অত্যাধিক পরিশ্রমে শারীরিক দুর্বলতা। বাহন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন। সন্তানের বিদ্যা শিক্ষায় অগ্রগতি বিষয়ে সংশয় বৃদ্ধি। ... বিশদ
ফুটবলপ্রেমীরা নির্দ্বিধায় ২০০৫ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের কথাই বলবেন। ২০০৫’এর ২৫ মে, ইস্তানবুলের ওলিম্পিক স্টেডিয়ামে ফাইনালের আসরে ফেভারিট এসি মিলানের বিরুদ্ধে প্রথমার্ধে ০-৩ গোলে পিছিয়ে পড়েছিল লিভারপুল। তারপর স্টিভন জেরার্ডের নেতৃত্বে রাফা বেনিতেজের দল দেখিয়েছিল, এভাবেও ফিরে আসা যায়। দ্বিতীয়ার্ধে ‘লাল ঝড়’-এর সাক্ষী ছিল গোটা দুনিয়া। নির্ধারিত সময়ে ৩-৩ সমতায় ফেরার পর পেনাল্টি শ্যুট-আউটে খেতাব জয় নিশ্চিত করে অ্যানফিল্ডের ক্লাবটি। যা দীর্ঘ দেড় দশক পরেও সমান উজ্জ্বল স্টিভন জেরার্ড, লুইস গার্সিয়াদের কাছে।
সেবার চেলসি, জুভেন্তাসের মতো দলকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছেছিল লিভারপুল। তা সত্ত্বেও ফাইনালে আন্ডারডগ হয়েই মাঠে নেমেছিলেন জেরার্ড, আলোন্সোরা। কার্লো আনসেলোত্তির প্রশিক্ষণে তখন এসি মিলানে চাঁদের হাট। কেন তাদের ফেভারিট বলা হয়েছিল তা প্রথম ৪৫ মিনিটে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন পাওলো মালদিনি, আন্দ্রে পিরলো, কাকা, হার্নান ক্রেসপোরা। বিরতিতে ৩-০ লিড। গ্যালারিতে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার মায়াবী স্বপ্ন এসি মিলান সমর্থকদের চোখেমুখে। লিভারপুল অনুরাগীদের গ্রাস করেছে বিষণ্ণতা। তবে শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত তাঁরা সমস্বরে গেয়ে উঠেছেন, ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’। সমথর্কদের এই বার্তাই লিভারপুল ফুটবলারদের মধ্যে অদম্য জেদ ও লড়াইয়ের ইচ্ছাশক্তির সঞ্চার ঘটিয়েছিল। বাকিটা ইতিহাস।
দীর্ঘ দেড় দশক পর দুঃস্বপ্নের পাতা খুলে সেই রাতের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তৎকালীন এসি মিলান কোচ আনসেলোত্তি জানান, ‘পাঁচ বছরের মধ্যে তিনটে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল খেলেছিল এসি মিলান। যার মধ্যে ২০০৩ ও ২০০৭ সালে খেতাবও জিতেছিল। অথচ তিনটি ফাইনালের মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী ছিল ২০০৫’এর দলটাই। গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ ফুটবল খেলেছিলাম আমরা। এমনকী ফাইনালেও। তা সত্ত্বেও শূন্য হাতেই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল।’ লিভারপুলের সেদিনের জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন অধিনায়ক স্টিভন জেরার্ড। সেই রাতের কথা আত্মজীবনীতে উল্লেখ করে এই ইংলিশ ফুটবলারটি বলেছিলেন, ‘পিরলো, কাকার মতো তারকার উপস্থিতিতে সেদিন এসি মিলান আমাদের নিয়ে ছেলেখেলা করেছিল। প্রথমার্ধের শেষেই গাত্তুসো হাবভাবে বুঝিয়ে দিয়েছিল, তারা ম্যাচটা পকেটে পুরে নিয়েছে। তখন সম্মান বজায় রাখার লড়াই ছাড়া অন্য কোনও পথ ছিল না লিভারপুলের সামনে। সেই সময় আমাদের সমর্থকরা ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন’ গাইতে শুরু করে। যা জুগিয়েছিল ফিরে আসার অনুপ্রেরণা। সেই ম্যাচের পর আমরা অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করতে শিখেছিলাম।’ সেদিন প্রতিপক্ষের মাঝমাঠে তিন বিশ্বসেরা ফুটবলার থাকা সত্ত্বেও প্রথমার্ধে কোনও ডিফেন্সিভ ব্লকার খেলাননি লিভারপুল কোচ বেনিতেজ। বিরতিতে এই ভুল শুধরে নেন তিনি। বদলে দিয়েছিলেন ফর্মেশন। ৪-৪-২ থেকে ৩-৪-১-২ ছকে দলকে খেলালেন। টোটকাটা কাজ করেছিল সঙ্গেসঙ্গেই। ১৫ মিনিটের মধ্যেই ইতিহাসের অন্যতম সেরা ‘কামব্যাক’ দেখল বিশ্ব। লিভারপুলের এই নতুন ছকে নির্বিষ হয়ে রইলেন কাকা-শেভচেঙ্কোরা। নির্ধারিত সময়ের পর অতিরিক্ত সময়ের শেষেও ফল রইল ৩-৩। টাই-ব্রেকারে গোলরক্ষক দুদেকের বীরত্বে লিভারপুল পেল অমূল্য সেই জয়। এই জয়টা যে তাঁদের কাছে কতটা স্পেশাল ছিল, তা বর্ণনা করতে গিয়ে জেরার্ড বলেছেন, ‘আমি যদি কোনও ভুল করে থাকি, শুধরে দেবেন। আজ পর্যন্ত কেউ কি এর থেকে ভালো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল দেখেছেন? সেদিন ওরা নিঃসন্দেহে আমাদের থেকে এগিয়ে ছিল। তবে আমরা ওদের হারিয়ে খেতাব জিতেছিলাম।’