বিদ্যার্থীদের বেশি শ্রম দিয়ে পঠন-পাঠন করা দরকার। কোনও সংস্থায় যুক্ত হলে বিদ্যায় বিস্তৃতি ঘটবে। কর্মপ্রার্থীরা ... বিশদ
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে ইনিংসের গোড়াপত্তক হিসাবে বহু ইতিহাস গড়েছেন ‘হিটম্যান’। কিন্তু পাঁচদিনের ক্রিকেটে কিছুতেই তিনি পায়ের তলার জমি শক্ত করতে পারছিলেন না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে রাজকীয় শতরানে রহিত শুধু সমালোচকদের মুখ বন্ধ করলেন না, সেই সঙ্গে টেস্ট দলে তাঁর জায়গা মজবুত হল। দিন তিনেক আগে বোর্ড সভাপতি একাদশের হয়ে ওপেন করতে নেমে রহিতকে যখন শূন্য হাতে মাঠ ছাড়তে দেখে নিন্দুকেরা বলেছিলেন, ‘ট্রেলর যদি এটা হয়, তাহলে বেশি প্রত্যাশা না করাই ভালো।’ বিশ্বকাপের পর থেকে সত্যিই সময়টা ভালো যাচ্ছিল না রহিত গুরুনাথ শর্মার। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট স্কোয়াডে থাকলেও প্রথম একাদশে সুযোগ পাননি। অজিঙ্কা রাহানে ও হনুমা বিহারির দুরন্ত ফর্ম মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে তাঁর কেরিয়ারকে প্রশ্নের মুখে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু রহিত যে হারতে জানেন না। টিম ম্যানেজমেন্ট যখন তাঁকে টেস্টে ওপেন করার কথা বলেন, তখন কালবিলম্ব না করে প্রস্তাব লুফে নিয়েছিলেন মুম্বইকর। তিনি জানতেন, ঝুঁকি নিতেই হবে। ব্যর্থ হলে চিরকালের জন্য তাঁর সামনে টেস্ট দলের দরজাও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর সাফল্য, যা নিশ্চিতভাবে ত্বরাণ্বিত করবে টেস্ট কেরিয়ারকে। নায়করা ঝুঁকি নিতে পছন্দ করেন। তাঁরা বড় মঞ্চকে বেছে নেন সেরা পারফরম্যান্স মেলে ধরার জন্য। স্কোরবোর্ড বলছে, দিনের নায়ক রহিত শর্মা।
মিডল অঅর্ডার ব্যাটসম্যান হিসাবে অনিয়মিতভাবে টেস্ট খেলার সুযোগ পেয়েছেন ‘হিটম্যান’। ৪৭টি ইনিংসে তাঁর সেঞ্চুরির সংখ্যা মাত্র তিন। বুধবার, তা বেড়ে হল চার। এই ইনিংস শুধু রহিতের কেরিয়ারের জন্য নয়, ভারতীয় দলের পক্ষে যথেষ্ট ইতিবাচক। কারণ, ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ভারত ২-০ ব্যবধানে টেস্ট সিরিজ জিতলেও ওপেনিং জুটির ব্যর্থতা টিম ম্যানেজেমেন্টের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। রহিত সেই সমস্যা অনেকটাই সমাধান করতে সফল। বিরাট কোহলি ম্যাচের আগের দিনই বলেছিলেন, ‘ওপেনার রহিতকে আমরা পর্যাপ্ত সুযোগ দেব। ওর স্বাভাবিক খেলা খেলুক। বীরেন্দ্র সেওয়াগের মতো ওর ব্যাটিং স্টাইল। আশা করব, রহিতও বীরুভাইয়ের মতোই টেস্টেও ওপেনার হিসাবে সফল হবে।’
একটা ইনিংস দিয়েই টেস্ট ওপেনার হিসাবে সেওয়াগের সঙ্গে রহিতের তুলনা টানা ঠিক হবে না। প্রারম্ভিক পর্বে প্রোটিয়া পেসারদের কিছুটা সমীহ করলেও, স্পিনারদের বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন সহজাত মেজাজে। ১৫৪ বলে রহিত শতরান পূর্ণ করার পর ক্যাপ্টেন কোহলির উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। ওপেনার রহিতের প্রথম ‘শো’ সুপারহিট হওয়ায় ভারত অধিনায়কের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার স্বপ্নকে আরও রঙিন করল।
রহিতের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দারুণ ব্যাট করলেন মায়াঙ্ক আগরওয়ালও। সেঞ্চুরি থেকে তিনি মাত্র ১৬ রান দূরে। বৃষ্টির কারণে চা পানের বিরতির পর আর খেলা শুরু করা যায়নি। বাকি দিনগুলিতেও ‘অসুর’ বৃষ্টি ম্যাচে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। প্রথম দিনের শেষে ভারতের স্কোর বিনা উইকেটে ২০২ রান। মায়াঙ্ক ১১টি বাউন্ডারি ও ২টি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ৮৪ রানে ও রহিত ১২টি চার ও ৫টি ছক্কার বিনিয়মে ১১৫ রান করে ক্রিজে আছেন। এখন যা পরিস্থিতি, তাতে দক্ষিণ আফ্রিকার সামনে প্রথম ইনিংসে রানের পাহাড় খাড়া করতে চলেছে ভারত।
টসে জেতার পর ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত জানাতে দেরি করেননি। তিনি বুঝে গিয়েছিলেন, এই ধরনের পিচে রানের ফুলঝুরি ছোটাবেন তাঁর ব্যাটসম্যানরা। সেটাই বাস্তবায়িত করেছেন মায়াঙ্ক-রহিত জুটি। প্রথম দিন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা কোনও ছাপ ফেলতে পারেননি।
স্কোরবোর্ড: প্রথম ইনিংসে ভারত-মায়াঙ্ক ব্যাটিং ৮৪, রহিত ব্যাটিং ১১৫, অতিরিক্ত ৩, মোট ৫৯.১ ওভারে বিনা উইকেটে ২০২।
বোলিং: ফিলান্ডার ১১.১-২-৩৪-০, রাবাদা ১৩-৫-৩৫-০, মহারাজ ২৩-৪-৬৬-০, পিয়েট ৭-১-৪৩-০, মুথুস্বামী ৫-০-২৩-০।