অত্যাধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। ... বিশদ
ভারতীয় খেলাধূলার ইতিহাসে সর্বকালের অন্যতম সেরা বর্ণময় চরিত্র বলবীর সিং সিনিয়র। ১৯৪৮, ১৯৫২ ও ১৯৫৬ ওলিম্পিকসে ভারতীয় হকি দলের হয়ে সোনা জয়ের হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৭৫ সালে মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে বলবীরের ম্যানেজমেন্ট দক্ষতা ও প্রশিক্ষণে ভারত চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল। আপাতত সেটাই টিম ইন্ডিয়ার একমাত্র বিশ্বকাপ জয়। ১৯৫২ হেলসিঙ্কি গেমসের ফাইনালে নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে ভারত জিতেছিল ৬-১ গোলে। তারমধ্যে পাঁচটি গোলই করেছিলেন বলবীর সিং সিনিয়র। ওলিম্পিক ফাইনালে তাঁর এই কীর্তি এখনও অম্লান। ১৯৫৬ মেলবোর্ন ওলিম্পিকসে তাঁর নেতৃত্বে ভারত মোট ৩৮টি গোল করেছিল। একটিও গোল হজম না করে সেবার সোনা জেতে ভারতীয় দল। ১৯৪৮ লন্ডন ওলিম্পিকসের ফাইনালে ইংল্যান্ডকে ৪-০ গোলে হারিয়েছিল ভারত। সেই জয়কেই জীবনের স্মরণীয় মুহূর্ত বলেছিলেন বলবীর সিং সিনিয়র। একদা ভারতকে শাসন করা ইংরেজদের হারানোর তৃপ্তি নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ‘ইংল্যান্ডের মাঠে ইংরেজদের হারিয়ে ভারতের ত্রিবর্ণ পতাকা উড়ছে আকাশে। বাতাসে ভেসে আসছে জাতীয় সঙ্গীত। এমন একটা মুহূর্তে রক্ত গরম হয়ে যায়। এই ঘটনা আমৃত্যু মনে রাখব।’
১৯৪৭-৫৮, ভারতীয় দলের হয়ে ৬১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন বলবীর। গোলসংখ্যা ২৪৬। ১৯৫৭ সালে তিনি পদ্মশ্রী সম্মান পান। ২০১৫ সালে তাঁকে মেজর ধ্যানচাঁদ লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট সম্মানে ভূষিত করে হকি ইন্ডিয়া। ২০১২ সালে আন্তর্জাতিক ওলিম্পিক সংস্থা আধুনিক যুগের ওলিম্পিক ইতিহাস মূল্যায়ণ করে ‘আইকনিক ওলিম্পিয়ান্স’ হিসেবে দেশের ১৬ জন ক্রীড়াবিদকে বাছাই করে। সেই এলিট তালিকায় এশিয়া তথা ভারত থেকে একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে বলবীর সিং সিনিয়রের নাম জ্বলজ্বল করছে।
ধ্যানচাঁদ ও বলবীর সিং সিনিয়র ভারতীয় হকির দুই রত্ন। ভারতীয় হকি মহলের অনেকেই মনে করেন, ধ্যানচাঁদের স্টিক ওয়ার্কের ঘরানা পরবর্তীকালে বলবীর বহন করেছেন। অবসরের পরে দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা বলবীর ভারতীয় হকির সব খবর রাখতেন। দিতেন মূল্যবান পরামর্শও। ফলে কোনও না কোনও সময় তাঁর সংস্পর্শে এসেছেন বর্তমান জাতীয় দলের তারকা শ্রীজেশ, মনপ্রীত সিং, রুপিন্দর পাল সিংরা। এঁরা প্রত্যেকেই সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে প্রয়াত কিংবদন্তির জন্য শোক প্রকাশ করেছেন। ১৯২৪ সালে পাঞ্জাবের হরিপুর খালসা গ্রামে জন্ম বলবীর সিং সিনিয়রের। তৎকালীন খালসা কলেজের কোচ হরবাইল সিংয়ের নজরে পড়েন তিনি। ১৯৫২ ও ১৯৫৬ ওলিম্পিকসে হরবাইলের প্রশিক্ষণে ভারতীয় হকি দল সোনা জেতে।
ভারতীয় হকি মহল মনে করছে, সম্মান-পুরস্কারের বাইরেও দক্ষ খেলোয়াড় ও ম্যানেজার হিসেবে বলবীর সিং সিনিয়র স্মৃতিতে থাকবেন অমলিন। ১৯৭৫ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন ভারতীয় দলের অধিনায়ক অজিত পাল সিং বলেছেন, ‘আমার দেখা সেরা ম্যানেজার ও কোচ বলবীর সিং সিনিয়রই। কম কথা বলতেন। তবে প্লেয়ারদের মানসিকতা বুঝে নেওয়ার আশ্চর্য ক্ষমতা ছিল ওঁর। টেকনিক্যালি খুবই নিখুঁত ছিলেন। এখনও মনে আছে, বিশ্বকাপের প্রতিটি ম্যাচের আগে তিনি কীভাবে প্লেয়ারদের আত্মবিশ্বাস বাড়ানো ও দলের ঐক্য অটুট রাখতে সচেষ্ট থাকতেন।’