বিদ্যার্থীদের পঠন-পাঠনে আগ্রহ বাড়বে। কর্মপ্রার্থীদের কর্মপ্রাপ্তির যোগ। বিশেষত সরকারি বা আধা সরকারি ক্ষেত্রে যোগ প্রবল। ... বিশদ
ওয়েলিংটন, ২৪ ফেব্রুয়ারি: ১০ উইকেটে লজ্জার হার। তাও আবার মাত্র সাড়ে তিন দিনে। সাফল্যের শিখর থেকে টিম ইন্ডিয়াকে ব্যর্থতার রুক্ষ মাটিতে নামিয়ে আনলেন টিম সাউদি, ট্রেন্ট বোল্টরা।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টে ভারতের পারফরম্যান্স দেখে একবারের জন্য মনে হয়নি বিশ্বের এক নম্বর টেস্ট দল খেলছে। প্রথম ইনিংসে ১৬৫ রানে অল-আউট হওয়ার পরেও অনেকে আশায় বুক বেঁধেছিলেন এই ভেবে যে, কোহলি বাহিনী ভুল শুধরে দারুণভাবে ম্যাচে ফিরে আসবে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসেও দু’শোর গণ্ডি টপকাতে ব্যর্থ ভারত। ১৮৩ রানে পিছিয়ে থেকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে টিম ইন্ডিয়ার লড়াই শেষ হয় মাত্র ১৯১ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে বিনা উইকেটে ৯ রান তুলে শততম টেস্ট জয়ের নজিরও গড়েছেন কিউয়িরা।
দিন কুড়ি আগেও মনে হয়নি এমন শোচনীয় হাল হবে কোহলিদের। সফরের শুরুতে টি-২০ সিরিজে কিউয়িদের ৫-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়েছিল টিম ইন্ডিয়া। কিন্তু একদিনের সিরিজে কোহলিদের পাল্টা হোয়াইটওয়াশ করে কেন উইলিয়ামসন, রস টেলররা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, সহজে তাঁরা লড়াইয়ের জমি ছাড়বেন না। টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচেও কিউয়িদের দাপট অব্যাহত। বেসিন রিজার্ভের বাইশ গজে ব্যাট করা হয়তো সহজ ছিল না ঠিকই, কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে মায়াঙ্ক আগরওয়ালের হাফ-সেঞ্চুরি ছাড়া ভারতের বাকি ব্যাটসম্যানরা কার্যত উইকেট ছুঁড়ে দিয়েছেন। কিউয়ি ক্যাপ্টেন কেন উইলিয়ামসন ৮৯ রানের ইনিংস খেলে বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই পিচে কীভাবে ব্যাট করতে হয়। প্রথম থেকেই ম্যাচটা ছিল বোলারদের মুঠোয়। আর সেখানেই টেক্কা দিল নিউজিল্যান্ড। সাউদি- বোল্টের আগুনে পেসের ছোবলে শুরু থেকেই কাঁপছিল ভারতীয় ব্যাটিং। তার উপর নবাগত কাইল জেমিসনের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বড় ফারাক করে দিয়েছে দুই দলের মধ্যে।
এর আগে যে ভারত কখনও নিউজিল্যান্ডের কাছে টেস্টে ১০ উইকেটে হারেনি তা নয়। পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৮৯-৯০ মরশুমে ক্রাইস্টচার্চে একই ফল হয়েছিল। ওয়েলিংটনেই ২০০২-০৩ সালে নিউজিল্যান্ড ১০ উইকেটে উড়িয়ে দিয়েছিল সৌরভ গাঙ্গুলির দলকে। কিন্তু এবারের হার ভারতীয় সমর্থকদের কাছে বড় ধাক্কা। কারণ, এই দলটাই গত সাতটি টেস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ (২টি), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩টি) ও বাংলাদেশকে (২টি) দুরমুশ করে ৩৬০ পয়েন্ট সংগ্রহ করেছিল। এই সাফল্যই হয়তো মাথা ঘুরিয়ে দিয়েছিল বিরাট বাহিনীর।
ক্রিকেট পণ্ডিতরা বলছেন, এই পরাজয় ভারতীয় দলের পক্ষে ভালো। দ্বিতীয় টেস্টের আগে ভুলত্রুটি শুধুরে নেওয়ার সুযোগ পেলেন বিরাট কোহলিরা।
একদিনের সিরিজ হারের পরেও ভারতীয় দল নিয়মিত অনুশীলন করেনি। প্র্যাকটিসের থেকে বেশি ঘুরে বেড়িয়েছিলেন। এখন দেখার, ভারতীয় ক্রিকেটাররা পরের ম্যাচের জন্য কীভাবে নিজের প্রস্তুত করেন। বিরাট কোহলি বলছেন, ‘একটা ম্যাচ হেরেছি বলে গেল গেল রব তোলার কোনও মানে হয় না’। ভারত অধিনায়ক কি ভুলে যাচ্ছেন, বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে একের পর এক ম্যাচ জেতায় তাঁদের নিয়ে কীভাবে মাতামাতি হয়েছিল? ব্যর্থ হলে সমালোচনা হবেই। সেটাই প্রত্যাশিত।
ভারতের পক্ষে এই ম্যাচ যে বাঁচানো সম্ভব নয়, তা তৃতীয় দিনেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল। শুধু দেখার ছিল, অজিঙ্কা রাহানে-হনুমা বিহারি জুটি কতক্ষণ লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। সোমবার, ম্যাচের চতুর্থ দিনে ‘টিম ইন্ডিয়া’ শুরু করে ৪ উইকেটে ১৪৪ রান নিয়ে। রাহানে ২৫ ও হনুমা ১৫ রানে অপরাজিত ছিলেন। কিন্তু রাহানে এদিন একটা বাউন্ডারি হাঁকিয়েই ২৯ রানে বোল্টের বলে কট বিহাইন্ড হন। বড় ইনিংস খেলতে ব্যর্থ হনুমাও। ঋষভ পন্থ আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাট করলেও অশ্বিন (৪), সামি (২) দ্রুত আউট হওয়ায় তাঁর পক্ষে চালিয়ে খেলা ছাড়া উপায় ছিল না। ইশান্তের সঙ্গে তিনি ২৭ রান যোগ করেন। শেষ পর্যন্ত সাউদির বলে স্যুইপ করতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে বোল্টের হাতে ধরা পড়েন ঋষভ (২৫)। ৮১তম ওভারে সাউদির অন্তিম ডেলিভারিতে বুমরাহ (০) মিশেলের হাতে ধরা পড়তেই ভারতের দ্বিতীয় ইনিংস ১৯১ রানে শেষ হয়ে যায়।
জয়ের জন্য মাত্র ৯ দরকার ছিল নিউজিল্যান্ডের। দুই ওপেনার টম লাথাম ও টম ব্লান্ডেল ১.৪ ওভারেই দলকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট নিয়ে ম্যাচের নায়ক টিম সাউদি। দ্বিতীয় টেস্টে ব্যাটসম্যানদের পাশাপাশি বুমরাহ-সামিরা যদি দ্রুত ফর্ম না ফেরেন, তাহলে টেস্ট সিরিজেও গো-হারা হারতে হবে কোহলি বাহিনীকে।