কর্মক্ষেত্রে সহকর্মীর ঈর্ষার কারণে সম্মানহানি হবে। ব্যবসায়ীদের আশানুরূপ লাভ না হলেও মন্দ হবে না। দীর্ঘ ... বিশদ
বয়স বাড়লেও শ্যাম থাপার স্মৃতিপটে অম্লান ১৯৭৭। ফ্ল্যাশব্যাক বর্ণনার সময় ভাবার প্রয়োজন হয় না। চোখের সামনে ভেসে ওঠে সবকিছুই। মুঠোফোনের ওপার থেকেই শুরু হল তাঁর স্মৃতি-ভাষণ, ‘আমার ফুটবল জীবনে ১৯৭৫’ই সেরা। তার পরের বছরেও ভালো খেলেছিলাম। তাই ১৯৭৭’এ প্রদীপদা আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একাধিক নাটকীয় ঘটনার পর মোহন বাগানে এলাম। আমায় ঘিরে সবুজ-মেরুন সমর্থকদের আশা তখন আকাশ ছুঁতে চায়। কিন্তু বিধি বাম। মরশুমের প্রথম দু’টি ট্রফি ফেড কাপ এবং কলকাতা লিগে ব্যর্থ হই। ইস্ট বেঙ্গলের তরুণ-ব্রিগেডের কাছে হেরেছিলাম। ডার্বির ইতিহাসে সেটাই বোধহয় সবচেয়ে বড় অঘটন। সুধীর, গৌতমের সঙ্গে আমাকেই বেশি গালাগাল দিয়েছিল সমর্থকরা। বলেছিল, লাল-হলুদ জার্সি ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারছে না। যা তিনজনেরই আত্মসম্মানে ঘা পড়ার জন্য যথেষ্ট। ওই বড় ম্যাচের পর দেড় মাস নরকযন্ত্রণা ভোগ করেছি। ইস্ট বেঙ্গল সমর্থকদের শ্লেষ ও মোহন বাগান জনতার ক্ষোভ, দুয়েরই টার্গেট ছিলাম আমরা। প্রদীপদা বলতেন, যেভাবেই হোক ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এই লড়াইয়ে কর্তাদেরও পাশে পেয়েছিলাম। ধীরেন দে’র মতো ব্যক্তিত্ব প্র্যাকটিসের পর টেলিফোনে পালা করে বিভিন্ন ফুটবলারদের সঙ্গে কথা বলতেন। যা দেখে বিস্ময়ের ঘোর কাটত না শৈলেন মান্নারও। এই পর্বে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ রেখেছিলেন প্রদীপদা। আমাদের নিয়ে অনুশীলনে ডুবে থাকাই ছিল ওঁর একমাত্র কাজ। পান থেকে চুন খসলেই বরাদ্দ বাছাই করা বিশেষণ। ওই দেড় মাস প্রদীপদাকেও যেন অন্যরকম লাগত। গুয়াহাটিতে বরদলুই ট্রফি খেলতে গিয়ে আমরা যেন অনেকদিন পর প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছিলাম। অসম পুলিস, ভাস্কোর মতো টাফ দলগুলিকে উড়িয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়নও হয়েছিলাম।’
সামান্য বিরতি। এবার শ্যাম ফিরলেন ফের কলকাতার কথায়। ‘সেবার আইএফএ শিল্ডে আইটিআইকে ৫-০ গোলে চূর্ণ করেছিলাম। এই দলের কাছেই ফেড কাপ ফাইনালে হারতে হয়েছিল। এরপর এগিয়ে এল কসমস ম্যাচ। ২৪ সেপ্টেম্বর সেই মহাম্যাচের আগে প্রদীপদার টিম মিটিং এখনও ছবির মতো মনে আছে। বলেছিলেন, জলকাদার মাঠে ওরা কোনওভাবেই ছন্দে থাকতে পারবে না। তোমরা আজ মোহন বাগান জার্সি পরে নামলেও দেশের প্রতিনিধিত্ব করছ। ৯০ কোটি মানুষ তোমাদের দিকে তাকিয়ে। আমি ১৮ জনের দলে থাকা ১৬ জনকেই সুযোগ দেব। নিজেদের সেরাটা নিংড়ে দাও। ভালো খেলতে পারলে এই ম্যাচই মুছে দেবে ফেড কাপ ও কলকাতা লিগের কলঙ্ক। হয়েওছিল তাই। কসমসের বিরুদ্ধে মোহন বাগান ২-২ গোলে ড্র করে। আমরা এক গোলে পিছিয়ে পড়েও ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েছিলাম। কার্লোস আলবার্তো ও কিনালিয়া গোল করেছিল কসমসের হয়ে। মোহন বাগানের দু’টি গোল ছিল আমার আর হাবিবের। বরদলুই ট্রফি থেকে স্ট্রাইকারে আমার পাশে হাবিবকে নিয়মিত খেলাতে থাকেন প্রদীপদা। হাবিব-আকবর জুটি ভেঙে দেন একটি বিশেষ কারণে। শ্লথ হয়ে পড়া সুধীরকে প্রথম একাদশে না রেখে কম্পটনকে দলে সেট করেন। এই দু’টি পরিবর্তনেই ত্রিমুকুট জয়। কসমস ম্যাচের পর আমাদের পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শিল্ডে আমার গোলেই চ্যাম্পিয়ন হল মোহন বাগান। সেদিন মনোরঞ্জন-বলাই চক্রবর্তীদের দাঁড়াতে দিইনি। তারপর দিল্লিতে জেসিটিকে হারিয়ে ডুরান্ড কাপ জিতলাম। সেমি-ফাইনালে জেসিটি হারিয়েছিল ইস্ট বেঙ্গলকে। রোভার্স সেমি-ফাইনালে মর্যাদার ডার্বিতে অসাধারণ খেলেছিল গৌতম। কড়া ট্যাকলে থামিয়ে দিয়েছিল পার্টনার পিন্টু চৌধুরিকে। কসমস ম্যাচ থেকে বিশেষ উচ্চতায় উঠে রক্ষণে নেতৃত্ব দিয়েছিল সুব্রত-প্রদীপ। রোভার্স ফাইনালে টাটা স্পোর্টসের বিরুদ্ধে ছিল আমার গোল। এভাবেই ব্যর্থতার ইতিহাস সাফল্যে বদলে দিয়েছিল মোহন বাগান। হোটেলের দেওয়াল টপকে সবুজ-মেরুনে আসা তাই সার্থক।’