নয়াদিল্লি, ৯ আগস্ট: দীর্ঘ টালবাহানার পর অবশেষে ন্যাশনাল অ্যান্টি-ডোপিং এজেন্সির (নাডা) আওতাভুক্ত হতে বাধ্য হল বিসিসিআই। এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তের ফলে দেশের বাকি ক্রীড়াবিদদের মতো বিরাট কোহলিদের ডোপ টেস্ট করবে নাডা। এতদিন বিসিসিআই আলাদাভাবে বেসরকারি ল্যাব থেকে ক্রিকেটারদের ডোপ পরীক্ষা করাত। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের দাবি ছিল, সরকারের থেকে আমরা কোনও আর্থিক অনুদান নিই না। বিসিসিআই একটি স্বশাসিত সংস্থা। নাডার আওতায় আসার কোনও যুক্তি নেই। কিন্তু পৃথ্বী সাউ ডোপ পরীক্ষায় ধরা পড়ার পর নানা বিতর্ক তৈরি হয়েছে। বিসিসিআইয়ের ডোপ টেস্ট পদ্ধতি নিয়েও অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন। পৃথ্বী ভারতের উদীয়মান ক্রিকেটার। তাঁর সামনে উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। কিন্তু তাঁর ডোপ পরীক্ষায় ব্যর্থ হওয়াটা ভারতীয় ক্রিকেটের এক কলঙ্কিত অধ্যায়। এই ঘটনার পর থেকেই নাডায় আওতাভুক্ত হওয়ার জন্য বিসিসিআইয়ের উপর চাপ বাড়ছিল। শুক্রবার কেন্দ্রীয় ক্রীড়া সচিব রাধেশ্যাম ঝুলানিয়ার সঙ্গে দেখা করেন বিসিসিআইয়ের সিইও রাহুল জহুরি। হাজির ছিলেন নাডার ডিজি নবীন আগরওয়াল এবং বিসিসিআইয়ের জিএম (ক্রিকেট অপারেশন), সাবা করিম। সেখানেই লিখিতভাবে বোর্ডের পক্ষ থেকে রাহুল জহুরি নাডার আওতায় আসার সিদ্ধান্ত জানান। পরে ঝুলানিয়া বলেন, ‘এখন থেকে সব ক্রিকেটারের ডোপ পরীক্ষা করবে নাডা।’ আর এরই সঙ্গে বিসিসিআই স্বশাসিত সংস্থা থেকে ন্যাশনাল স্পোর্টস ফেডারেশন হিসাবে ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রণে চলে এলো। ঝুনালিয়া আরও বলেন, ‘ডোপ টেস্টের গুণমান নিয়ে বিসিসিআই তিনটি বিষয় উত্থাপিত করেছিল। আমরা আশ্বস্ত করেছি, ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড যেখানে যেমনভাবে চাইবে আমরা ডোপ পীরক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করব। তবে তার জন্য কিছু খরচ বহন করতে হবে বোর্ডকে। তবে বাকি জাতীয় স্পোর্টস ফেডারেশনের ক্ষেত্রে ডোপ টেস্টের যে পদ্ধতি ও মাপকাঠি আমরা মেনে চলি, বোর্ডের ক্ষেত্রে তার অন্যথা হবে না।’ বোর্ডের সিইও রাহুল জহুরি জানিয়েছেন, ‘যে দেশে বসবাস করি, সেখানকার আইন মেনে চলা উচিত। আমরা সেটাই করেছি।’
নাডার ‘হোয়্যারঅ্যাবাউট ক্লজ’ নিয়ে আপত্তি ছিল বিসিসিআইয়ের। মূলত ‘টিম ইন্ডিয়া’র তারকা ক্রিকেটারদের এই বিষয়ে সবচেয়ে বেশি আপত্তি ছিল। নাডার নিয়ম অনুযায়ী, বছরের শুরুতেই ক্রীড়াবিদদের তিনটি তারিখ উল্লেখ করে জানিয়ে দিতে হয় ডোপ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহের জন্য। সেই সময় যাতে মূলত খেলা না থাকে, সেটাও দেখা হয়। কোনও ক্রীড়াবিদ যদি সেই উল্লিখিত তারিখে ডোপ পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহে সাহায্য না করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া শাস্তি ঘোষণা করতে পারে নাডা। যেমনটা হয়েছিল, আন্দ্রে রাসেলের ক্ষেত্রে। তিনি ডোপ পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহে আগ্রহ না দেখানোয় এক বছরের জন্য নির্বাসিত হয়েছিলেন জামাইকান অ্যান্ডি ডোপিং এজেন্সির দ্বারা।
অনেকেই মনে করছেন, সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত বোর্ডের প্রশাসক কমিটির সবুজ সংকেত মেলার পরেই রাহুল জহুরি আজ, শুক্রবার ক্রীড়াসচিবের সঙ্গে দেখা করে নাডার অধীনে ডোপ পরীক্ষায় যোগ দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। এবার প্রশ্ন উঠছে, ভারতীয় বোর্ড কি তাহলে তথ্য জানার অধিকার আইনের আওতায় আসবে? সম্ভবত সেটাও হতে চলেছে।