পুরনো রোগ চাগাড় দেওয়ায় দেহকষ্ট ভোগ করতে হতে পারে। তীর্থ ভ্রমণ ও ধর্মকর্মে আত্মিক তৃপ্তিলাভ। ... বিশদ
রাঁচি, ২০ অক্টোবর: ছক্কা হাঁকিয়ে সেঞ্চুরি। ছক্কা মেরেই ডাবল-সেঞ্চুরি। ধোনির শহরে রহিত-রাজ দেখে মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়া। ক্রিকেট ইতিহাসে এমন নজির হাতেগোনা। রেকর্ড ভাঙাই যে তাঁরা নেশা। এতদিন ‘হিটম্যান’এর ব্যাটিং বিক্রম দেখা গিয়েছে টি-২০ এবং ওয়ান ডে ফরম্যাটে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলতি টেস্ট সিরিজে ওপেনার হিসাবে রহিতের উত্থান উল্কার গতিকেও হার মানাবে। বিশ্বকাপের পর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্টে যাঁকে প্রথম একাদশে নেওয়ার যোগ্য বলেই মনে করেনি টিম ম্যানেজমেন্ট। এখন সেই রহিতের ফর্মের ফানুসে চড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ‘হোয়াইট ওয়াশ’ করার দিকে এগিয়ে চলেছে ‘টিম ইন্ডিয়া’।
সামনেও দিওয়ালি। তার আগে যেন রাঁচিতে রানের রংমশাল জ্বাললেন রহিত-রাহানে জুটি। চতুর্থ উইকেটে তাঁরা যোগ করেন ২৬৭ রান। রহিতের দুর্ধর্ষ ২১২ ও অজিঙ্কার অনবদ্য ১১৫ রানের সুবাদে প্রথম ইনিংসে ৯ উইকেটে ৪৯৭ রান তুলে ডিক্লেয়ার করে দেয় ভারত। জবাবে ব্যাট করতে ৯ রানে ২ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে দক্ষিণ আফ্রিকা। মহম্মদ সামি, উমেশ যাদবরা যেভাবে গতি ও বাউন্সের মিশেলে প্রতিপক্ষ দলের ব্যাটসম্যানদের উপর চাপ তৈরি করছিলেন, তাতে খারাপ আলোর জন্য দ্বিতীয় দিনের খেলা নির্ধারিত সময়ের কিছুটা আগে বন্ধ না হলে, আরও বিপাকে পড়ে যেত প্রোটিয়া বাহিনী। খাতাই খুলতে পারেননি দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার ডিন এলগার (০)। সামির বলে তিনি কট-বিহাইন্ড হন। কুইন্ট ডি’কক ৪ রানে উমেশের বাউন্সারে পরাস্ত হয়ে ক্যাচ দেন ঋদ্ধিমানের হাতে। ক্রিজে আছেন হামজা (০) ও ডু’প্লেসি (১)।
ভারত এদিন শুরু করে ৩ উইকেটে ২২৪ রান নিয়ে। রহিত অপরাজিত ছিলেন ১১৭রানে। রাহানে ৮৩ রানে ব্যাট করতে নামেন। প্রথম দিনে ব্যাটিং বিপর্যয়ে দলকে পথ দেখিয়েছিলেন দুই মুম্বইকর। বড় রানের ভিতটা তাঁরাই গড়ে দিয়েছেন। ১৬৯ বল খেলেই টেস্টে একাদশতম সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রাহানে। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দুরন্ত পারফরম্যান্স রাহানের মনোবল বাড়িয়ে দিয়েছিল। যার প্রতিফলন ঘটছে চলতি সিরিজেও। অনেক বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন রহিত। ভারতের রান রেট একটা সময় ধারাবাহিকভাবে সাড়ে চারের উপর বজায় ছিল মূলত রহিত-রাহানে জুটির দাপুটে ব্যাটিংয়ের জেরে। রাহানে ১৯২ বলে ১৭টি বাউন্ডারি ও একটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১১৫ বলে লিন্ডের ডেলিভারিতে কট বিহাইন্ড হয়ে মাঠ ছাড়েন। ১৯৯ বলে দেড়শোর গণ্ডি টপকে যান রহিত। চলতি সিরিজে দু’বার তিনি দেড়শোর বেশি রান করলেন। লাঞ্চের পর লুঙ্গি এনগিডির বলে ছক্কা হাঁকিয়ে কাঙ্খিত দ্বিশতরান পূর্ণ করেন রহিত। উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে ভারতের ড্রেসিংরুম। একদিনের ক্রিকেটে তিন তিনটি ডাবল-সেঞ্চুরি হাঁকালেও টেস্টে তাঁর এটাই প্রথম। শেষ পর্যন্ত চালিয়ে খেলতে গিয়ে রাবাদার বলে ২১২ রানে এনগিডির হাতে ধরা পড়েন। ২৮টি বাউন্ডারি ও ৬টি ওভার বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন ‘হিটম্যান’।
