বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
(সুপার ওভারে জয়ী ভারত)
হ্যামিলটন, ২৯ জানুয়ারি: সুপার ওভারে টিম সাউদির অন্তিম ডেলিভারি রোহিত শর্মার ব্যাটে লেগে গ্যালারিতে আছড়ে পড়ার মুহূর্ত বহুদিন ক্রিকেটপ্রেমীদের স্মৃতির মণিকোঠায় অম্লান হয়ে থাকবে। কে বলবে, ম্যাচ হোলকারে নয়, হচ্ছে হ্যামিলটনে। গ্যালারি জুড়ে পতপত করে উড়ছে তেরঙ্গা পতাকা। সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভারতের প্রথম টি-২০ সিরিজ জয়ের আনন্দে আত্মহারা তখন ‘টিম ইন্ডিয়া’র সমর্থকরা। কেউ ভাঙড়ার তালে কোমর দোলাচ্ছেন, কারও মুখে রোহিতের জয়ধ্বনি।
সুপার ওভারে জয়ের জন্য ১৮ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতে ‘হিটম্যান’ ব্যাটে-বলে ঠিকমতো সংযোগ ঘটাতে পারেননি। শেষ দুই বলে ‘টিম ইন্ডিয়া’র টার্গেট ছিল ১০ রান। কিউয়িরা হয়তো ভেবে নিয়েছিলেন, ম্যাচটা তাঁরা জিতে গিয়েছেন। কিন্তু ক্রিকেট মহান অনিশ্চয়তার খেলা। সাউদির পঞ্চম ডেলিভারিতে রোহিত স্বকীয় ভঙ্গিতে বিশাল ছক্কা হাঁকানোর পর বদলে যায় ম্যাচের অভিমুখ। নার্ভাস হয়ে পড়েন সাউদি। স্ট্রাইকিং এন্ডে রোহিত তখন ইতিহাস লেখার অপেক্ষায় ছটফট করছেন। ফের একই ভুল করেন সাউদি। ইয়র্কার দিতে গিয়ে তিনি রোহিতের পায়ের গোড়ায় বল ফেলেন। প্রাপ্য জবাবও পেয়ে যান সঙ্গেসঙ্গে। ‘হিটম্যান’এর শট সোজা লং অফ দিয়ে উড়ে গিয়ে গ্যালারিতে পড়তেই কোহলি, শ্রেয়াসরা দৌড়ে মাঠে ঢুকে বুকে জড়িয়ে ধরেন রোহিতকে।
সুপার ওভারে ক্রিকেট দেবতার আশীর্বাদ আবার পেল না নিউজিল্যান্ড। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে সুপার ওভার বাউন্ডারি কাউন্টে পরাজিত হয়ে রানার্স হয়েছিলেন কেন উইলিয়ামসনরা। এদিনও ম্যাচের এই পর্ব বিভীষিকা হয়ে রইল তাঁদের কাছে। ম্যাচের ট্র্যাজিক হিরো উইলিয়ামসন। জয়ের জন্য ১৮০ রান তাড়া করতে নেমে নিউজিল্যান্ড ১৯ ওভারে মাত্র ৪ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান তুলে ফেলেছিল। তার পরেও কিউয়িদের মুখের গ্রাস এভাবে ভারত কেড়ে নেবে, সেটা কী কেউ ভেবেছিলেন! ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলি জানিয়েছেন, ‘আমরা তো ধরেই নিয়েছিলাম যে হেরে গিয়েছি।’
অন্তিম ওভারেই নাটকীয় পট পরিবর্তন ঘটে। ম্যাচের অন্যতম নায়ক সামির প্রথম ডেলিভারিতে বিশাল ছক্কা হাঁকান রস টেলর। টার্গেট কমে দাঁড়ায় ৫ বলে মাত্র ৪ রান। ৯৫ রান করে উইকেটে সেট হয়ে গিয়েছেন উইলিয়ামসন। উল্টোদিকে অভিজ্ঞ রস টেলর। কিন্তু ডেথ ওভারে সামির অভিজ্ঞতাই ভারতকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনে। প্রথম বলে ছক্কা হজম করার পরেও হাল ছাড়েননি ভারতের স্পিডস্টারটি। দ্রুত ভুল শুধরে দ্বিতীয় বলে সামি দেন এক রান। পরের ডেলিভারিতে কেন উইলিয়ামসনের (৯৫) উইকেট তুলে নিয়ে তিনি পাল্টা চাপে ফেলে দেন নিউজিল্যান্ডকে। নবাগত ব্যাটসম্যান সেইফার্ট চতুর্থ বলে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি। পরের বলে কোনওরকমে একটা রান যোগ করে ম্যাচ টাই করেন তিনি। তবে অন্তিম ডেলিভারিতে এক রান করলেই ম্যাচটা জিততে পারত নিউজিল্যান্ড। কিন্তু চাপের মুখে রস টেলরের মতো অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানও ভুল করে বসেন। অফ স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে অহেতুক চালিয়ে খেলতে গিয়ে টেলর (১৭) বোল্ড হন।
