রাজনীতিক ও পেশাদারদের ব্যস্ততা বাড়বে। বয়স্করা শরীর স্বাস্থ্যের প্রতি যত্ন নিন। ধনযোগ আছে। ... বিশদ
সম্প্রতি ভারতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক সুনীল ছেত্রী সঙ্গে ইনস্টাগ্রাম লাইভ সেশনে বেশ কিছু প্রশ্নের উত্তর দেন বিরাট কোহলি। দু’জনেই দিল্লির ছেলে। তাঁদের বন্ধুত্বও বেশ গভীর। বিরাটের কাছে সুনীল জানতে চান, তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারে বাবার ভূমিকা কতটা? প্রশ্নটা শুনে কিছুটা নস্টালজিক হয়ে পড়েছিলেন কিং কোহলি। তারপর বলেন, ‘শৈশব থেকে ক্রিকেটই ছিল আমার ধ্যান জ্ঞান। বাবার তাতে একটু আপত্তি ছিল। কারণ আমি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। ক্রিকেট খেলার জন্য যে অর্থ প্রয়োজন, তার যোগান দেওয়াটা বাবার পক্ষে কষ্টকর ছিল। তাই বাবা বলতেন, পড়াশুনাকে অগ্রাধিকার দাও। তারপর সম্ভব হলে খেলাধুলা কর। যেটাতে মন বসবে পরবর্তী কালে সেটাকে বেছে নাও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাবা লক্ষ্য করেন, আমি বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছি। কোচ, বন্ধু, প্রতিবেশীরা আমার খেলার প্রশংসা করতে শুরু করেন। বাবা তারপর আর বাধা দেননি। তখন থেকে আমি পুরোপুরি ক্রিকেটে মনঃসংযোগ করি।’
একটু থেমে কোহলি যোগ করেন, ‘অনূর্ধ্ব-১৯ ভারতীয় দলে সুযোগ পাওয়াটা আমার জীবনের টার্নিং পয়েন্ট। তবে প্রথম দিকে মনে হতো, ক্রিকেট খেলাকে কি সত্যি কেরিয়ার করা সম্ভব? রাজ্য দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ার পর কিছু অর্থ হাতে আসতে শুরু করে। তখন আমি ভাবি, যদি আরও ভালো খেলতে পারি, তাহলে সব স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব। তবে কেরিয়ারের শুরুতে আর পাঁচটা সাধারণ ক্রিকেটারের মতো আমাকেও অনেক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। একটা ঘটনার কথা বলি। আগেও হয়তো বলেছি। আমার বাবা রাস্তার আলোয় পড়াশোনা করে আইনজীবী হয়েছিলেন, মার্চেন্ট নেভিতে চাকরিও করেছেন। সংগ্রামী জীবন ছিল তাঁর। একবার রাজ্য দলে টিম সিলেকশনের সময় বাবাকে ডেকে দিল্লির এক আধিকারিক বলেন, আপনার ছেলের যোগ্যতা নিয়ে কোনও প্রশ্ন হবে না। তবে ওকে সুযোগ পেতে হলে আপনাকে আরও একটু বেশি কিছু করতে হবে। বাবা প্রথমে ব্যাপারটা বুঝতেই পারেননি। আমাকে দলে ঢোকানোর জন্য ওই আধিকারিক যে ঘুষ চাইছে সেটা উনি অনেক পরে বুঝতে পারেন। কিন্তু বাবা কিছুতেই ঘুষ দিতে রাজি হননি। আমার কোচকে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, যোগ্যতার বলে আমার ছেলে দলে সুযোগ পেলে পাবে, না হলে ও আবার চেষ্টা করবে। এই ধরনের ঘটনা রাজ্যস্তরে ভুরি ভুরি ঘটে। তাই বিস্তারিত কিছু বলতে চাই না। সেদিন দলে সুযোগ না পেয়ে কেঁদেছিলাম। মনে হয়েছিল কেরিয়ারটাই শেষ হয়ে গেল। তবে ওই ঘটনা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছিল। এটা বুঝেছিলাম, সফল হওয়ার জন্য আমাকে অসাধারণ হয়ে উঠতে হবে। তার জন্য বিকল্প কোনও পথ নেই। আজ আমি যা কিছু অর্জন করেছি সবই কঠোর পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও প্রচেষ্টার ফল। বাবাই আমাকে সে দিন সঠিক পথ দেখিয়েছিলেন। তা না হলে এই জায়গায় পৌঁছাতে পারতাম না।’
মাত্র ১৮ বছর বয়সেই পিতৃহারা হন বিরাট কোহলি। তখন দিল্লির হয়ে তিনি কর্নাটকের বিরুদ্ধে রনজি ম্যাচ খেলছিলেন। ২০০৬ সালের ঘটনা। আগের রাতে বাবা মারা যাওয়া সত্ত্বেও দুর্দান্ত ইনিংস খেলে দলের পতন রোধ করেছিলেন বিরাট। এই প্রসঙ্গে ভারত অধিনায়ক বলেন, ‘বাবার মৃত্যুটা মেনে নেওয়া ছাড়া আমার আর কিছু করার ছিল না। আমাকে এগিয়ে যেতে হতো। সামনে ছিল কেরিয়ার গড়ার সুযোগ। তাই বাবা যেদিন মারা গেলেন, তার পর দিন আমি রনজিতে ব্যাট করেছি দিল্লির হয়ে। বাবার মৃত্যুর পর আমি অনুভব করেছিলাম, আমাকে কিছু একটা করতেই হবে। এখন খুব আফসোস হয়। বাবা যদি বেঁচে থাকতেন অবসর জীবনটা খুব সুখে শান্তিতে কাটাতে পারতেন। সেটা তাঁর প্রাপ্য ছিল। তাই বাবার কথা যখনই মনে পড়ে, মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে। বাবাকে এখনও খুব মিস করি।’