গৃহে শুভকর্মের প্রস্তুতি ও ব্যস্ততা। হস্তশিল্পীদের নৈপুণ্য ও প্রতিভার বিকাশে আয় বৃদ্ধি। বিদ্যায় উন্নতি। ... বিশদ
ইংল্যান্ড ২২৬/২ (৩২.১ ওভার)
বার্মিংহাম, ১১ জুলাই: অস্ট্রেলিয়াকে ৮ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ইংল্যান্ড। রবিবার লর্ডসে খেতাবি লড়াইয়ে ইয়ন মরগ্যানরা মুখোমুখি হবেন নিউজিল্যান্ডের। দুই দলই অতীতে কখনও বিশ্বকাপ জিততে পারেনি। তাই এবার বিশ্ব ক্রিকেট পাবে নতুন চ্যাম্পিয়ন।
জয়ের জন্য ইংল্যান্ডের সামনে মাত্র ২২৪ রানের টার্গেট রেখেছিল অস্ট্রেলিয়া। ক্রিস ওকস, জোফ্রা আর্চারদের বোলিং দেখার পর অনেকেরই মনে হয়েছিল, লড়াইটা জমিয়ে দেবেন মিচেল স্টার্ক, প্যাট কামিন্সরাও। কিন্তু ফর্মে থাকা ইংল্যান্ডের দুই ওপেনার জ্যাসন রয় ও জনি বেয়ারস্টো অজি বোলারদের কোনও সুযোগ দেননি। ৫০ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর জ্যাসন রয় আরও চালিয়ে খেলায় দিশেহারা হয়ে পড়ে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়নরা। বেয়ারস্টো অবশ্য একটু ধরে খেলছিলেন। ওপেনিং জুটিতে তাঁরা তোলেন ১২৪ রান। চলতি বিশ্বকাপ চারবার সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ করে নজির গড়লেন রয়-বেয়ারস্টো জুটি।
অস্ট্রেলিয়াকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন স্টার্ক। তাঁর বলে বেয়ারস্টো ৩৪ রানে এলবিডব্লু হন। সেই সঙ্গে এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক উইকেট সংগ্রাহক হলেন স্টার্ক (২৭)। তিনি টপকে গেলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাকে (২৬)। তবে জ্যাসন রয় আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তের শিকার হন। প্যাট কামিন্সের বলে তাঁকে কট বিহাইন্ড দেন শ্রীলঙ্কান আম্পায়ার কুমার ধর্মসেনা। কিন্তু রিপ্লেতে দেখা যায় বলটি রয়ের ব্যাটেই লাগেনি। সেঞ্চুরি হাতছাড়া হওয়ায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে মাঠ ছাড়েন। এটা ঠিক, চলতি বিশ্বকাপে আম্পায়ারিং হচ্ছে খুবই নিম্নমানের।
ওপেনিং জুটির গড়ে দেওয়া ভিতের উপর দাঁড়িয়ে জো রুট ও অধিনায়ক ইয়ন মরগ্যান অনবদ্য ব্যাটিং করে ১০৭ বল বাকি থাকতে ইংল্যান্ডকে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে দেন। রুট ৪৯ ও মরগ্যান ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন। খেতাবের প্রবল দাবিদার হিসাবেই বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করেছিল ইংল্যান্ড। ঘরের মাঠে বিপুল দর্শক সমর্থন ও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে এই সহজ জয় অবশ্যই রবিবার কিউয়িদের বিরুদ্ধে মরগ্যান বাহিনীকে এগিয়ে রাখবে।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ইংল্যান্ডের ঘাড়ে বড় রান চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু তা ফলপ্রসূ হয়নি। ১৪ রানেই ৩ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকেন অজিরা। প্রথম ছ’ওভারে ক্রিস ওকস ও জোফ্রা আর্চার গতি ও স্যুইংয়ে রীতিমতো কম্পন ধরিয়ে দিয়েছিলেন বিপক্ষ দলের ব্যাটিংয়ে। ইংল্যান্ডকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন আর্চার। দ্বিতীয় ওভারে তাঁর প্রথম বলে লেগ বিফোর হন অ্যারন ফিনচ (০)। রিভিউ নিয়েও অস্ট্রেলিয়ার লাভ হয়নি। ডেভিড ওয়ার্নার (৯) শুরুটা ভালো করেও ওকসের রাইজিং ডেলিভারিতে পরাস্ত হয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে বসেন। পিটার হ্যান্ডসকম্ব (৪) চাপ নিতে পারেননি। ওকসের বল তাঁর ব্যাটে লেগে উইকেট ভাঙতেই এজবাস্টনের গ্যালারিতে উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন ইংল্যান্ডের সমর্থকরা।
