ঠাৎ জেদ বা রাগের বশে কোনও সিদ্ধান্ত না নেওয়াই শ্রেয়। প্রেম-প্রীতির যোগ বর্তমান। প্রীতির বন্ধন ... বিশদ
মান্না দে’র কালজয়ী গান ‘সব খেলার সেরা বাঙালির তুমি ফুটবল’ এখনও কানে বাজে তাঁর। বল পায়ে দৌড়াতে ভালোবাসত বেহালার ওই ছোট্ট ছেলেটিও। সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলে পড়ার সময় বইয়ের পাতার বাইরে জীবন বলতে তখন শুধু ফুটবল মাঠ। জেসুইট স্কুল টুর্নামেন্টে ক্যাপ্টেন্সিও করেছেন। নেতৃত্বের সহজাত গুণ তখনই আবিষ্কৃত হয়েছিল। ম্যাচ খেলে বাড়ি ফেরার পর সন্ধ্যায় গোড়ালির চোটে কাতর ছেলেটির পায়ে মা নীরুপা দেবী পান পাতা, মধু আর চুনের মিশ্রণে তৈরি দেশীয় ভেষজ লাগিয়ে দিতে দিতে বলতেন, ‘আর ফুটবল খেলতে যাস না বাবা। এতে পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে।’
কে শোনে কার কথা। পরের দিন স্কুল ছুটির পর ফের সহপাঠীদের সঙ্গে ফুটবল খেলায় মেতে উঠত বেহালার ছোট্ট ছেলেটা। বাবা চণ্ডী গাঙ্গুলির অনুপ্রেরণায় ততদিনে দাদা স্নেহাশিস ব্যাট হাতে তুলে নিয়েছেন। কিন্তু যে খেলাটা তাঁকে বিশ্বজনীন করেছে, শুরুতে সেই ক্রিকেটের প্রতি তেমন টান ছিল না সৌরভ গাঙ্গুলির। পরে মায়ের চাপে ক্রিকেটে মগ্ন হন মহারাজ। শোনা যায়, সৌরভের ফুটবল স্কিল দেখে পিকে ব্যানার্জি তাঁকে টাটা ফুটবল অ্যাকাডেমিতে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন।
‘বাঙালি ফুটবল খেলবে না সেটা হয় নাকি? ছোটবেলায় চুটিয়ে ফুটবল খেলেছি। ক্রিকেটে এসেছি অনেক পরে। সেটাও দাদাকে দেখেই। দাদাও ভালো ফুটবল খেলত। স্কুলের লম্বা ছুটিতে বাড়িতে বসে টিভি দেখা কিংবা মোবাইল ঘাঁটার সুযোগ ছিল না। বিনোদন বলতে খেলার মাঠ। একদিন বাবাকে গিয়ে বললাম, এবার ক্রিকেট খেলব। বাবা শুনে বললেন, বেশ তো। এরিয়ান ক্লাবে দুখীরাম ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে আমাকে ভর্তি করে দিলেন। প্র্যাকটিসের পর একদিন স্যার বললেন, ম্যাচ খেলবি? ঘাড় নেড়ে সম্মতি জানালাম। অনূর্ধ্ব-১৫ ওড়িশা দলের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরিও করেছিলাম। ওটাই ক্রিকেট কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট। তারপর বাংলার হয়ে রনজি ট্রফি, পূর্বাঞ্চলের হয়ে নজর কেড়ে দেশের জার্সি...।’ বলতে বলতে থেমে যাচ্ছিলেন বিসিসিআই প্রেসিডেন্ট সৌরভ গাঙ্গুলি। শুক্রবার সন্ধ্যায় চোখ তখন টিভি’র পর্দায়। স্মিথের বিরুদ্ধে লেগ বিফোরের জোরালো আবেদন ভারতের। আম্পায়ার সিদ্ধান্ত জানানোর আগেই সৌরভ বলে দিলেন, ‘নট আউট। বল ব্যাটে লেগেছে।’ টিভি’র পর্দায় ফুটে উঠল, সৌরভই ঠিক।
