বিমাসূত্রে ধনাগম হতে পারে। প্রেম-প্রণয়ে আনন্দ। কাজকর্মে অগ্রগতি ও সুনাম। ... বিশদ
শুরু করলেন ভারতের মাটিতে প্রথম দিন-রাতের টেস্ট দিয়ে। গ্যালারির উদ্দেশে পরিষ্কার বাংলায় শচীনের জিজ্ঞাসা, ‘কেমন আছো কলকাতা? ভালো আছো তো?’ একটু থেমে যোগ করলেন, ‘কলকাতা সফর মানেই আমার কাছে দারুণ রোমাঞ্চকর একটা ব্যাপার। এই শহরে পা রাখলেই যেন ইডেনের ফুরফুরে গন্ধ পাই আমি। ঐতিহাসিক গোলাপি বলের টেস্ট আয়োজনের মাধ্যমে আরও বর্ণময় হল ইডেনের ঐতিহ্য।’ পাশে বসে অনিল কুম্বলের সংযোজন, ‘এমন একটা অভিনব উদ্যোগ গ্রহণের জন্য সৌরভকে ধন্যবাদ। দাদা সত্যিকারের একজন কাজের মানুষই বটে। খেলোয়াড়ি জীবনের মতো ক্রিকেট প্রশাসক হিসেবেও শুরুতেই দারুণ চমক দিল দিন-রাতের টেস্ট আয়োজনের মাধ্যমে।’ কুম্বলেকে থামিয়ে দিয়ে হরভজন বলে উঠলেন, ‘আরে ও ছিল আমার প্রিয় অধিনায়ক। ওর ধারালো ক্রিকেট মস্তিষ্ক থেকে যেটা বেরবে, সেটাই সুপারহিট। আমি রোমাঞ্চিত।’ দারুণ উল্লসিত ২০০১ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ঐতিহাসিক টেস্ট জয়ের নায়ক ভিভিএস লক্ষ্ণণও। তাঁর কথায়, ‘ভারতে প্রচুর ক্রিকেট গ্রাউন্ড রয়েছে। কিন্তু ইডেন হচ্ছে বাকি সব মাঠের থেকে আলাদা।’
এরপর রঙিন ম্যাচের সিঁড়ি বেয়ে সোনালি স্মৃতির সরণিতে ফিরলেন চার প্রাক্তন নক্ষত্র। শচীন শোনালেন হরভজনকে নিয়ে এক অজানা তথ্য। লিটল মাস্টারকে সঞ্চালক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছিলেন ‘যখনই ভাজ্জির সঙ্গে তোমার দেখা হয়, তখনই তুমি ওকে গোপন তথ্য ফাঁস করার ভয় দেখাও।’ এবার ভাজ্জির দিকে তাকিয়ে শচীন বলে ওঠেন, ‘তা হলে আজ এই ঐতিহাসিক মঞ্চে বলেই ফেলি। সালটা ছিল ১৯৯৬। মোহালিতে নামার পর থেকেই সবাই বলছে, একটা নতুন ছেলে খুব ভালো অফ স্পিন করছে। অমনি আমি নেটে ডেকে নিলাম ছেলেটাকে। সে হচ্ছে আজকের ভাজ্জি। নেটে প্রতিটি ডেলিভারির পর আমার কাছে এগিয়ে এসে ও জিগ্যেস করছিল, কিছু বলছেন স্যার?’ হরভজনের এমন কাণ্ড দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন শচীন। রহস্যটা দূর হয়েছিল হরভজন জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর। রহস্যটা তাঁর কাছে ফাঁস করেছিলেন ভাজ্জি। শচীন বলেন, ‘একদিন আমি ভাজ্জিকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, সেদিন তুমি বারবার আমার কাছে এগিয়ে আসছিলে কেন? তখন ও আমাকে বলে, আপনিই তো আমাকে ডাকছিলেন মাথা নাড়িয়ে। তাই আমি এগিয়ে যাচ্ছিলাম আপনার কাছে।’ আসলে প্রত্যেক বল মোকাবিলার পর মাথা নাড়িয়ে হেলমেট ঠিক করাটা ছিল শচীনের বরাবরের অভ্যাস। বেচারা হরভজন তাতেই মনে করেছিলেন যে, শচীন বুঝি মাথা নাড়িয়ে তাঁকে ডাকছেন।
এরপর ইডেনে ১৯৯৩ সালে হিরো কাপের ফাইনালের স্মৃতিচারণাও করেন শচীন। সেই ম্যাচে অনিল কুম্বলের বিষাক্ত স্পিনে ওয়েস্ট ইন্ডিজ চুরমার হয়ে যায়। সেই প্রসঙ্গ টেনে শচীন বলেন, ‘একবার অনূর্ধ্ব-১৭ ঘরোয়া টুর্নামেন্টে খেলার সময় একজন আমাকে সাবধান করে দিয়েছি, ওই লম্বা ছেলেটার নাম অনিল কুম্বলে। ওকে ব্যাকফুটে খেললেই উইকেট নিয়ে চলে যাবে। তার প্রমাণ পেয়েছিলাম হিরো কাপের ফাইনালে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটসম্যানরা ভুল করে অনিলকে ব্যাকফুটে খেলতে গেল আর একের পর এক উইকেট হারাল।’ উল্লেখ্য, ফাইনালে ক্যারিবিয়ানদের বিরুদ্ধে ১২ রানে ৬ উইকেট নেন কুম্বলে। এরপর শচীনের পাল্টা তারিফ করতে গিয়ে কুম্বলে বলেন, ‘আমি ৬ উইকেট নিয়েছিলাম ঠিকই। কিন্তু ব্রায়ান লারার উইকেটটা নিয়েছিল শচীনই। লারা থাকলে আমরা সমস্যায় পড়ে যেতাম।’ শচীন তখন লাজুক মুখে হাসছেন। আর ইডেনে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে শচীন, শচীন... ঠিক কয়েক বছর আগের মতোই।
শচীন-কুম্বলের পাশের দুটি আসনে বসে রয়েছেন হরভজন-লক্ষ্মণ। অথচ ইডেনে তাঁদের সাফল্যের স্মৃতিচারণ হবে না, তা কখনও হয় নাকি! অবশ্যম্ভাবী ভাবে ফিরে এল ২০০১ সালের সেই মহাকাব্যিক টেস্টের প্রসঙ্গ। লক্ষ্ণণ বলেন, ‘সে দিন শচীন, সৌরভ ফিরে যাওয়ার পরে গ্যালারি প্রায় ফাঁকা হয়ে গিয়েছিল। ইডেন ভাবতেই পারেনি আমি ও রাহুল মিলে ৩৭৬ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তুলব। আজও সেই কথা মনে পড়লে, রোমাঞ্চ বোধ করি।’ শচীন বলেন, ‘ভাজ্জির ওই হ্যাটট্রিকের পরেই ম্যাচের মোড় ঘুরে যায়।’ লিটল মাস্টারকে থামিয়ে দিয়ে হরভজন বলে ওঠেন, ‘ভিভিএস ও রাহুল দুর্দান্ত ব্যাট করেছিল ওই টেস্টে। ওদের অবদানের কথা মাথায় রেখেও বলছি, সেই টেস্টে শচীনও কিন্তু তিনটি উইকেট নিয়েছিল।’ পিঙ্ক টেস্টের জন্য সেজে ওঠা গোলাপি ইডেন সহসা কিছুক্ষণের জন্য সোনালি হয়ে উঠেছিল চার প্রাক্তন কিংবদন্তির অতীতের ঝলমলে স্মৃতিচারণায়।