পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
মুম্বই, ১৪ জানুয়ারি: ভারতকে প্রথম একদিনের ম্যাচে ১০ উইকেটে হারিয়ে সিরিজে দুর্দান্ত সূচনা করল অস্ট্রেলিয়া। ওপেনিং জুটিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’র বিরুদ্ধে রেকর্ড ২৫৮ রানের পার্টনারশিপ গড়লেন অ্যারন ফিনচ ও ডেভিড ওয়ার্নার। তার সুবাদে ৭৪ বল বাকি থাকতে সহজেই জয়ের কড়ি জোগাড় করে নিল অজি ব্রিগেড।
খেলার হারজিত থাকে। উপভোগ্য লড়াই দেখার আশায় মাঠে ছুটে আসেন দর্শকরা। কিন্তু মঙ্গলবার ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে সেই লড়াইয়ের বিন্দুমাত্র আঁচ পাওয়া গেল না কোহলিদের খেলায়। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং—তিন বিভাগেই চূড়ান্ত হতাশ করেছে ‘টিম ইন্ডিয়া’। ম্যাচ শেষে ব্যর্থতার দায় কাঁধে নিয়ে ক্যাপ্টে কোহলি বলেন, ‘কতটা খারাপ খেলেছি তার বিশ্লেষণে যেতে চাই না। তবে অস্ট্রেলিয়া যোগ্য দল হিসেবেই জিতেছে। এখন ভুল শুধরে সিরিজে ঘুঁরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।’
গত কয়েক মাস ধরে ঘরের মাঠে কোহলি বাহিনী বাংলাদেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, শ্রীলঙ্কার মতো দুর্বল প্রতিপক্ষকে কার্যত ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়েছে। যা দেখে অনেকে ভেবেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে একদিনের সিরিজেও সেই সাফল্য ধরে রাখতে সফল হবেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা। কিন্তু সেটা যে ছিল ‘মধুচন্দ্রিমা’। অস্ট্রেলিয়ার মতো কঠিন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন দুর্বলতা সামনে চলে এল।
তবে এমন নয় যে ভারত প্রথমবার একদিনের ক্রিকেটে দশ উইকেটে হারল। এর আগে ১৯৮১ সালে মেলবোর্নে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে, ১৯৯৭ সালে ব্রিজটাউনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে, ২০০০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শারজায় দশ উইকেটে পরাস্ত হয়েছিল ‘মেন ইন ব্লু’। দেশের মাটিতে ২০০৫ সালে ইডেনে ‘টিম ইন্ডিয়া’কে প্রথমবার ১০ উইকেটে হারিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। তবে গত ১৫ বছরে ওয়ান ডে ক্রিকেটে ভারতকে এভাবে লজ্জায় পড়তে দেখা যায়নি। দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ের মঞ্চে মঙ্গলবার অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে কোহলি বাহিনী কার্যত অসহায় আত্মসমর্পণ করল। কোচ রবি শাস্ত্রী গর্ব করে বলেন, ভারতের বোলিং নাকি বিশ্বসেরা। আর সেই ‘সেরা’ বোলিংকে তুলোধনা করে ২৫৬ রানের টার্গেট তাড়া করতে নেমে অস্ট্রেলিয়ার দুই ওপেনার অ্যারেন ফিনচ ও ডেভিড ওয়ার্নার ২৫৮ রান যোগ করেন। একটা উইকেট ফেলতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যায় বুমরাহদের। ১৭টি বাউন্ডারি ও ৩টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ওয়ার্নার ১১২ বলে করেন অপরাজিত ১২৮ রান। ক্যাপ্টেন ফিনচের সংগ্রহ ১১৪ বলে অপরাজিত ১১০ রান। ১৩টি চার ও ২টি ছক্কাও বেরিয়েছে তাঁর ব্যাট থেকে।
ভারতের দুই তারকা পেসার মহম্মদ সামি (৭.৪-০-৫৮-০) ও যশপ্রীত বুমরাহ (৭-০-৫০-০) ওভার পিছু সাতের বেশি রান দিয়েছেন। শার্দুল ঠাকুর ৫ ওভারে ৪৩ রান দেওয়ার পর তাঁকে বসিয়ে দিতে বাধ্য হন ভারত অধিনায়ক। দুই স্পিনার কুলদীপ যাদব ও রবীন্দ্র জাদেজা উইকেট নেওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা চালান। কিন্তু ভাগ্যও এদিন সঙ্গে ছিল না ভারতের। ওয়ার্নার দু’বার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান। ফিনচও হাফ-চান্স দিয়েছিলেন। জোরালো লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার আঙুল না তোলায় হতাশ হয়ে পড়েন বিরাট। কথায় বলেন, বিনাশ কালে বুদ্ধি নাশ। বিরাট এদিন প্রথম একাদশ চয়ন এবং ব্যাটিং অর্ডার সাজানোর ক্ষেত্রে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিতে পারেননি।
টসে জেতার পর অজি ক্যাপ্টেন ফিনচ ফিল্ডিং নিতে দেরি করেননি। তিনি বুঝেছিলেন, এই পিচে রান তাড়া করা অনেক সহজ হবে। ঘরের মাঠে রোহিত শর্মা ওপেন করতে নেমে ১০ রানে স্টার্কের বলে আউট হওয়ার পর লোকেশ রাহুল ও শিখর ধাওয়ান ১২১ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। একটা সময় ভারতের স্কোর ছিল ১ উইকেটে ১৩৪। তখন মনে হয়েছিল, কোহলি বাহিনী সহজেই তিনশোর গণ্ডি টপকে যাবে। আচমকাই ৩০ রানের মধ্যে ভারতের চারটি উইকেটের পতন ঘটে। একে একে লোকেশ রাহুল (৪৭), শিখর ধাওয়ান (৭৪), বিরাট কোহলি (১৬), শ্রেয়াস আয়ার (৪) সাজঘরে ফিরে যান। ধাওয়ান বড় রান পেলেও মিডল অর্ডার সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ। ফলে লোয়ার অর্ডার আরও চাপে পড়ে যায়। ঋষভ পন্থ ও রবীন্দ্র জাদেজা ধাক্কা সামলে দলের রান দু’শোর উপরে নিয়ে যান। কিন্তু তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে জাদেজা (২৫) ও ঋষভ (২৮) আউট হন। শার্দুল ঠাকুর (১৩), কুলদীপ যাদব (১৭), মহম্মদ সামিরা (১০) দলের স্কোর আড়াইশো উপরে নিয়ে যান। তবে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে, এই পিচে তিনশো রানও ম্যাচ জেতার পক্ষে যথেষ্ট ছিল না। অস্ট্রেলিয়ার জয়ের ভিতটা আসলে গড়ে দিয়েছিলেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্স, রিচার্ডসনরা। প্রথমজন তিনটি ও পরের দু’জন দু’টি করে উইকেট পেয়েছেন। অ্যাডাম জাম্পা এদিন একটি উইকেট নিলেও তা দুর্মূল্য। কারণ, সেই উইকেট বিরাট কোহলির। উল্লেখ্য, এই নিয়ে চারবার তিনি ভারত অধিনায়ককে প্যাভিলিয়নে ফেরালেন।