শরীর ভালো যাবে না। সাংসারিক কলহবৃদ্ধি। প্রেমে সফলতা। শত্রুর সঙ্গে সন্তোষজনক সমঝোতা। সন্তানের সাফল্যে মানসিক ... বিশদ
গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ সেপ্টেম্বর রাজ্য জিমনাস্টিকের আসর বসেছিল কলকাতার সল্টলেকে। প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ে অ্যাক্রোবাইট বিভাগে প্রথম স্থান পায় জাহান্নগর অঞ্চলের চার দুঃস্থ ছাত্র। তাদের নাম বাপন দেবনাথ, সায়ন দেবানাথ, রাজ দেবনাথ ও আকাশ দেবনাথ। বাপন পড়াশোনা করে কুরিচা কেডি হাইস্কুলে। বাকিরা পারুলিয়া কুলকামিনি হাইস্কুলের ছাত্র। একই সঙ্গে জাহান্নগরের তিন দুঃস্থ ছাত্রীও রাজ্য পর্যায়ে এবার তৃতীয় স্থান পেয়েছে। তারা হল প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ, অনামিকা দে ও স্নেহা দেবনাথ। তাদের মধ্যে প্রিয়াঙ্কা জাহান্নগর কুমারানন্দ হাইস্কুলের ছাত্রী। বাকিরা পারুলিয়া কুলকামেনি হাইস্কুলের পড়াশোনা করে।
জাহান্নগর অঞ্চলের এই সাত পড়ুয়া জিমন্যাস্টিক শিখতে যেত বেতপুকুরের কোচ অভিজিৎ দেবনাথের কাছে। অভিজিৎবাবু নিজেও ইন্টারন্যাশনাল খেলেছেন। বর্তমানে তিনি শিক্ষকতার পাশাপাশি জিমন্যাস্টিক শেখান। ওই পড়ুয়াদের অভিভাবকদের দাবি, কোচের একান্ত প্রচেষ্টায় আমাদের ছেলেমেয়েরা ন্যাশনালে অংশ নিতে যাচ্ছে। অভিজিৎবাবু বলেন, পড়ুয়াদের মধ্যে শেখার আগ্রহ আছে। আশাকরি ন্যাশনালেও ওরা চাম্পিয়ন হবে।
মঙ্গলবার ওই দুঃস্থ সাত পড়ুয়াকে জাহান্নগর পঞ্চায়েতের তরফ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পুজোয় প্রত্যেকে নতুন জামা কাপড় দেওয়ার পাশাপাশি অনুশীলন চালিয়ে যাওয়া জন্য তাদের আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা বলেন প্রধান সুভাষ ঘোষ। তিনি বলেন, ন্যাশনালে খেলতে যাওয়ার যাবতীয় খরচ আমি দেব। অনুশীলন চালিয়ে যেতে ওদের যাতে কোনও আসুবিধা না হয়, সে দিকেও নজর রাখব।
ছেলেমেয়েরা যে রাজ্য পর্যায়ে পদক নিয়ে আসবে, তা স্বপ্নেও ভাবতে পারেননি তাঁদের মা-বাবারা। চাম্পিয়ন দলের রাজ দেবনাথের বাড়ি জাহান্নগর অঞ্চলের ভাতশালা গ্রামে। সে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। তার বাবা অর্জুন দেবনাথ একটি পাওয়ারলুমে শ্রমিকের কাজ করেন। আরএক সদস্য সায়ন দেবনাথের বাড়ি বেতপুকুর এলাকায়। তার বাবাও পাওয়ারলুমের শ্রমিক। অর্জুনবাবু বলেন, সারাদিন পাওয়ারলুমের কাজ নিয়ে পড়ে থাকি। ছেলে নিজে থেকেই জিমন্যাস্টিকে ভর্তি হয়েছিল। তবে ও যে জেলাস্তর থেকে রাজ্য স্তরে গিয়ে প্রথম হবে, সেটা ভাবতেই পারিনি। এই সব শিখতে গেলে ভালো খাবার খাওয়ার প্রয়োজন। আমার সামান্য আয়ে ওই সব দিতে পারি না।
অন্যদিকে মেয়েদের সাফল্যে বেশি খুশি তাদের মায়েরা। জাহান্নগরের দুঃস্থ পরিবার থেকে রাজ্য পর্যায়ে তৃতীয় স্থান পেয়েছে তাঁদের মেয়েরা। তবে সেটাই বা কম কিসের। ওই দলের সদস্য স্নেহা দেবনাথ ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। বাবা সন্তোষ দেবনাথ পাওয়ার লুমের শ্রমিক। সন্তোষবাবু বলেন, আশা করি মেয়ে আগামী বছর প্রথম স্থান পাবে। মেয়েদের দলের মধ্যে সিনিয়র প্রিয়াঙ্কা দেবনাথ। সে জাহান্নগর কুমারানন্দ হাইস্কুলের নবম শ্রেণীতে পড়ে। তার মা প্রতিমা দেবনাথের চায়ের দোকান আছে মাগনপুর মোড়ে। বাবা গ্রামীণ রাস্তায় মোটর ভ্যান চালান। প্রিয়াঙ্কাকে জিমন্যাস্টিক শেখাতে আগ্রহী করে তোলেন প্রতিমাদেবী। তিনি বলেন, আমি জানতাম রাজ্য পর্যায়ে মেয়ে সাফল্য পাবে। প্রথম পর্যায়ে ওরা তৃতীয় স্থান পেয়েছে। আগামী বছর প্রথম স্থান পাবে বলে আশাবাদী।