কর্মক্ষেত্রে অশান্তি সম্ভাবনা। মাতৃস্থানীয় কারও শরীর-স্বাস্থ্যের অবনতি। প্রেমে সফলতা। বাহন ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ। সন্তানের বিদ্যা-শিক্ষায় উন্নতি।প্রতিকার— ... বিশদ
প্রথম টেস্টেই জোড়া সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে স্মিথ বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, কেন তাঁকে আধুনিক ক্রিকেটের ডন বলা হয়। বাকিটা ইতিহাস। প্রথম তিনটি ইনিংসে স্মিথের সংগ্রহ ১৪৪, ১৪২, ৯২। চোটের কারণে তিনি বাকি তিনটি ইনিংসে ব্যাট করতে পারেননি। চোট সারিয়ে মাঠে নেমেই ম্যাঞ্চেস্টারে সুদে-আসলে পুষিয়ে দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়ক। প্রথম ইনিংসে দাপটের সঙ্গে তিনি ডাবল সেঞ্চুরি (২১১) হাঁকান। দ্বিতীয় ইনিংসে করেন আরও ৮২ রান। যার সুবাদে ইংল্যান্ডকে চতুর্থ টেস্টে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া সিরিজে লিড নেওয়ার পাশাপাশি অ্যাসেজও দখলে রাখে।
ওভাল টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৮০ রানে স্মিথ আউট হন। দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩ রানে স্টোকসের হাতে ক্যাচ দিয়ে তিনি যখন মাঠ ছাড়ছিলেন, তখন যে দর্শকরা তাঁকে প্রথম টেস্টে বিদ্রুপে বিদ্ধ করেছিলেন, তাঁরাই উঠে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিনন্দন জানাচ্ছিলেন। ক্রিকেট হয়তো এই কারণেই এত সুন্দর খেলা! প্রকৃত ক্রিকেটপ্রেমী খেলোয়াড়দের কদর করতে জানেন। দেশ, কাল সেক্ষেত্রে কোনও অন্তরায় হয় না।
চারটি টেস্টে (সাত ইনিংসে) ৭৭৪ রান করে সুনীল গাভাসকরের রেকর্ড স্পর্শ করলেন স্মিথ। ১৯৭১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে অভিষেক সিরিজে চারটি টেস্ট খেলে সানিও ৭৭৪ রান করেছিলেন। তবে একটি অ্যাসেজ সিরিজে সর্বাধিক রানের মালিক আজও ডন ব্র্যাডম্যান। ১৯৩০ সালে ইংল্যান্ডের মাটিতে ব্যাট হাতে দাপিয়ে বেড়িয়েছিলেন তিনি। এই কীর্তি গড়তে ব্র্যাডম্যানেরও সাতটি ইনিংস লেগেছিল। করেছিলেন ৯৭৪ রান। তাঁর ব্যাটিং গড় ছিল ১৩৯.১৪। স্মিথ অবশ্য খুব পিছিয়ে নেই। ১১০.৫৭ ব্যাটিং গড়ে তিনি রানের মিনার তৈরি করেছেন ইংল্যান্ডের বোলারদের সামনে। ওভালে তিনি যদি আরও ভালো ব্যাট করতে পারলে, তাহলে ব্র্যাডম্যানের রেকর্ডের আরও কাছে পৌঁছানো যেত। টেস্টে ব্র্যাডম্যানের ব্যাটিং গড় ৯৯.৯৪। যা আজও কেউ স্পর্শ করতে পারেননি। তবে টেস্টে যখনই কেউ ভালো ব্যাটিং করেছেন, তাঁর সঙ্গে কিংবদন্তি ব্র্যাডম্যানের ছায়া খুঁজে বেড়িয়েছে ক্রিকেট দুনিয়া। ডনের পরেই অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বাধিক ব্যাটিং গড় স্মিথের। ৬৪.৫৬ গড়ে মাত্র ৬৮টি ম্যাচে তিনি ৬৯৭৩ রান করেছেন। তাই স্মিথের ব্যাটে মোহিত গোটা ক্রিকেট দুনিয়া। তিন ফরম্যাট ধরলে স্মিথের থেকে এগিয়ে রাখতেই হবে কোহলিকে। তবে শুধু টেস্টের অঙিনায় স্মিথই এই মুহূর্তে সেরার সেরা!
অ্যাসেজের এই সাফল্য স্মিথকে ফের টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ের সিংহাসন ফিরিয়ে দিয়েছে। ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলির থেকে তিনি ৩৪ পয়েন্টে এগিয়ে। বল বিকৃতিকাণ্ডে এক বছর নির্বাসিত হওয়ার পর অনেকেই ভেবেছিলেন, স্মিথের ক্রিকেট কেরিয়ারে যবনিকা পড়ল। কিন্তু ত্রিশ বছরের অস্ট্রেলিয়ার প্রাক্তন অধিনায়কের ভুল প্রমাণিত করলেন। এই সাফল্য হয়তো তাঁকে খুব দ্রুত হারানো নেতৃত্ব ফিরিতে দেবে।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘এবারের অ্যাসেজে স্মিথের ব্যাটিং মনে করিয়ে দিয়েছে ১৯৩০-এর ডন ব্র্যাডম্যানের কথা। সেই সিরিজে ব্র্যাডম্যান একা সিরিজ জিতিয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়াকে। আর এবার স্মিথের ব্যাটে ভর করেই অ্যাসেজ দখলে রাখতে সক্ষম হল অস্ট্রেলিয়া। না হলে দুই দলের মধ্যে খুব বেশি ফারাক চোখে পড়ল না।’
স্মিথ বলেছেন, ‘অ্যাসেজে এরকম একটা পারফরম্যান্স মেলে ধরতে পেরে গর্ববোধ করছি। প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসটাই টার্নিং পয়েন্ট। ১২২ রানে ৮ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরেও হাল ছাড়িনি। দুই ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে দলকে জয় এনে দিয়ে দারুণ তৃপ্তি অনুভব করেছিলাম। আঠারো মাস আমায় টেস্টের বাইরে থাকতে হয়েছিল। সেখান থেকে ঘুরে দাঁড়ানো মোটেও সহজ ছিল না। স্ত্রী, বন্ধুরা সব সময় মনোবল বাড়িয়েছে। ওদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তবে আমার বিশ্বাস ছিল, জাতীয় দলে ফিরে আবার সেরা পারফরম্যান্সটা মেলে ধরতে পারব।’
লন্ডনের দর্শকদের অভিনন্দন জানিয়ে স্মিথ আরও বলেছেন, ‘অন্তিম টেস্টে আরও বেশি রান করার সুযোগ ছিল। গত সাড়ে চার মাস ধরে নিজের সঙ্গে লড়াই করে গিয়েছি। বহু রাত বিনিদ্রায় কাটাতে হয়েছে। অ্যাসেজে ভালো কিছু করে দেখানোর তাগিদ নিয়েই বিশ্বকাপের পর একা ইংল্যান্ডে চলে এসেছিলান। আলাদা করে প্রস্তুতি নিয়েছিলাম। সিরিজ জিততে পারলে বেশি খুশি হতাম। তবে অ্যাসেজ দখলে রাখতে পেরে যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছি। আপাতত কয়েকটা সপ্তাহ শান্তিতে ঘুমোতে পারব।’