বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭৫ ও ১৮৯
পুনে, ১৩ অক্টোবর: রবীন্দ্র জাদেজার ডেলিভারি কেশব মহারাজের পায়ে লাগতেই এলবিডব্লুর জোরালো আবেদনে আউট দিয়ে দেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বাঁচার মরিয়া চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন মহারাজ। রিপ্লেতে স্পষ্ট হয়ে যায়, বলটা উইকেটেই লাগছিল। থার্ড আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের জন্য আর অপেক্ষা করেননি চেতেশ্বর পূজারা, রহিত শর্মারা। দ্বিতীয় টেস্টে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ইনিংস ও ১৩৭ রানে হারিয়ে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সিরিজ জেতার আনন্দে মেতে ওঠেন ভারতীয় ক্রিকেটাররা।
২০১৩ সাল থেকে ঘরের মাঠে টানা ১১টি টেস্ট সিরিজ জিতে অস্ট্রেলিয়াকে টপকে বিশ্ব রেকর্ড গড়ল ‘টিম ইন্ডিয়া’। ১৯৯৪ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া ধারাবাহিকভাবে ১০টি হোম সিরিজ জিতেছিল। একই রেকর্ডের তারা পুনরাবৃত্তি ঘটিয়েছিল ২০০৪-২০০৮ সালের মধ্যে। ৫০টি টেস্টে ভারতকে নেতৃত্ব দিয়ে কোহলি ৩০টি জয় উপহার দিলেন। তাঁর আগে আছেন মাত্র দু’জন অধিনায়ক। স্টিভ ওয়া ও রিকি পন্টিং। ৫০টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে তাঁরা যথাক্রমে ৩৭ ও ৩৫টি করে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন। কোহলি ২৩টি হোম ম্যাচের মধ্যে ১৭টিতে জয় পেয়েছেন। ২৭টি অ্যাওয়ে ম্যাচে তাঁর সাফল্যের সংখ্যা ১৩। নিঃসন্দেহে বলাই যায়, ভারতের সর্বকালের সেরা অধিনায়কদের অন্যতম কিং কোহলি। বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে এখনও অবধি অপরাজিত ভারত। চারটি ম্যাচ খেলে সবক’টিতেই জয় পেয়েছে কোহলি ব্রিগেড। ২০০ পয়েন্ট নিয়ে আপাতত শীর্ষে ‘টিম ইন্ডিয়া’। দ্বিতীয় স্থানে থাকা নিউজিল্যান্ডের থেকে ভারতের পয়েন্টের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ১৪০।
প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা ২৭৫ রানে অল-আউট হওয়ার পর সানডে-সাসপেন্স ছিল একটাই, ভারত কি ফলো-অন করাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে? সকালে দেখা যায়, ফের ব্যাট করতে নামছে প্রোটিয়া বাহিনী। তবে চা পানের বিরতির পর ভারতীয় দল যখন ক্রমশ জয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন বুঝতে অসুবিধা হয়নি, ফলো-অন করিয়ে ঠিকই করেছেন বিরাট। আসলে, প্রথম ইনিংসে ভারত ৬০১ রান তোলায় দক্ষিণ আফ্রিকা প্রবল চাপে পড়ে গিয়েছিল। সেই ধাক্কা আর সামলে উঠতে পারেননি ডু’প্লেসিরা। একটা ব্যাপার স্পষ্ট, ভারতের মাটিতে ‘টিম ইন্ডিয়া’র বোলারদের মোকাবিলা করার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার এই ব্যাটিং মোটেও তৈরি নয়।
