আবেগের বশে কোনও কাজ না করাই ভালো। দাম্পত্য জীবনে বনিবনার অভাবে সংসারে অশান্তি বাড়বে। কর্মে ... বিশদ
শ্রীলঙ্কাকে হারানোর পর রহিত বলেন, ‘রেকর্ড গড়ার জন্য বিশ্বকাপে খেলতে আসিনি। এরকম চিন্তাধারা নিয়ে মাঠে নামি না। আমার পরিকল্পনা একটাই। ভালো ব্যাট করে শেষ পর্যন্ত উইকেটে টিকে থেকে দলকে জেতানো। যতক্ষণ ক্রিজে থাকি, সব সময় সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করি। কেরিয়ারের শুরুটা ততটা ভালো হয়নি। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে অনেক বড় ইনিংস মিস করেছিলাম। সেই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়েছি। এখন তাই তাড়াহুড়ো করে উইকেট ছুঁড়ে দিতে ভালো লাগে না। যে বল খেলার সেটা খেলি, যেটা ছেড়ে দেওয়ার বলে মনে হয়, ছেড়ে দিই। ইংল্যান্ডের পিচে নতুন বলে ব্যাট করা সব সময় কঠিন। তবে কিছু ওভার কাটিয়ে দিতে পারলে বড় রান পাওয়া যায়। সেটা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভালোই বুঝেছিলাম। এবারও একই কৌশল প্রয়োগ করে সাফল্য পাচ্ছি।’
রহিতের দুরন্ত ফর্ম ১৯৮৩ বিশ্বকাপের স্মৃতি উসকে দিচ্ছে ভারতীয় সমর্থকদের মনে। ‘হিটম্যান’এর সংস্পর্শে বদলে গিয়েছেন লোকেশ রাহুলও। এতদিন তিনি হাফ-সেঞ্চুরিতেই আটকে যাচ্ছিলেন। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে রহিতের সঙ্গে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন রাহুলও। বিশ্বকাপে ভারতের সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্বই দিতে হবে টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানদের। রহিত, রাহুল ছাড়াও ছন্দে আছেন বিরাট কোহলিও। পাঁচটি হাফ-সেঞ্চুরি করে ফেলেছেন ভারত অধিনায়ক। তবে বিশ্বকাপ যেন মজে রয়েছে রহিতের ব্যাটিংয়ে। বিপক্ষ দলের ক্রিকেটাররাও ভারতীয় ওপেনারটির প্রশংসায় পঞ্চমুখ। রহিত অবশ্য বলছেন, ‘সেঞ্চুরির কথা ভেবে খেলতে নামি না। প্রত্যেকদিন সকালে উঠে ভাবি, আজ আরও একটা ম্যাচ খেলতে নামব। নতুন করে শুরু করতে হবে। ঝুলিতে ক’টা সেঞ্চুরি রয়েছে সেটা ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করি। মনে মনে ঠিক করে নিই, প্রথম সেঞ্চুরিটা আজকেই করতে হবে। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মাঠে নামার আগে এরকমই চিন্তাভাবনা ছিল আমার।’ উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন রহিত। সেই সঙ্গে এক বিশ্বকাপে সর্বাধিক চারটি শতরানকারী কুমার সাঙ্গাকারার রেকর্ড স্পর্শ করেছিলেন তিনি। আর শ্রীলঙ্কা ম্যাচে আরও একটি শতরানের পর বিশ্বরেকর্ড গড়ে ফেলেছেন ভারতীয় ওপেনারটি।
অনেক তারকার এটাই শেষ বিশ্বকাপ। তার মধ্যে অন্যতম শ্রীলঙ্কার পেসার লাসিথ মালিঙ্গা। ভারতের বিরুদ্ধে কেরিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচটি খেলে ফেললেন তিনি। আইপিএলে মুম্বই ইন্ডিয়ান্সে রহিত শর্মার নেতৃত্বে খেলেছেন মালিঙ্গা। ফলে একে অপরকে খুব ভালোই চেনেন। যদিও মালিঙ্গা বিদায়ী বিশ্বকাপ ম্যাচে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। ১০ ওভারে ৮১ রান দিয়ে তিনি নেন মাত্র একটি উইকেট। তবুও রহিতের চোখে মালিঙ্গা বিশ্বের অন্যতম ভয়ঙ্কর পেসার। তিনি বলেন, ‘এই ম্যাচের পারফরম্যান্স দিয়ে মালিঙ্গাকে বিচার করব না। ও আমার চোখে চ্যাম্পিয়ন বোলার। ওর মতো ম্যাচ উইনার কম দেখেছি। আইপিএলে ওকে যখনই দায়িত্ব দিয়েছি, তখনই ও সেটা সাফল্যের সঙ্গে পালন করেছে।’
রহিতের দুরন্ত ব্যাটিংয়ের প্রশংসায় পঞ্চমুখ শচীন তেন্ডুলকর। তিনি বলেছেন, ‘অনবদ্য ব্যাটিং করছে রহিত। বরাবরই ওর খেলা দেখতে ভালো লাগে। তবে একই বিশ্বকাপে পাঁচটি শতরান করা মুখের কথা নয়। সেঞ্চুরির হ্যাটট্রিকও করে ফেলল ও। দু’টি ম্যাচ এখনও বাকি। তার আগে পাঁচ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে রহিত যেভাবে বিশ্বরেকর্ড গড়ল, তাতে মনে হচ্ছে ওকে সহজে থামানো যাবে না। লোকেশ রাহুলও অনবদ্য ব্যাটিং করছে। চার নম্বর থেকে ওকে যখন ওপেনার হিসাবে তুলে আনা হয়েছিল, তখন অনেকেই নানা মন্তব্য করেছিলেন। আমার মনে হয়, তাঁদের জন্য রাহুলের এই শতরানের ইনিংসটাই জবাবের জন্য যথেষ্ট।’ বীরেন্দ্র সেওয়াগ বলেছেন, ‘আমার রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা যেমন বাড়ে, তেমনই বিশ্বকাপে রহিতের সেঞ্চুরির মাত্রা বেড়ে চলেছে। ও দুরন্ত ফর্মে রয়েছে। সেমি-ফাইনালে এটা ধরে রাখতে পারলে, আমরাই ফাইনাল খেলব।’
রহিত আর রেকর্ড এখন যেন সমার্থক। একদিনের ক্রিকেটে তিনটি দ্বিশতরানের কীর্তি তাঁর দখলে। টি-২০ ক্রিকেটেও সর্বাধিক সেঞ্চুরি তিনিই হাঁকিয়েছেন। তবে ‘হিটম্যান’এর ওডিআই কেরিয়ারের প্রথম পর্ব মোটেও চমকপ্রদ ছিল না। আপশোসের কথা হল, সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রহিত যতটা সফল, টেস্টে ততটাই ব্যর্থ। তিনি পাঁচদিনের ক্রিকেটে বেশ কয়েকবার জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু ভারতীয় টেস্ট দলে পায়ের তলার জমি মজবুত করতে পারেননি।