কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
শহরে ক্রিকেট চর্চা
হিমালয়ের পাদদেশ শিলিগুড়ি শহরে ৮০’র দশক থেকে ক্রিকেটের প্রতি বাসিন্দাদের জনপ্রিয়তা বাড়তে শুরু করে। শিলিগুড়িতে সেই অর্থে বড় মাপের ক্রিকেট খেলার আসর না বসলেও অতীতে রনজির মতো ম্যাচ হয়েছে। এখন দেশবন্ধুপাড়া, আশ্রমপড়ায়, কলেজপাড়ার মতো কয়েকটি জায়গায় ক্রিকেট কোচিং করানো হচ্ছে। বিকেলে এবং ছুটির দিনগুলিতে ছেলেমেয়েরা ওসব কোচিং সেন্টারে গিয়ে অনুশীলন করছে।
ক্রিকেটের পরিকাঠমো
এই শহর থেকে ঋদ্ধি, রিচা উঠে এলেও এখানে ক্রিকেট অনুশীলনের পরিকাঠামোর প্রচুর অভাব রয়েছে। তারমধ্যেই ছেলেমেয়েরা অনুশীলন করছে। মাঠের অভাব, ক্লাবগুলিতে আধুনিক জিম নেই। ক্রিকেট অ্যাকাডেমি করা হলে সেসব সমস্যা মিটতে পারে। পরিকাঠামো না থাকাতেই শহরে এখন সেভাবে ক্রিকেট নিয়ে আর নতুন করে উন্মাদনা দেখা যাচ্ছে না। মাঠের একটা বড়ো সমস্যা রয়েছে শিলিগুড়ি শহরে। শহর কেন্দ্রিক যে সব মাঠ রয়েছে সেগুলির অবস্থা খুব একটা ভালো নেই। ফলে কোনওরকমে জোড়াতালি দিয়ে চলছে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের ক্রিকেট লিগগুলি। এবড়ো খেবড়ো মাঠে অনুশীলন করছেন তাঁরা।
এই শহরে কলেজ মাঠ, ওয়াইএমএ মাঠ, দাদাভাই স্পোর্টিং ক্লাব, অগ্রগামী ক্লাবের মাঠে, তরাই স্কুল মাঠে ক্রিকেট অনুশীলন করানো হয়। শহরে সাত-আটটি ক্রিকেট কোচিং ক্যাম্প রয়েছে। অধিকাংশ কোচিং সেন্টারেই কংক্রিটের পিচে অনুশীলন করানো হয়। শুধুমাত্র একটি কোচিং ক্যাম্পেই টার্ফে ছেলেরা অনুশীলন করে। কংক্রিটের পিচে সারাবছর অনুশীলন করার ফলে কলকাতার মতো মাঠে খেলতে গেলে ক্রিকেটারদের বেকায়দায় পড়তে হয়।
মনোজ ভার্মা, সহকারী সাধারণ সম্পাদক, শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ: আমাদের শহর শিলিগুড়িতে একসময় ক্রিকেট খেলার প্রতি বাসিন্দাদের মারাত্মক আগ্রহ ছিল। টেবল টেনিসের পর ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ছিল। এখন সেটা অনেকটাই থিতিয়ে পড়েছে। কামাল হাসান মণ্ডল, মিথিলেশ দাস এখান থেকেই বাংলা দলে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। এখানে মাঠের অভাব বরাবরই আছে। তারপরেও এই শহর থেকে ঋদ্ধিমান সাহা, রিচা ঘোষ তৈরি হয়েছে। অনেকেই আছেন যাঁরা বাংলা ক্রিকেট দলে এখনও খেলছেন। ৯০’র দশকে শিলিগুড়ি কলেজ মাঠে, বাঘাযতীন পার্কে, চাম্পাসরির শ্রীগুরু বিদ্যামন্দিরের মাঠে নিয়মিত জেলা স্তরের ক্রিকেট ম্যাচ, প্রথম ডিভিশন, সুপার ডিভিশন ক্রিকেট ম্যাচগুলি হতো। কিন্তু এখন মাঠের অভাব। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়ামে ক্রিকেট খেলা হয় না বললেই চলে। মহকুমা পরিষদের সুপার ডিভিশন, প্রথম ডিভিশন ম্যাচের জন্য কোনও দিন তরাই স্কুল মাঠে, আবার কোনও দিন চাঁদমুনি কিংবা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে যেতে হচ্ছে।
তপন ভওয়াল, শিলিগুড়ি মহকুমা মহিলা ক্রিকেট টিমের কোচ: ৯০’র দশকে যে খেলার মান তৈরি হয়েছিল সেই তুলনায় এখন শিলিগুড়িতে প্রথম ডিভিশন লিগ, সুপার ডিভিশন লিগে খেলার মান অনেকটাই পড়ে গিয়েছে। অনেক ক্লাবই খেলোয়াড় গড়তে পারছে না। একটাই কারণ এখানে পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে। আমাদের এখানে এখন সুপার ডিভিশন লিগ শুধু টার্ফ পিচে হয়, প্রথম ডিভিশনের ম্যাচ ম্যাট উইকেটে খেলা হয়। কাঞ্চনজঙ্ঘা স্টেডিয়াম ফুটবলের জন্য নির্দিষ্ট হওয়ায় সমস্যা আরও বেড়েছে। শহরে মহিলা ক্রিকেটের সাম্প্রতিক কালে অনেকটাই উন্নতি হয়েছে। প্রতিভা আছে, কিন্তু পরিকাঠামো না থাকায় ওই প্রতিভা চাপা পড়ে যাচ্ছে।
আব্দুল মুনায়াম, প্রাক্তন ক্রিকেটার, মোহন বাগান ক্লাব: শিলিগুড়িতে একসময় ক্রিকেট খুব জনপ্রিয় ছিল কিন্তু এখন তাতে অনেকটাই ছেদ পড়েছে। এখানে ক্রিকেট খেলার উপযোগী মাঠ করা দরকার। সেটা করা হলে অনুশীলন করার জায়গা বৃদ্ধি পাবে। জাতীয় স্তরের মাঠ হলে বড়মাপের খেলোয়াড়রা আসবেন। তাঁদের অভিজ্ঞতা ছেলেমেয়েরা জানতে পারবেন। আমি আশাবাদী, ঋদ্ধিমান সাহা, কামালহাসান মণ্ডল, রিচা ঘোষের মতো ক্রিকেটার উঠে আসবে। শিলিগুড়িতে রনজির মতো ম্যাচ হওয়া দরকার। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিকেট টিম তবেই শক্তিশালী হবে।
গোপাল সাহা, রিচা ঘোষের কোচ: পরিকাঠমোর অভাবের কারণেই এখন নতুন করে আর খেলোড়ায় উঠে আসছে না। অনুশীলন করার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ নেই। যেক’টি মাঠ আছে তা ক্রিকেট খেলার উপযোগী নয়। পরিকাঠামো গড়া গেলে ঋদ্ধি, কামাল, রিচার মতো প্রতিভা উঠে আসত।