দ্বিতীয় ইনিংসে ভারতকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন পেসার ইশান্ত শর্মা। প্রস্তুতি ম্যাচে সেঞ্চুরি করে যে আশার আলো দেখিয়েছিলেন আইদেন মার্করাম, তা টেস্ট সিরিজে এখনও ফুটিয়ে তুলতে তিনি ব্যর্থ। খাতা না খুলেই ইশান্তের বলে লেগ বিফোর হয়ে তিনি মাঠ ছাড়েন। তবে রিপ্লেতে দেখা গিয়েছে বলটি স্টাম্পের উপর দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছিল। রিভিউ না নেওয়ার খেসারত গুনতে হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে। টেস্ট দলে ঋদ্ধিমান সাহার যেন পুনর্জন্ম হল পুনেতে। দীর্ঘদিন চোটের কারণে জাতীয় দলের বাইরে থাকায় অনেকেই ভেবেছিলেন, বাংলার পাপালির পক্ষে টেস্টে কামব্যাক করা সহজ হবে না। কিন্তু ঋদ্ধি সুযোগের সদ্ব্ব্যবহার করে বুঝিয়ে দিলেন, কেন তিনি এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা উইকেটরক্ষক। প্রথম ইনিংসে উমেশের বলেই দুরন্ত ক্যাচ নিয়েছিলেন ডানদিকে স্লিপ পর্যন্ত ঝাঁপিয়ে। প্রশংসা বন্যায় তিনি ভেসে গিয়েছিলেন। রবিবার, সেই উমেশের বলেই দিনের ষষ্ঠ ওভারে ডে’ব্রুইনের ক্যাচটি বাঁদিকে বাজপাখির মতো ঝাঁপিয়ে যেভাবে তিনি তালুবন্দি করেন, তা দেখার পর মনে হয়েছে ঋদ্ধিমান সত্যিই ‘সুপারম্যান’। এখানেই থামেননি বাংলার উইকেটরক্ষকটি। ফাফ ডু’প্লেসির (৫) ক্যাচটিও কয়েকবারের চেষ্টায় তিনি ধরে তবেই দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। সঙ্গে সঙ্গে পুরস্কার হিসাবে ক্যাপ্টেনের পিঠ চাপড়ানিও পেয়ে গিয়েছেন ঋদ্ধি।
দক্ষিণ আফ্রিকার ওপেনার ডিন এলগার (৪৮) কিছুটা লড়াই করেন। তবে ম্যাচ বাঁচানোর পক্ষে তা যথেষ্ট ছিল না। চতুর্থ দিনে উইকেট থেকে ভালোই সুবিধা পেয়েছেন ভারতীয় স্পিনাররা। কুইন্টন ডি’কককে (৫) পরাস্ত করে বোল্ড করেন জাদেজা। টেম্বা বাভুমা ৩৮ রানে জাদেজার বলে স্লিপে রাহানের হাতে ধরা পড়েন। ৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন মুথুস্বামী। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ভেরনন ফিলান্ডার ও কেশব মহারাজ কোহলিদের পরিকল্পনা ভেস্তে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তবে এই জুটি মাথা তোলার আগেই আঘাত হানেন উমেশ। একই ওভারে তিনি পর পর তুলে নেন ফিলান্ডার (৩৭) ও রাবাদার (৪) উইকেট। কেশব মহারাজকে আউট করে জাদেজা দক্ষিণ আফ্রিকার কফিনে শেষ পেরেকটি পোঁতেন। ১৮৯ রানেই শেষ হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার দ্বিতীয় ইনিংস। তিনটি করে উইকেট নেন উমেশ-জাড্ডু। ব্যক্তিগত নৈপুণ্য নয়, দলগত সংহতির জোরে ঘরের মাঠে অশ্বমেধ ঘোড়ার মতো ছুটছে ‘টিম ইন্ডিয়া’।
স্কোরবোর্ড: ভারত (প্রথম ইনিংস)- ৬০১/৫ ডিক্লেয়ার।
দক্ষিণ আফ্রিকা (প্রথম ইনিংস) ২৭৫ ও (দ্বিতীয় ইনিংস)- মার্করাম এলবিডব্লু বো ইশান্ত ০, এলগার ক উমেশ বো অশ্বিন ৪৮, ডি’ব্রুইন ক ঋদ্ধিমান বো উমেশ ৮, ডু’প্লেসি ক ঋদ্ধিমান বো অশ্বিন ৫, বাভুমা ক রাহানে বো জাদেজা ৩৮, ডি’কক বো জাদেজা ৫, মুথুসামি ক রহিত বো সামি ৯, ফিলান্ডার ক ঋদ্ধিমান বো উমেশ ৩৭, কেশব এলবিডব্লু বো জাদেজা ২২, রাবাডা ক রহিত বো উমেশ ৪, নর্তজে অপরাজিত ০, অতিরিক্ত ১৩। মোট (৬৭.২ ওভারে) ১৮৯। পতন: ১-০, ২-২১, ৩-৭০, ৪-৭১, ৫-৭৯, ৬-১২৫, ৭-১২৯, ৮-১৮৫, ৯-১৮৯, ১০-১৮৯। বোলিং: ইশান্ত ৫-২-১৭-১, উমেশ ৮-৩-২২-৩, সামি ৯-২-৩৪-১, অশ্বিন ২১-৬-৪৫-২, জাদেজা ২১.২-৪-৫২-৩, রহিত ২-০-৪-০, কোহলি ১-০-৪-০।
ভারতীয় জয়ী ইনিংস ও ১৩৭ রানে।
ম্যাচের সেরা- বিরাট কোহলি।