসেছিল। ও পাঁড় মোহন বাগান সমর্থক। জানতাম, রাতে বেলেঘাটার দিদির বাড়িতে ও থাকবে। তাই প্রবীরের মুখোমুখি না হওয়ার জন্য সেই রাতে পাইকপাড়ায় এক বন্ধুর বাড়িতে থাকতে হয়েছিল। পল্টুদার দেওয়া গাড়িতে ভাস্কর আমাকে নামিয়ে দেয় পাইকপাড়ায়। পরদিন ভোরের বাসে বসিরহাট। পৌঁছে দেখি, ভাই ফেরেনি। আমার উপর রাগ করে ও বেলেঘাটাতেই রয়ে গিয়েছে। বড় ম্যাচে মোহন বাগানকে গোল দেওয়ার জন্য ও আমার মুখ দেখবে না বলেছিল। এক মাস কথাও বলেনি। এই রকম চরিত্র ছিল সাতের দশকের সমর্থকদের! তবে ওই ম্যাচে গোল পাওয়ায় রাজ্য বিদ্যুৎ পর্ষদে চাকরি পেয়েছিলাম। হাসি ফুটেছিল পরিবারের সদস্যদের মুখে।