ঝগড়া এড়িয়ে চলার প্রয়োজন। শরীর স্বাস্থ্য বিষয়ে অহেতুক চিন্তা করা নিষ্প্রয়োজন। আজ আশাহত হবেন না ... বিশদ
(ক্রোমা-পেনাল্টি)
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: ইস্ট বেঙ্গলের স্প্যানিশ কোচ আলেজান্দ্রোর অবোধ গোঁয়ার্তুমিতে স্পর্ধার শতবর্ষে কলকাতা লিগে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ইস্ট বেঙ্গল। কিবু ভিকুনার দল পিয়ারলেসের কাছে লিগের প্রথম ম্যাচে হেরে যাওয়ায় লিগের লড়াইয়ে এগিয়ে যাওয়ার দারুণ সুযোগ পেয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। কিন্তু অবোধ গোঁয়ার্তুমির জন্য লিগের কোনও ম্যাচেই ঠিকমতো দল নামাচ্ছেন না আলেজান্দ্রো। যার ফলে শতবর্ষে লিগের প্রথম ছ’টি ম্যাচের মধ্যে দুটিতে হেরে এবং একটি ড্র করে খেতাবি লড়াই কঠিন করে তুললেন আলেজান্দ্রো।
দুই প্রধানের পর পিয়ারলেসই এবারের লিগের সবথেকে শক্তিশালী দল। পেমেন্ট সংক্রান্ত কোনও সমস্যা না থাকায় দলটি দারুণ ছন্দে রয়েছে। সোমবারের ম্যাচের আগে পাঁচ ম্যাচে দশ পয়েন্ট পেয়েছিল তারা। মোহন বাগান ম্যাচের পর এমন একটি দলের বিরুদ্ধে উল্টো- পাল্টা প্রথম একাদশ নামিয়ে পিয়ারলেসের কাজটি আলেজান্দ্রো অনেক সহজ করে দেন। সোমবার তিনি প্রথম একাদশে রাখেননি সামাদ আলি, বিদ্যাসাগর সিং, কোলাডোকে। বিদ্যাসাগর ও কোলাডো সাদার্নের বিরুদ্ধে শেষ ম্যাচে গোলও করেন। ডার্বিতে দু’জনকে না খেলানো নিয়ে তীব্র সমালোচনা হয়। সেই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে পিয়ারলেসের বিরুদ্ধে এই তিনজনকে প্রথম একাদশে রাখেননি। দ্বিতীয়ার্ধে তিনি এই তিনজনকে পরিবর্ত হিসাবে নামান। তখন ম্যাচ পিয়ারলেসের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ৭২ মিনিটে সামাদ নামার পরে ইস্ট বেঙ্গলের চাপ বাড়ে। ওই চাপের মোকাবিলায় পিয়ারলেস কোচ জহর দাস বিদেশি স্টপার কার্লন, ডিফেন্সিভ ব্লকার এডমন্ড, মনোতোষ চাকলাদার, দীপঙ্কর দাসদের নিয়ে বক্সের সামনে চক্রব্যূহ তৈরি করেন। ব্র্যান্ডন, লালরিনডিকা, কোলাডো, মার্কোস প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়দের পায়ের জঙ্গলে হারিয়ে গিয়ে গোলে শট নেওয়ার সময় ওপেন স্পেস পায়নি। সামাদ, কোলাডো, বিদ্যাসাগররা প্রথম থেকে মাঠে থাকলে ইস্ট বেঙ্গলকে এতটা নির্বিষ মনে হতো না। ওই তিনজনের বদলে যাঁরা প্রথম একাদশে ছিলেন তাঁরা পুরোপুরি ব্যর্থ। এফসিআইয়ে অলোক মুখার্জির হাত ধরে উঠে আসা ফুলচাঁদ হেমব্রম বোতলবন্দি করে রাখেন পিন্টু মাহাতোকে। প্রথমার্ধে মাত্র একবার পিন্টুর দৌড় দেখা যায়। তাঁর বাড়ানো বল থেকে রোনাল্ডো অলিভিয়েরা যে শট নেন তা অরূপ দেবনাথ রুখে দেন। গোটা ম্যাচে দারুণ কিপিং করেছেন অরূপ। পিয়ারলেসের ডিফেন্ডাররা ম্যাচের শেষ ১৪ মিনিটে প্রতিপক্ষকে পাঁচটি কর্ণার উপহার দিয়েছেন। সেটপিসে কোলাডো, লালরিনডিকা রালতের কম্বিনেশন ক্লিক করেনি অরূপের কিপিংয়ের জন্য। সেইসঙ্গে বক্সে ভেসে আসার বল ক্লিয়ার করতে বড় ভূমিকা নেন নেরোকা থেকে পিয়ারলেসে আসা কার্লন। এবং তাঁকে যথাসম্ভব সহায়তা করেছেন এডমন্ড। গোটা ম্যাচে ইস্ট বেঙ্গল ওপেন করেছে দুই বার। ৩৪ মিনিটে লালরিনডিকার কর্ণারে মার্কোসের হেড কার্লন ও অরূপকে পরাস্ত করে পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ম্যাচের টার্নিং পয়েন্ট এই ঘটনাটি। পেনাল্টি থেকে গোল করে ক্রোমা নায়ক হলেও ২৪ মিনিটে ম্যাচের সহজতম সুযোগটি নষ্ট করেন ক্রোমাই। প্রদীপ মোহনরাজ ইস্ট বেঙ্গল স্টপার মেহতাব সিংকে কাটিয়ে দারুণ বল দিয়েছিলেন ক্রোমাকে। পিয়ারলেসের বিদেশি স্ট্রাইকারটি বলটি গোলে ঠেলতে পারেনি।
দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি পেনাল্টি থেকে ইস্ট বেঙ্গলকে এগিয়ে দেন ক্রোমা। পেনাল্টি পাওয়ার আগে পিয়ারলেস কোচ লক্ষ্মীকান্ত মান্ডি ও পঙ্কজ মউলাকে নামিয়ে আক্রমণে জোর বাড়ান। পঙ্কজ মউলাকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে ক্রোমা সরে আসেন বাঁ-দিকে। কখনও পঙ্কজ, কখনও ক্রোমা বাঁ-প্রান্ত দিয়ে দৌড়ানোয় চাপে পড়ে যান কমলপ্রীত। এর মধ্যে ক্রোমা দু’বার দেহের দোলায় এবং গতিতে বোরহাকে মাটিতে ফেলে দিয়ে ইস্ট বেঙ্গল রক্ষণে নাভিঃশ্বাস তুলে দেন। এই চাপেই কমলপ্রীত বক্সে পঙ্কজ মউলাকে ফেলে দিলে পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোলটি করেন ক্রোমা (১-০)। এরপর লক্ষ্ণীকান্ত মান্ডির শট ক্রসপিসে লেগে ফিরে আসে। ১৯৮৯ সালে মোহন বাগানের শতবর্ষে পিছন থেকে এসে লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ইস্ট বেঙ্গল। এবার যেন উল্টো চিত্র দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা।