পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
লিগের পর অফিসের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন প্রদীপদা। মোহন বাগানের দায়িত্বে সহকারী কোচ প্রসূনদা। ওই সময়ে ওদের ফুটবলারদের মধ্যে বন্ডিং আলগা হল। প্রসূনদা চীনের ডালিয়নে এশিয়ান কাপ উইনার্স কাপে দল নিয়ে গেলেন। বড় ব্যবধানে হারায় চূর্ণ হল সবুজ-মেরুনের মনোবল। ততদিনে নায়িমদা গুছিয়ে নিয়েছেন দল। মোহন বাগানের পারফরম্যান্স গ্রাফ পড়ে যাওয়ায় তিনটি ব্লু রিবন টুর্নামেন্টে জিতে ত্রিমকুট পেতে সুবিধা হয়েছিল। সেবার শিল্ড,ডুরান্ড আর রোভার্সের ফাইনালেই উঠতে পারেনি ওরা। শিল্ড ফাইনালে আমাদের প্রতিপক্ষ ছিল মহমেডান স্পোর্টিং। আমরা এক গোলে এগিয়ে ছিলাম। এমন সময়ে রেফারির সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে মহমেডান দল তুলে নেয়। আমারা চ্যাম্পিয়ন হই। ডুরান্ড ও রোভার্সের ফাইনালে আমরা মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রার বিরুদ্ধে খেলেছিলাম। গোটা মরশুমেই দুর্গরক্ষার দায়িত্ব ছিল আমার। রক্ষণে ইলিয়াস পাশা, মনোরঞ্জন ভট্টাচার্য, তরুণ দে’র সঙ্গে মস্তান আমেদ আর অনিরুদ্ধ কোলে। মাঝমাঠের কোর গ্রুপে বিকাশ-সুদীপ- মইদুল ইসলাম। আপফ্রন্টে অধিনায়ক চিমার পাশে কুলজিৎ সিং এবং বাবু মানি। উইথড্রলে কৃশানুর মতো শিল্পী ফুটবলার। বেশ কিছু পজিশনে প্রথম একাদশে ঢোকা নিয়ে স্বাস্থ্যকর লড়াইয়ের সুফল পেয়েছিল দল। মইদুলকে সেবার নায়িমদা স্টপার থেকে ডিফেন্সিভ ব্লকার করে দেন। সুদীপকে বসিয়ে তিনি ওকে খেলাতে শুরু করলেন। নতুন পজিশনে চমৎকার মানিয়ে নিয়েছিল অভিজ্ঞ মইদুল। এই নিয়ে নায়িমদার সঙ্গে সুদীপের কম অশান্তি হয়নি। শেষ পর্যন্ত গড়গড়িদারা নায়িমকে বুঝিয়ে দু’জনকে রোটেট করে খেলানোর ব্যবস্থা করলেন। মস্তান সেই বছর মনাদা আর তরুণকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছিল। শেষদিকে মনাদা হাঁটুর চোট নিয়ে বিব্রত হলে রক্ষণে দারুণ সার্ভিস দিয়েছে মস্তান। প্রথম একাদশে এফসিআইয়ের চার-পাঁচজন খেলোয়াড় থাকায় দলের বন্ডিং ছিল দারুণ। আমি, কৃশানু, বিকাশ, মইদুল, বাবু মানিরা প্রায় গোটা দিন একসঙ্গেই কাটাতাম।
আমার মতে, দুটি ‘ত্রিফলায়’ ইস্ট বেঙ্গল সেই মরশুমে ঘায়েল করেছিল প্রতিপক্ষ দলগুলিকে। চিমা-কুলজিৎ-কৃশানুর ত্রিভুজ আক্রমণ মাঠে খেলা দেখতে দেখতে বোঝা যেত। কিন্তু নায়িমদার পকেটে ছিল আরও একটি গুপ্ত ‘ত্রিফলা’। এই ত্রিফলা তৈরি করত বাবু মানি, বিকাশ ও কৃশানু। অনেকেই এই ‘সাকসেস সিক্রেট’ বুঝতে পারেননি। বাবু মানি দৌড় শুরু করলে বিকাশ ভিতরে ঢুকে যেত। বিকাশ তখন মানির দেওয়া বল ধরে বাঁ দিক ঘেঁসে কৃশানুকে দিত। ওখান থেকে বাড়ানো রন্টুর থ্রু কিংবা চিপ থেকে জাল কাঁপাত চিমা ও কুলজিৎ। মানির ঠিকানা লেখা সেন্টারও ছিল দলের সম্পদ। ডুরান্ড ফাইনালে দুরন্ত লড়াইয়ের পর মাহিন্দ্রা অ্যান্ড মাহিন্দ্রাকে ৩-২ গোলে হারিয়েছিলাম আমরা। জয়সূচক গোল সেই কুলজিতের। অপর দু’টি গোল ছিল সুদীপ আর কৃশানুর। রোভার্সে চোটের জন্য চিমা ছন্দে ছিল না। তবে কুলজিৎ ওর অভাব পুষিয়ে দিয়েছিল। তবে রোভার্স ফাইনালে মনাদা রুখে না দাঁড়ালে আমরা ওই বছর ত্রিমুকুট পেতাম না। প্রথমার্ধে গোল বাতিল নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে কুপারেজ। ইস্ট বেঙ্গল দল তুলে নেওয়ার হুমকি দেয়। ম্যাচের প্রারম্ভিক পর্বে চোট পেয়ে মনাদা হোটেলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু মাঠে ঝামেলার কথা শুনে ট্যাক্সি করে কুপারেজে ফিরে আমাদের বুঝিয়েছিল ও। সেদিন মনাদা বারবার বলেছিল, ইস্ট বেঙ্গল মাঠ থেকে পালিয়ে যায় না। আমরা খেলব এবং জিতব। শেষ পর্যন্ত মস্তানের গোলে আমরা রোভার্স চ্যাম্পিয়ন হই।