কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
রাজকোট, ১৭ জানুয়ারি: টিম গেমের জোরেই সিরিজে দারুণ প্রত্যাবর্তন ‘টিম ইন্ডিয়া’র। প্রথম ম্যাচে ১০ উইকেটে পর্যুদস্ত হওয়ার পর কড়া সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন বিরাট কোহলিরা। তিল তিল করে গড়ে তোলা সাফল্যের সাম্রাজ্য আচমকাই টলে গিয়েছিল অজি হানায়। কিন্তু হাল ছাড়েননি তাঁরা। পিছিয়ে পড়েও সিরিজে ‘টিম ইন্ডিয়া’র দুরন্ত কামব্যাকের বহু ইতিহাসের সাক্ষী রয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। শুক্রবার রাজকোটে যেন তারই পুনরাবৃত্তি ঘটল লোকেশ রাহুল, কুলদীপ যাদবদের সৌজন্যে। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে ৩৬ রানে হারিয়ে সিরিজেও সমতা (১-১) ফেরাল ভারত। এই জয় বাগিচা শহরে নির্ণায়ক ম্যাচে বিরাট বাহিনীকে বাড়তি অক্সিজেন জোগাবে। কিন্তু শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মার চোট অবশ্য উদ্বেগে রাখবে ‘মেন ইন ব্লু’কে।
জয়ের জন্য ৩৪১ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার (১৫) ও অ্যারন ফিনচ (৩৩) দ্রুত আউট হন। যদিও প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মার্নাস লাবুশানেকে নিয়ে তৃতীয় উইকেটে ৯৬ রান যোগ করেন বহু লড়াইয়ের পোড় খাওয়া সৈনিক স্টিভ স্মিথ। একটা সময় পর্যন্ত ম্যাচ ছিল ফিফটি-ফিফটি। কঠিন সময়ে স্পিনাররা ম্যাচে ফেরায় ‘টিম ইন্ডিয়া’কে। জাদেজার বলে ৪৬ রানে আউট হন লাবুশানে। অ্যালেক্স কেরিকে (১৮) তুলে নেন কুলদীপ। তবে তাঁর দিনের সেরা শিকার অবশ্যই স্মিথ। সেঞ্চুরির আশা জাগিয়েও তিনি কুলদীপের বলে ৯৮ রানে প্লেড অন হন। ৪৪তম ওভারে সামি প্রথম দু’টি বলে টার্নার (১৩) ও কামিন্সকে (০) আউট করে হ্যাটট্রিকের আশা জাগিয়ে জয় আরও নিশ্চিত করে তোলেন। অ্যাগরের সংগ্রহ ২৫ রান। ঝোড়ো ব্যাটিং উপহার দেন রিচার্ডসন (১১ বলে ২৪)। বুমরাহর বলে জাম্পা আউট হতেই ৩০৪ রানে গুটিয়ে যায় অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস।
ম্যাচের পর অ্যারন ফিনচ হয়তো ভাবছিলেন, প্রথমে ফিল্ডিং নেওয়া ভুল হয়েছে। টস জেতার ফায়দা তুলতে পারেননি মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরা। রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ান প্রারম্ভিক জুটিতে তোলেন ৮১ রান। তখনই বোঝা গিয়েছিল, আচমকা কোনও বিপর্যয় না ঘটলে রানের পাহাড় খাড়া করবে ‘টিম ইন্ডিয়া’। ইনিংসে কোনও সেঞ্চুরি নেই। তবুও ৬ উইকেটে ৩৪০ রান তুলতে সফল হয় কোহলি ব্রিগেড।
দুর্দান্ত সূচনার পরেও রোহিত ৪২ রানে জাম্পার বলে লেগ বিফোর হন। অনবদ্য ব্যাটিং করেন শিখর ধাওয়ান। বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করতে গিয়ে তিনি আউট হন ৯৬ রানে। ব্যাটিং অর্ডার বদলে গত ম্যাচে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল বিরাট কোহলিকে। ভুল শুধরে পছন্দের তিন নম্বরে নেমে ভিকে উপহার দিলেন ৭৮ রানের ঝকঝকে ইনিংস। সেঞ্চুরি করে আরও কীর্তি গড়ার সুযোগ ছিল তাঁর সামনে। কিন্তু অ্যাডাম জাম্পার ডেলিভারিতে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে কোহলি আউট হন। অ্যাস্টন অ্যাগর ক্যাচটি ধরে বাউন্ডারির বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছেন দেখে স্টার্ককে লক্ষ্য করে বলটা ছুঁড়ে দেন। এভাবেই যবনিকা পড়ে ভারত অধিনায়কের রাজকীয় ইনিংসে। তবে ৫২ বলে লোকেশ রাহুলের ৮০ রানের দুর্ধর্ষ ইনিংসই ভারতকে শেষ পর্যন্ত বড় ইনিংস খাড়া করতে সাহায্য করেছে। ঢেকে দিয়েছে মিডল অর্ডারের দুর্বলতাও। ফের ব্যর্থ শ্রেয়াস (৭)। বড় রান পেলেন না মণীশ পাণ্ডেও (২)।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘টিম ইন্ডিয়া’র সমর্থকরা প্রশংসা বন্যায় ভাসিয়ে দিয়েছেন লোকেশকে। হবে নাই বা কেন। শেষ তিনটি ম্যাচে আলাদা আলাদা পজিশনে ব্যাট করেও সফল তিনি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে অন্তিম টি-২০ ম্যাচে ওপেন করতে নেমে ৫৪ রান করেছিলেন। গত ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে গত ম্যাচে তিন নম্বরে ব্যাট করতে নেমে ৪৭ রানে আউট হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ওয়াংখেড়েতে ভারত ১০ উইকেটে চূর্ণ হওয়ার পর ব্যাটিং অর্ডার পরিবর্তন করা নিয়ে বিরাট কোহলিকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল। তাই এই ম্যাচে লোকেশকে ঠেলে দেওয়া হয় পাঁচ নম্বরে। তাতে কী হয়েছে। কথায় আছে, ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। ঋষভ পন্থের চোট লোকেশ রাহুলকে নতুন দায়িত্ব এনে দিয়েছে। উইকেটরক্ষক হিসেবেও তিনি ছাপ রেখেছেন। যা আগামী দিনে ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্টের অনেক সমস্যার সুরাহা করবে। ষষ্ঠ উইকেটে লোকেশ রাহুল ও রবীন্দ্র জাদেজা যোগ করেন মূল্যবান ৫৮ রান। জাদেজা ২০ রানে আউট হন। অজি বোলারদের মধ্যে অ্যাডাম জাম্পা একাই নেন তিনটি উইকেট। তবে কামিন্স, স্টার্কদের বেশ অসহায় দেখিয়েছে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের সামনে।