উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
ম্যাঞ্চেস্টার, ১৬ জুন: সাতে-সাত! বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মোট সাতবারের সাক্ষাতে অল-উইন রেকর্ড অক্ষুণ্ণ রাখল ভারত। রবিবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে বৃষ্টি বিঘ্নিত ম্যাচে কোহলি বাহিনী ৮৯ রানে দুরমুশ করল সরফরাজদের। সেই সঙ্গে দু’বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে হারের মধুর বদলা নিল ‘মেন ইন ব্লু’। চার ম্যাচে সাত পয়েন্ট নিয়ে ভারতের সেমি-ফাইনালে ওঠার পথ আরও প্রশস্ত হয়ে গেল।
পাক-বধের নায়ক রহিত শর্মা। তারকারা বরাবরই বড় মঞ্চে পারফর্ম করতে পছন্দ করেন। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ থেকেই ছন্দে আছেন রহিত। পাকিস্তানকে দেখে রানের খিদে যেন তাঁর আরও বেড়ে যায়। শুরু থেকেই রণংদেহী মেজাজে ছিলেন ভারতীয় ওপেনারটি। ৮৫ বলে একদিনের ক্রিকেটে ২৪তম শতরান পূর্ণ করেন ‘হিটম্যান’। এবারের বিশ্বকাপে এটি তাঁর দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ১১৩ বলে চোদ্দটি বাউন্ডারি ও তিনটি ওভার বাউন্ডারির সাহায্যে ১৪০ রানে হাসান আলির বলে শর্ট ফাইন লেগে রিয়াজের হাতে ধরা পড়েন রহিত। তবে পাক ফিল্ডাররা যদি দু’বার সহজ রান আউট করার সুযোগ হাতছাড়া না করতেন, তাহলে অনেক আগেই ড্রেসিং-রুমে ফিরতে হত তাঁকে। চোটের কারণে শিখর ধাওয়ান না খেলায় রহিতের সঙ্গে ওপেন করতে নেমেছিলেন লোকেশ রাহুল। যথেষ্ট চাপ ছিল তাঁর উপর। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতি পূর্ণ মর্যাদা রেখে ৭৮ বলে ৫৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন লোকেশ। ওপেনিং জুটিতে রহিতের সঙ্গে তিনি যোগ করেন ১৩৬ রান।
মেঘাচ্ছন্ন আবহাওয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভারতের উপর শুরুতেই চাপ বাড়াতে চেয়েছিল পাকিস্তান। উইকেটে আর্দ্রতা বেশি রয়েছে, এই ভেবে টসে জিতে আগে ফিল্ডিং নেওয়াটা শেষ পর্যন্ত ব্যুমেরাং হয়ে ফিরে আসে পাকিস্তানের কাছে। দলের তারকা পেসার মহম্মদ আমির শুরুতে উইকেট নেওয়ার মরিয়া চেষ্টা করেন। কিন্তু প্রারম্ভিক পর্বে বাড়তি স্যুইং আদায় করে নিতে না পারায় তাঁকে মোকাবিলা করতে তেমন সমস্যা হয়নি ভারতীয় ওপেনারদের।
দারুণ ব্যাট করেছেন ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলিও। দ্বিতীয় উইকেটে রহিতের সঙ্গে তিনি ৯৮ রানের পার্টনারশিপ গড়ে তোলেন। তখনই বোঝা গিয়েছিল, রানের পাহাড় খাড়া করতে চলেছে ‘মেন ইন ব্লু’। রহিত আউট হওয়ার পর নামেন হার্দিক পান্ডিয়া। মাত্র ১৯ বল খেলে হার্দিক করেন ২৬ রান। তবে কোহলি একদিক ধরে রেখে দলের স্কোর সাড়ে তিনশোয় পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা চালান। তবে মহেন্দ্র সিং ধোনি (১) নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। শেষ দিকে কোহলি একাই যেন লড়ছিলেন। আচমকাই বৃষ্টি নামায় ৪৬.৪ ওভারে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। মিনিট পনেরো পর ম্যাচ শুরু হলে আমিরের বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে কট বিহাইন্ড হন কোহলি (৭৭)। যদিও রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ব্যাটেই লাগেনি। আম্পায়ারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা না করে কোহলি কেন মাঠ থেকে বেরলেন, তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। পরে ড্রেসিং-রুমে ফিরে টিভি রিপ্লে দেখে ক্ষোভে ও হতাশায় ফেটে পড়েন বিরাট। সাফল্যের দিনেও ভারতের মিডল অর্ডারের ব্যর্থতা বেশ চোখে পড়েছে। বিজয় শঙ্কর (১৫), কেদার যাদব (৯) একটু চালিয়ে খেললে সাড়ে তিনশো সহজেই উঠত।
ম্যাচটা যে হাত থেকে বেরিয়ে গিয়েছে, সেটা বুঝে গিয়েছিলেন পাক ক্রিকেটাররা। শুরুতে বেশ ভালো বল করেন দুই পেসার ভুবনেশ্বর কুমার ও যশপ্রীত বুমরাহ। কিন্তু পঞ্চম ওভারে ভুবি হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পান। চতুর্থ বল করেই তিনি বাধ্য হন মাঠ ছাড়তে। ওভার শেষ করার দায়িত্ব পড়ে বিজয় শঙ্করের কাঁধে। বিশ্বকাপে তাঁর প্রথম ডেলিভারিতে ইমাম-উল-হককে (৭) এলবিডব্লু করে ভারতকে প্রথম সাফল্যটি এনে দেন বিজয়। তবে প্রাথমিক ধাক্কা সামলে ফখর জামান ও বাবর আজম কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিলেন। দ্বিতীয় উইকেটে ফখর ও বাবর ১০২ রান তুলে ফেলায় ভারত অধিনায়কের পালে চিন্তায় ভাঁজ চওড়া হচ্ছিল। ঠিক তখনই স্পিনার কুলদীপ যাদব পরপর বাবর আজম (৪৮) ও ফখর জামনের (৬২) উইকেট তুলে নিয়ে হাসি ফেরান কোহলির মুখে। ম্যাচেও জাঁকিয়ে বসে ভারত। কুলদীপের দেখানো পথে পাকিস্তানের উপর চাপ বাড়ান হার্দিক পান্ডিয়া। তিনি ফেরান মহম্মদ হাফিজ (৯) ও শোয়েব মালিককে (০)। অধিনায়ক সরফরাজ করেন মাত্র ১২ রান। ফের বৃষ্টি হওয়ায় ডাকওয়ার্থ-লুইস নিয়মে পাকিস্তানের টার্গেট দাঁড়ায় ৪০ ওভারে ৩০২ রান। কিন্তু পাক ব্যাটসম্যানদের লড়াই ২১২/৬ রানেই থেমে যায়। ছবি: এএফপি