স্টিভ স্মিথ ও অ্যালেক্স কেরি কিছুটা ব্যতিক্রমী। তাঁরা রুখে না দাঁড়ালে আরও খারাপ হাল হত অস্ট্রেলিয়ার। তবে চার রানে আর্চারের বলে কেরির থুতনি ফেটে যায়। ইংল্যান্ডের পেসারটির বলের গতি এতটাই বেশি ছিল যে, কেরির হেলমেট মাথা থেকে খুলে পড়ে যায়। রক্ত ঝরলেও ব্যান্ডেজ জড়িয়ে দারুণ ব্যাট করেন অস্ট্রেলিয়ার উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানটি। এবারের বিশ্বকাপে যথেষ্ট নজর কেড়েছেন কেরি। ৭০ বলে ৪৬ রান করে তিনি রশিদের বলে আউট হন। খাতা খুলতে পারেননি মার্কাস স্টোইনিস। তবে অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে স্টিভ স্মিথ মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল শুরুটা ভালো করলেও ২২ রানে আউট হন। তবে স্মিথ কিন্তু লড়াইয়ের ময়দান ছাড়েননি। তিনি বুঝেছিলেন, এই ধরনের পিচে ধরে খেললে টেল এন্ডারদের নিয়েও সম্মানজনক স্কোর খাড়া করা সম্ভব। মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ৫৯ রান যোগ তিনি। সেটাই অস্ট্রেলিয়াকে দু’শোর গণ্ডি পেরোতে সাহায্য করে। তবে ৪৮তম ওভারে বাটলারের ডাইরেক্ট থ্রোয়ে স্মিথ (৮৫) রান আউট না হলে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর আরও একটু ভদ্রস্থ হত। পরের বলেই কট বিহাইন্ড হন মিচেল স্টার্ক (২৯)। এক ওভার বাকি থাকতেই অল আউট হয়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের হয়ে ওকস ও রশিদ তিনটি করে এবং আর্চার নেন দু’টি উইকেট।
স্কোরবোর্ড
অস্ট্রেলিয়া: ডেভিড ওয়ার্নার ক বেয়ারস্টো বো ওকস ৯, অ্যারন ফিনচ এলবিডব্লু বো জোফ্রা আর্চার ০, স্মিথ রান আউট ৮৫, হ্যান্ডসকোম্ব বো ওকস ৪, অ্যালেক্স কেরি ক (পরিবর্ত) ভিনস বো রশিদ ৪৬, স্টোইনিস এলবিডব্লু বো রশিদ ০, ম্যাক্সওয়েল ক মরগ্যান বো জোফ্রা আর্চার ২২, কামিন্স ক রুট বো রশিদ ৯, স্টার্ক ক বাটলার বো ওকস ২৯, বেহরেনডর্ফ বো উড ১, নাথান লিয়ন নট আউট ৫। অতিরিক্ত ১৬। মোট (৪৯ ওভারে ১০ উইকেটে) ২২৩।
উইকেট পতন: ৪-১, ১০-২, ১৪-৩, ১১৭-৪, ১১৮-৫, ১৫৭-৬, ১৬৬-৭, ২১৭-৮, ২১৭-৯, ২২৩-১০।
বোলিং: ক্রিস ওকস: ৮-০-২০-৩, জোফ্রা আর্চার: ১০-০-৩২-২, বেন স্টোকস: ৪-০-২২-০, মার্ক উড: ৯-০-৪৫-১, প্লাঙ্কেট: ৮-০-৪৪-০, আদিল রশিদ: ১০-০-৫৪-৩।
ইংল্যান্ড: জ্যাসন রয় ক কেরি বো কামিন্স ৮৫, জনি বেয়ারস্টো এলবিডব্লু বো স্টার্ক ৩৪, জো রুট নট আউট ৪৯, ইয়ন মরগ্যান নট আউট ৪৫। অতিরিক্ত ১৩। মোট (৩২.১ ওভারে ২ উইকেটে) ২২৬ ।
উইকেট পতন: ১২৪-১, ১৪৭-২।
বোলিং: বেহরেনডর্ফ: ৮.১-২-৩৮-০, স্টার্ক: ৯-০-৭০-১, কামিন্স: ৭-০-৩৪-১, লিয়ন: ৫-০-৪৯-০, স্মিথ: ১-০-২১-০ , স্টোইনিস: ২-০-১৩-০।
ইংল্যান্ড আট উইকেটে জয়ী
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ: ক্রিস ওকস