ব্যবসায় বাড়তি বিনিয়োগ প্রত্যাশিত সাফল্য নাও দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে পদোন্নতি। শ্বাসকষ্ট ও বক্ষপীড়ায় শারীরিক ক্লেশ। ... বিশদ
নিউজিল্যান্ড ৩৪৮
ওয়েলিংটন, ২৩ ফেব্রুয়ারি: বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথমবার পরাজয়ের রক্তচক্ষু দেখছে ভারত। বড় কোনও অঘটন না ঘটলে বেসিন রিজার্ভে প্রথম টেস্ট জিতে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে কিউয়িদের এগিয়ে যাওয়াটা শুধু মাত্র সময়ের অপেক্ষা।
ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার ছবিটা দ্বিতীয় ইনিংসেও বদলাল না। প্রথম ইনিংসে ১৮৩ রানে পিছিয়ে থেকে ফের ব্যাট করতে নেমে তৃতীয় দিনের শেষে ‘টিম ইন্ডিয়া’র স্কোর ৪ উইকেটে ১৪৪। সাজঘরে ফিরে গিয়েছেন পৃথ্বী সাউ (১৪), চেতেশ্বর পূজারা (১১) ও ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলি (১৯)। ট্রেন্ট বোল্টদের সামনে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন মায়াঙ্ক আগরওয়াল (৫৮)। কিন্তু জমে গিয়েও ইনিংসকে আরও লম্বা করতে ব্যর্থ তিনি। কিউয়ি বোলারদের মধ্যে বোল্ট একাই তিনটি উইকেট নিয়েছেন।
হার বাঁচানোর দায়িত্ব এখন অজিঙ্কা রাহানে ও হনুমা বিহারির কাঁধে। রাহানে ২৫ ও হনুমা ১৫ রানে ক্রিজে আছেন। ভারত এখনও পিছিয়ে রয়েছে ৩৯ রানে। সোমবার ম্যাচের চতুর্থ দিন। রাহানে-হনুমা জুটি অবিশ্বাস্য ইনিংস না খেলতে পারলে ‘টিম ইন্ডিয়া’র পক্ষে এই ম্যাচ বাঁচানো কঠিন।
ভারতের এই হতশ্রী পারফরম্যান্সের জন্য ক্যাপ্টেন কোহলি অনেকটাই দায়ী। একদিনের সিরিজে তিনটি ম্যাচে মাত্র ৭৫ রান করেছিলেন তিনি। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে মাত্র ২ রান করে তাঁকে মাঠ ছাড়তে হয়েছিল। দ্বিতীয় ইনিংসেও ছবিটা খুব একটা বদলাল না। শুরু থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলছিলেন ভারত অধিনায়ক। শেষ পর্যন্ত ট্রেন্ট বোল্টের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে তিনি কট বিহাইন্ড হন ১৯ রানে। ব্যাট হাতে রানের খরা বিরাটের নেতৃত্বেও প্রভাব ফেলেছে। রিভিউ নেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারছেন না। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে বিরাটের এই অফ ফর্ম মনে করিয়ে দিচ্ছে তাঁর ২০১৪ সালে ইংল্যান্ড সফরের কথা।
আসলে, তারকা ক্রিকেটাররা যখন ফর্মে থাকেন না, তখন এমনই অবস্থা হয় দলের। তারকা পেসার যশপ্রীত বুমরাহ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারছেন না। তার উপর রোহিত শর্মার চোট ভারতীয় ব্যাটিংকে যথেষ্ট দুর্বল করেছে। খেলায় হার-জিত থাকে। কিন্তু এক নম্বর টেস্ট দল হয়েও কোহলি বাহিনী যেভাবে দাঁড়িয়ে আত্মসমর্পণ করছে, তা মোটেও কাঙ্খিত নয়। ওপেনার পৃথ্বী সাউ দুই ইনিংসেই ব্যর্থ। এদিন তিনি আউট হন ১৪ রানে। চেতেশ্বর পূজারা মূলত টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান। প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ঠান্ডা মাথায় শক্তিশালী ডিফেন্সকে হাতিয়ার করে তিনি ধীরে ধীরে রানের মিনার খাড়া করতে সিদ্ধহস্ত। কিন্তু নিউজিল্যান্ড সফরে পূজারাকেও ছন্দে পাওয়া যাচ্ছে