বেহালার ওই ছোট্ট ছেলেটাই এখন ভারতীয় ক্রিকেটের বেজাত বাদশা।
বিরাট কোহলিদের অভিভাবক। সকালে ওয়ার্ক আউট সেরেই বেরিয়ে পড়েছেন শ্যুটিংয়ে। কাজের ফাঁকে বাড়ির সামনে নিজের অফিসে ঢু মেরে সন্ধ্যায় সিএবি’তে। । প্রচণ্ড কর্মব্যস্ত সৌরভ। কাজের চাপে ফিকে হয়েছে ফুটবলপ্রেম। নিজের দল এটিকে’র নিয়েও ঠিক মতো খোঁজ খবর রাখতে পারেন না। তবে ডার্বির প্রসঙ্গ উঠতেই ফ্ল্যাশব্যাকে সৌরভ ফিরে গেলেন সাত ও আটের দশকে, ‘অনেক বছর হল মাঠে গিয়ে আর কলকাতা ডার্বি দেখা হয়নি। একটা সময় আমি নিয়মিত ফুটবল খেলা দেখতে যেতাম। স্কুল ছুটির পর বাবার সদস্য কার্ডে মোহন বাগান মাঠেও খেলাও দেখতে গিয়েছি। তখন ফুটবলারদের ঘিরে ময়দানের উন্মাদনা ছিল অন্যরকম। ইডেনেও তখন ডার্বি হত। মূলত শনিবার। আজও চোখের সামনে ভেসে ওঠে প্রিয় ফুটবলারদের দর্শনীয় গোলের দৃশ্য। উইং দিয়ে চিতার মতো দৌড়াচ্ছেন বিদেশ বসু। কাকে ছেড়ে কার কথা বলব-- মানস, প্রশান্ত, সুব্রত, প্রসূন, তরুণ দে, উলগানাথন, জামশিদ—হাতের সামনে তখন কত তারকা। ময়দানে আমার প্রিয় ফুটবলার ছিলেন মজিদ বাসকর। অসাধারণ স্কিল। সেরকম স্কিলফুল তারকা না থাকলেও আশা করছি, রবিবারের ডার্বিতে ভালো খেলা হবে। দুই দলের প্রতিই শুভেচ্ছা রইল।’
দুই প্রধানের সঙ্গেই নিবিড় যোগাযোগ সৌরভের। ইস্ট বেঙ্গল ও মোহন বাগানের হয়ে বহু ক্রিকেট ম্যাচ খেলেছেন তিনি। আর কাকতালীয়ভাবে জুন মাস থেকে মোহন বাগান ফুটবল দলের অংশীদার মহারাজও। কারণ, সৌরভের অংশীদারী রয়েছে এটিকে’তে। দুই ক্লাবের সংযুক্তি নিয়ে মহারাজ বলেন, ‘এই চুক্তি ভারতীয় ফুটবলকে পথ দেখাবে।’ কিন্তু মোহন বাগানের নামের আগে এটিকে? সৌরভের সাফ জবাব, ‘কিছু তো ছাড়তেই হবে। আফটারঅল এটিকের দখলে সিংহভাগ শেয়ার। তারাই দল চালাবে। সংযুক্তিকরণের পর সবুজ-মেরুন সমর্থকদের সুখদুঃখের সাথী আমিও। মনে হয় না,এই সংযুক্তিতে মোহন বাগানের ঐতিহ্য ক্ষুণ্ণ হবে।’
ক্রিকেটের জনপ্রিয়তাই কি ফুটবলের প্রসারের পথে বাধা হচ্ছে? মুচকি হেসে মহারাজকীয় স্টাইলে সৌরভের জবাব, ‘এদেশে ক্রিকেট বেশি জনপ্রিয়। ক্রিকেটের একটা অন্য লেভেল রয়েছে। তার সঙ্গে ফুটবলের তুলনা ঠিক নয়।’