টাই হওয়ায় খেলা গড়ায় সুপার ওভারে। বিরাট কোহলি চাইলে সামিকেও বল করাতে পারতেন। কিন্তু তিনি সুপার ওভারের জন্য বেছে নেন বুমরাহকে। তবে উইলিয়ামসন-টেলর জুটি ১৭ রান তোলার পর মনে হয়েছিল, কাজটা অনেক কঠিন হয়ে গেল কোহলিদের কাছে। তার উপর রোহিত প্রথম দু’টি বলে কোনওক্রমে তিন রান যোগ করেন। প্রথম বলেই তিনি অবশ্য রান আউট হতে পারতেন। কিন্তু বিপক্ষ উইকেটরক্ষকের ভুলে বেঁচে যান। দুরন্ত ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুল তৃতীয় বলে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে আশা ফের জাগিয়ে তোলেন। চতুর্থ বলে তিনি নেন এক রান। আর শেষ দু’টি বলে পর পর ছক্কা হাঁকিয়ে হ্যামিলটনের নায়ক হয়ে যান ‘হিটম্যান’।
শুরুটা দেখেই বোঝা গিয়েছিল দিনটা রোহিতের। নিউজিল্যান্ড টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেয়। তবে রোহিত-রাহুল ওপেনিং জুটিতে দুর্ধর্ষ ব্যাটিং করে ৮৯ রান তোলেন। লোকেশ ২৭ রানে আউট হওয়ার পর বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রোহিত। একই সঙ্গে তিনি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ওপেনার হিসাবে দশ হাজার রানের মাইলস্টোনও ছুঁয়ে ফেলেন। ৪০টি বলে ছ’টি বাউন্ডারি ও তিনটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে রোহিতের সংগ্রহ ৬৫ রান। বিরাট কোহলি এদিন ফের ব্যাটিং অর্ডার বদলালেন। তিন নম্বরে তিনি জায়গা ছেড়ে দেন শিবম দুবেকে (৭)। একাদশতম ওভারে পরপর দু’টি উইকেট হারায় ভারত। চার নম্বরে নেমে বিরাট ২৭ বলে যোগ করেন ৩৮ রান। শ্রেয়াসের সংগ্রহ ১৭। মণীশ পাণ্ডে (অপরাজিত ১৪) ও রবীন্দ্র জাদেজা (অপরাজিত ১০) ঝোড়ো ব্যাটিং করায় ভারতের রান দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ১৭৯।
জবাবে নিউজিল্যান্ডের দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও কলিন মুনরো শুরু থেকেই চালিয়ে খেলেন। গাপটিলকে ৩১ রানে আউট করে ভারতকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন শার্দুল ঠাকুর। পরের ওভারে মুনরোকে (১৪) ফেরান জাদেজা। জোড়া ধাক্কায় নিউজিল্যান্ড কিছুটা চাপে পড়ে যায়। ঠিক তখনই চাহালের বলে আউট হয়ে যান মিচেল স্যান্টনারও (৯)। একটা সময় জয়ের জন্য কিউয়িদের দরকার ছিল ৫৪ বলে ৯২ রান। কেন উইলিয়ামসন প্রতি আক্রমণেই জয়ের পথ খোলার চেষ্টা করেন। চার-ছক্কার বন্যায় তিনি বেসামাল করে দেন ভারতীয় বোলারদের। গ্র্যান্ডহোম ৫ রানে আউট হলেও উইলিয়ামসনের বিস্ফোরক ব্যাটিং চিন্তায় ফেলে দেয় বিরাট বাহিনীকে। উইলিয়ামসন আটটি বাউন্ডারি ও ছ’টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৯৫ রান তোলার পর মনে হয়েছিল সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়ের নায়ক হবেন তিনি। কিন্তু কে জানত, ট্র্যাজিক হিরো হয়েই থামতে হবে তাঁকে।