আরও অনেক রেকর্ড যোগ হল রহিতের নামের পাশে। তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক রান বিরাট কোহলির। ২০১৭-১৮ মরশুমে তিনটি শতরান সহ কোহলি পাঁচ ইনিংসে ৬১০ রান করেছিলেন। তার পরেই আছেন বীরেন্দ্র সেওয়াগ। ২০০৪-০৫ মরশুমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬টি ইনিংসে ৫৪৪ রান করেছিলেন বীরু। ২০০৭-০৮ মরশুমে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৬টি ইনিংসে সৌরভ গাঙ্গুলির সংগ্রহ ছিল ৫৩৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে চলতি সিরিজে দু’টি সেঞ্চুরি, একটি ডাবল-সেঞ্চুরি সহ রহিত ৪ ইনিংসে করে ফেললেন ৫২৯ রান। এই তালিকায় আপাতত তিনি চতুর্থ স্থানে থাকলেও দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করার সুযোগ পেলে সৌরভ, বীরুদের পিছনে ফেলে দিতে পারেন ‘হিটম্যান’।
ঘরের মাঠে রহিতের ব্যাটিং গড় সত্যিই ঈর্ষণীয়। ১৮টি ইনিংসে তিনি ১২৯৮ রান করেছেন। তার মধ্যে ছ’টি শতরান ও পাঁচটি অর্ধশতরানও রয়েছে। গত ন’টি ইনিংসে রহিত করেছেন অপরাজিত ৮২, অপরাজিত ৫১, অপরাজিত ১০২, ৬৫, অপরাজিত ৫০, ১৭৬, ১২৭, ১৪ ও ২১২। ব্যাটিং গড়ে তিনি পিছনে ফেলেছেন কিংবদন্তি ডন ব্র্যাডম্যানকেও। ঘরের মাঠে দশের বেশি ইনিংসে ডনের যেখানে ব্যাটিং গড় ছিল ৯৮.২২। রাঁচিতে ডাবল সেঞ্চুরির পর রহিতের ব্যাটিং গড় এখন ৯৯.৮৪।
রহিত আউট হওয়ার পর দ্রুত রান তোলেন রবীন্দ্র জাদেজা। তবে ঋদ্ধিমান সাহা বড় স্কোর করতে ফের ব্যর্থ। ২৪ রানে তিনি বোল্ড হন। অশ্বিনের সংগ্রহ ১৪ রান। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের তুলোধোনা করেন ভারতের দুই টেল এন্ডার উমেশ যাদব-মহম্মদ সামি (অপরাজিত ১০)। ১০ বলে ৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে উমেশ তোলেন ৩১ রান। জাদেজা আউট হন ৫১ রানে। দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের মধ্যে লিন্ডে চারটি ও রাবাদা পেয়েছেন তিনটি উইকেট।
স্কোরবোর্ড: প্রথম ইনিংসে ভারত-মায়াঙ্ক ক এলগার বো রাবাদা ১০, রহিত ক এনগিডি বো রাবাদা ২১২, পূজারা এলবিডব্লু বো রাবাদা ০, কোহলি এলবিডব্লু বো নর্তজে ১২, রাহানে ক ক্লাসেন বো লিন্ডে ১১৫, জাদেজা ক ক্লাসেন বো লিন্ডে ৫১, ঋদ্ধিমান বো লিন্ডে ২৪, অশ্বিন স্টাম্পড ক্লাসেন বো পিয়েট ১৪, উমেশ ক ক্লাসেন বো লিন্ডে ৩১, নাদিম অপরাজিত ১, সামি অপরাজিত ১০, অতিরিক্ত ১৭, মোট ১১৬.৩ ওভারে ৯ উইকেটে ৪৯৭। উইকেট পতন: ১২-১, ১৬-২, ৩৯-৩, ৩০৬-৪, ৩৭০-৫, ৪১৭-৬, ৪৫০-৭, ৪৬৪-৮, ৪৮২-৯। বোলিং: রাবাদা ২৩-৭-৮৫-৩, এনগিডি ২০-৫-৮৩-০, নর্তজে ২৪.৩-৫-৭৯-১, লিন্ডে ৩১-২-১৩৩-৪, পিয়েট ১৮-৩-১০১-১।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা: এলগার ক ঋদ্ধিমান বো সামি ০, ডি’কক ক ঋদ্ধিমান বো উমেশ ৪, হামজা ব্যাটিং ০, ডু’প্লেসি ব্যাটিং ১, অতিরিক্ত ৪, মোট ৫ ওভারে ২ উইকেটে ৯ রান। উইকেট পতন: ৪-১, ৮-২। বোলিং: সামি ১-১-০-১, উমেশ ১-০-৪-১, নাদিম ২-২-০-০, জাদেজা ১-০-১-০।