না। যা ভারতের কাছে অশনিসংকেতই বটে। দ্বিতীয় ইনিংসে জাজমেন্ট দিতে গিয়ে বোল্টের বলে তিনি বোল্ড হন ১১ রানে। বিপর্যয়ের মুখে কিছুক্ষণ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছিলেন মায়াঙ্ক। ৭৫ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন তিনি। কিন্তু সেই ইনিংস আর দীর্ঘায়িত করতে পারেননি ভারতীয় ওপেনারটি। টিম সাউদির লেগ স্টাম্পের বলে অহেতুক ফ্লিক করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন মায়াঙ্ক। ক্যাপ্টেন কোহলির পরামর্শে রিভিউ নেন তিনি। বল আদৌ ব্যাটে লেগেছিল কিনা, তা হটস্পট পদ্ধতিতে বোঝা যায়নি। স্নিকো মিটারে সামান্য চিহ্ন ধরা পড়ে। তবে সেটা বল ব্যাটে লাগার কারণে না ব্যাট মাটিতে স্পর্শের ফলে, তা বোঝা যায়নি। শেষ পর্যন্ত আম্পায়ার আলিম দারের সিদ্ধান্তই অপরিবর্তিত থাকে। ৯৯ বলে ৫৮ রান করে বিতর্কিত আউটে সাজঘরে ফেরেন মায়াঙ্ক। একটা সময় ভারতের স্কোর ছিল ৪ উইকেটে ১১৩। সেই পরিস্থিতিতে অজিঙ্কা রাহানে ও হনুমা বিহারি কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলেন কিউয়ি বোলারদের সামনে। তাঁরা এখনও অবধি যোগ করেছেন ৩১ রান। ভারতের পক্ষে এই ম্যাচ জেতার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তবে ড্র করতে হলে রাহানে, হনুমার পাশাপাশি টেল এন্ডারদেরও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাট করতে হবে।
দিনের শুরুটা অবশ্যই বেশ ভালোই করেছিল ভারত। প্রথম বলেই ওয়াটলিংকে (১৪) আউট করেন বুমরাহ। দু’ওভার পরেই সাউদিকে (৬) ফেরান ইশান্ত। ২২৫ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ায় মনে হয়েছিল নিউজিল্যান্ড খুব বেশি রানের লিড নিতে পারবে না। কিন্তু অষ্টম উইকেটে কলিন ডি’গ্র্যান্ডহোম ও কাইল জেমিসন ৭১ রানের দুর্দান্ত পার্টনারশিপ গড়ে কোহলির সব হিসেব বদলে দেন। ৪৫ বলে ৪৪ রান করে আউট হন জেমিসন। চারটি ছক্কাও হাঁকান তিনি। গ্র্যান্ডহোম মাঠ ছাড়েন ৪৩ রানে। দু’টি উইকেটই নেন অশ্বিন। কিন্তু ট্রেন্ট বোল্ট ২৪ বলে পাঁচটি বাউন্ডারি ও ১টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৩৮ রান করে ভারতীয় বোলারদের বেআব্রু করে দেন। ভারতীয় বোলারদের মধ্যে ইশান্ত একাই নিলেন পাঁচটি উইকেট।
ওয়েলিংটন টেস্টের তৃতীয় দিনের স্কোর
প্রথম ইনিংসে ভারত ১৬৫। নিউজিল্যান্ড (৫ উইকেটে ২১৬ থেকে) ওয়াটলিং ক পন্থ বো বুমরা ১৪,গ্র্যান্ডহোম ক পন্থ বো অশ্বিন ৪৩, সাউদি ক সামি বো ইশান্ত ৬, জেমিসন ক হনুমা বো অশ্বিন ৪৪, প্যাটেল অপরাজিত ৪, বোল্ট ক পন্থ বো ইশান্ত ৩৮ অতিরিক্ত ৮, মোট ১০০.২ ওভারে ৩৪৮। উইকেট পতন: ২১৬-৬, ২২৫-৭, ২৯৬-৮, ৩১০-৯, ৩৪৮-১০। বোলিং: বুমরাহ ২৬-৫-৮৮-১, ইশান্ত ২২.২-৬-৬৮-৫, সামি ২৩-২-৯১-১, অশ্বিন ২৯-১-৯৯-৩।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত: পৃথ্বী ক লাথাম বো বোল্ট ১৪, মায়াঙ্ক ক ওয়াটলিং বো সাউদি ৫৮, পূজারা বো বোল্ট ১১, কোহলি ক ওয়াটলিং বো বোল্ট ১৯, রাহানে ব্যাটিং ২৫, হনুমা ব্যাটিং ১৫, অতিরিক্ত ২, মোট ৬৫ ওভারে ৪ উইকেটে ১৪৪। উইকেট পতন: ২৭-১, ৭৮-২, ৯৬-৩, ১১৩-৪। বোলিং: সাউদি ১৫-৫-৪১-১, বোল্ট ১৬-৬-২৭-৩, গ্র্যান্ডহোম ১৪-৫-২৫-০, জেমিসন ১৭-৭-৩৩-০, প্যাটেল ৩-০-১৮-০।