গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ক্রোমার গোলটা খেপের মাঠে খেলার সুফল। ম্যাচের সময় তখন ৯ মিনিট। সেন্টার লাইনের উপর থেকে মার্কোসের কোনাকুনি সেন্টার, ক্রোমা নিখুঁত রিসিভ করে প্রায় ২২ গজ দূর থেকে ডান পায়ের ইনস্টেপে নেওয়া কার্লিং শট অনেকটা ডিপ করে প্রথম পোস্টের কোণ দিয়ে জালে জড়িয়ে দেন (১-০)। পাঞ্জাব এফসি’র দীর্ঘকায় গোলরক্ষক কিরণ কুমার লিম্বু চেষ্টা করেও বলের নাগাল পাননি। পাড়ায় পাড়ায় খেপ খেলার সুবাদে ক্রোমা এর আগে এমন জ্যামিতিক শটে অনেক গোল করেছেন। লাল-হলুদ জার্সি গায়ে চার ম্যাচ খেলে প্রথম গোল পেলেন এই লাইবেরিয়ান স্ট্রাইকার।
গোল হওয়ার পরও ইস্ট বেঙ্গল ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি মাঝমাঠের ব্যর্থতায়। কাসিম আইদারাকে ডিফেন্সিভ স্ক্রিন রেখে ইস্ট বেঙ্গল কোচ মারিও রিভেরা ৪-১-৩-২ ফর্মেশনে দল সাজিয়েছিলেন। ডাবল স্ট্রাইকারে ক্রোমা ও মার্কোসের পিছনে খেললেন কোলাডো। দুই উইংয়ে কমলপ্রীত ও ব্র্যান্ডন। কিন্তু এখন লাল-হলুদের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন কোলাডো ও কাসিম আইদার। একদা বল প্লেয়ার কোলাডো খেলাটা ভুলে গিয়েছেন। কাসিমের ব্যর্থতায় ইস্ট বেঙ্গলের মাঝমাঠে ব্লকিংই হয়নি। বল ধরে পিছনে ঠেলেন। ডিসট্রিবিউশনও খুব খারাপ। সেই সুযোগ নিয়ে আক্রমণ শানালেন সঞ্জু প্রধান-ভালসি জুনিয়ররা। ৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া ইস্ট বেঙ্গলের প্রাক্তন অধিনায়ক সঞ্জু প্রধানের শট চাপড়ে বাইরে বার করেন লাল-হলুদ গোলরক্ষক মির্শাদ। ১৬ মিনিটে সঞ্জুর ক্রস থেকে সার্জিও বারবোসা ঠিকঠাক মাথা ছোঁয়াতে পারলে গোল হতে পারত।
দলের প্রধান স্ট্রাইকার ডিপান্ডা ডিকাকে প্রথম একাদশে রাখেননি পাঞ্জাব এফসি কোচ ইয়ান ল। তাতেও ইস্ট বেঙ্গল ডিফেন্ডারদের নাভিশ্বাস তুলে দিয়েছেন পাঞ্জাবের অ্যাটাকাররা। সেই চাপ রেখেই পাঞ্জাব এফসি সমতা ফেরায়। ৪০ মিনিটে বারবোসার ঠিকানা লেখা সেন্টার বক্সের বাঁ-দিক থেকে ফলো করে এসে স্লাইডিং শটে বল জালে জড়িয়ে দেন পাঞ্জাবের গিরিক খোসলা। তাঁর শট দ্বিতীয় পোস্টে লেগে গোলে ঢোকে (১-১)। তার দু’মিনিট পরেই মার্কোসের পাস থেকে ব্র্যান্ডন ওপেন সিটার মিস করেন। বিরতির ঠিক আগে ইস্ট বেঙ্গল গোলরক্ষক মির্শাদের লং কিক জমা পড়ে পাঞ্জাবের ফরোয়ার্ড মাকান উইঙ্কেলের পায়ে। মাকান গতি বাড়িয়ে বক্সে ঢুকে পড়লে ঠিক সময় পিছন থেকে বল বিপদমুক্ত করেন ইস্ট বেঙ্গল স্টপার আসির আখতার।
ইস্ট বেঙ্গলের আপফ্রন্টে ক্রোমা কার্যকরী ফুটবল খেলার চেষ্টা করলেও পেনিট্রেটিভ জোনে সাহায্যই পেলেন না। বল ধরে খেলার জন্য পাশে কাউকে পাননি তিনি। মার্কোস বল তাড়া করে খেললেও তাঁর ফুটবল বুদ্ধির অভাব। তাহলে তাঁর ভেদশক্তি থাকবে কী করে? বিরতির পরই দু’বার গোলের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি ক্রোমা। ৬৮ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে চলতি বলে নেওয়া ক্রোমার উঁচু শট ক্রসপিসের উপর দিয়ে বাইরে যায়। এই ইস্ট বেঙ্গলের সেকেন্ড বল উইন করার মতো অ্যাটাকার নেই। প্রতিপক্ষ রক্ষণে চাপ বাড়াতে ৬০ মিনিটে তূণের সেরা অস্ত্র ডিপান্ডা ডিকাকে মাঠে নামান পাঞ্জাব এফসি কোচ ইয়ান ল। দশ মিনিট পরেই স্প্যানিশ স্ট্রাইকার মার্কোসের বদলে হুয়ান মেরাকে মাঠে নামান লাল-হলুদ কোচ। ৭৪ মিনিটে পাঞ্জাব ডিফেন্ডারের ভুল ক্লিয়ারেন্স ধরে ক্রোমার শট গোললাইন সেভ করেন কিংসলে। লাল-হলুদ কোচ মারিও রিভেরা তখন বোধহয় হারের আশঙ্কা করছিলেন। নাহলে, ঘরের মাঠে জয়ের জন্য না ঝাঁপিয়ে মার্কোসকে তুলে নিয়ে কেন তিনি মাঝমাঠে তিনটি ব্লকার নিয়ে খেলবেন? যেখানে অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলতে এসে পাঞ্জাব কোচ আক্রমণে ফুটবলার বাড়ালেন। ভাবা যায়! ৮৫ মিনিটে ইস্ট বেঙ্গল স্টপার মেহতাব সিংয়ের ভুল ক্লিয়ারেন্স ধরে ডিপান্ডা ডিকা ওপেন সিটার মিস করেন। ৯২ মিনিটে ক্রোমাকেও তুলে নেন মারি রিভেরা! জয়ের কৌশল ভুলে ঘর বাঁচানোর খেলায় মনোযোগী এখন লাল-হলুদ কোচ। তিনি নাকি বলছেন, এখনও চ্যাম্পিয়নের স্বপ্ন দেখেন! হাস্যকর ব্যাপার-স্যাপার!
ইস্ট বেঙ্গল: মির্শাদ কে, সামাদ আলি মল্লিক, আসির আখতার, মেহতাব সিং, আভাস থাপা, কাসিম আইদারা, কমলপ্রীত সিং, হাইমে কোলাডো, ব্র্যান্ডন (টনডোম্বা ৮০ মি:), ক্রোমা (রোহলুপুইয়া ৯২ মি:), মার্কোস (হুয়ান মেরা ৭০ মি:)।