উচ্চতর বিদ্যায় সাফল্য আসবে। প্রেম-ভালোবাসায় আগ্রহ বাড়বে। পুরনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাতে আনন্দলাভ হবে। সম্ভাব্য ক্ষেত্রে ... বিশদ
রহিতের ঝুলিতে রয়েছে একদিনের ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরি। রবিবার ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাকিস্তানের বোলারদের যেভাবে তিনি তুলোধনা করেছেন, তাতে চতুর্থ দ্বিশতরান করে ফেললে অবাক হওয়ার মতো কিছু ঘটত না। রহিতের একদিনের ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি (২০৯) অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ২ নভেম্বর। দ্বিতীয় দ্বিশতরান (২৬৪) ইডেনে ২০১৪ সালে ১৩ নভেম্বর শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে। এটাই একদিনের ক্রিকেটে সর্বাধিক রান। তৃতীয় ডাবল সেঞ্চুরিও শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের ১৩ ডিসেম্বর মোহালিতে।
ভারত-পাকিস্তান মহারণের দিকে নজর ছিল গোটা ক্রিকেট দুনিয়ার। বৃষ্টির আশঙ্কা উড়িয়ে নির্ধারিত সময়েই ম্যাচ শুরু হয়। কিন্তু পাকিস্তান টসে জিতে প্রথম ফিল্ডিং নেওয়ায় ভারতীয় সমর্থকরা কিছুটা হলেও আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। আসলে পাক পেসার মহম্মদ আমির ওভারকাস্ট কন্ডিশনে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারতেন। দু’বছর আগে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে আমির একাই তুলে নিয়েছিলেন ভারতের তিন টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান, রহিত শর্মা ও বিরাট কোহলির উইকেট। যে কারণে সেবার ফাইনালে ভারতকে হারতে হয়েছিল।
আমির এদিন প্রথম ওভারে লোকেশ রাহুলের বিরুদ্ধে মেডেন নিলেও, রহিত শর্মা কিন্তু শুরু থেকেই ছিলেন স্বকীয় মেজাজে। ‘হিটম্যান’এর ব্যাটিং দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, শচীন তেন্ডুলকের পরামর্শ যেন তাঁর কানে পৌঁছে গিয়েছে। শচীন বলেছিলেন, পাক বোলারদের সমীহ করলে চলবে না। আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে হবে। আমির এক প্রান্ত দিয়ে আঁটসাঁট বোলিং করলেও, রহিত চালিয়ে খেলায় হাসান আলি চাপে পড়ে যান। মাত্র ৩৪ বলে হাফ-সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন রহিত। এটি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের দ্রুততম হাফ-সেঞ্চুরি। চোটের কারণে দীর্ঘদিনের সঙ্গী শিখর ধাওয়ান না থাকায় রহিতকে এদিন ওপেন করতে হয় লোকেশ রাহুলের সঙ্গে। যদিও প্রত্যাশা ছাপিয়ে অনবদ্য ব্যাটিং নৈপুণ্যের ছাপ ফুটিয়ে তুলতে সফল হয়েছেন তিনি। রাহুলের আত্মবিশ্বাস রহিতকে চালিয়ে খেলতে যথেষ্ট অনুপ্রাণিত করেছে।
বিশ্বকাপে দারুণ ছন্দে আছেন রহিত। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ১২২ রানে অপরাজিত থেকে ভারতকে জয় এনে দিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে করেছিলেন ৫৭ রান। তবে রবিবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে হাইভোল্টেজ ম্যাচে তাঁর ১৪০ রানের ইনিংসটা নিঃসন্দেহে ভারতীয় সমর্থকদের বিপুল আনন্দ দিয়েছে। একদিনের ক্রিকেটে ২৪তম শতরান পূর্ণ করতে রহিতের লেগেছে ৮৫টি বল। এটি তাঁর কেরিয়ারের তৃতীয় দ্রুততম শতরানও। ২০১৮ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে ৮২ বলে এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৮৪ বলে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন। এবারের বিশ্বকাপে এখনও অবধি সর্বাধিক রান করেছেন অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক অ্যারন ফিনচ। তাঁর সংগ্রহ ৩৪৩ রান। ফিনচের পরেই আছেন রহিত শর্মা। তিনি করেছেন ৩১৯ রান।
পাক পেসার হাসান আলিকে তুলোধনা করেন রহিত। তিনি হাসানের ২৬টি বলের মোকাবিলা করে ২টি ছক্কা ও পাঁচটি চারের সাহায্যে ৪১ রান করেন। শাদাব খানের ২৭ বল খেলে রহিত করেন ৩৪ রান। রহিতের বিরুদ্ধে ওয়াহাব রিয়াজ ২৩ বলে ৩২ রান ব্যয় করেন। তবে পাক পেসার মহম্মদ আমির কিন্তু রহিতকে চাপে রেখেছিলেন। আমিরের আটটি বল খেলে ভারতীয় ওপেনারটি মাত্র পাঁচ রান করেন। শট চয়নের ক্ষেত্রেও রহিত যথেষ্ট মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে গিয়েছেন। তিনি সব থেকে বেশি রান যোগ করেছেন ব্যাক অব দ্য লেংথ বলে। ২১টি ডেলিভারি মোকাবিলা করে রহিত করেন ৩৪ রান। ৬টি শর্ট বলে তিনি তোলেন ১৯ রান। রহিতের অন্যতম পছন্দের শট হল কাট। মাত্র ১৪টি কাট শটে রহিত যোগ করেছেন ৩০ রান। পুল শট খেলে রহিত তোলেন ৮ বলে ২৮ রান। ম্যাচের সময় যত গড়িয়েছে রহিত ক্রমশ খোলস ছেড়ে বেরিয়েছেন। হাসান আলির বলে রহিতের একটি আপার কাটে মারা ছক্কা অনিবার্যভাবে মনে করিয়ে দেয় শচীনের মারা শোয়েব আখতারের বলে আপার কাটে হাঁকানো সেই ক্ল্যাসিকাল ওভার বাউন্ডারিকে। উল্লেখ্য, হাসানের তুলনায় শোয়েবের বলের গতি ছিল অনেক বেশি।
সীমিত ওভারের ক্রিকেটে রহিত যতটা সফল, টেস্ট ক্রিকেটে ঠিক ততটাই দুর্নাম রয়েছে। আর সেই কারণেই তাঁর ক্রিকেট কেরিয়ারের বৃত্তটা যেন অপূর্ণ রয়েই গিয়েছে। তবে দু’বছর আগেও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির আসরে রহিত অনবদ্য ব্যাটিং করেছিলেন। ইংল্যান্ডের মাটিতে বরাবরই ভালো খেলেন রহিত। বিশ্বকাপেও তিনি দুরন্ত ফর্ম ধরে রাখতে সফল।
ভারত-পাক স্কোরবোর্ড
ভারত: লোকেশ ক বাবর বো রিয়াজ ৫৭, রহিত ক রিয়াজ বো হাসান ১৪০, কোহলি ক সরফরাজ বো আমির ৭৭, হার্দিক ক বাবর বো আমির ২৬, ধোনি ক সরফরাজ বো আমির ১, বিজয় অপরাজিত ১৫, কেদার অপরাজিত ৯, অতিরিক্ত ১১, মোট ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩৩৬।
উইকেট পতন: ১৩৬-১, ২৩৪-২, ২৮৫-৩, ২৯৮-৪, ৩১৪-৫।
বোলিং: আমির ১০-১-৪৭-৩, হাসান ৯-০-৮৪-১, ওয়াহাব ১০-০-৭১-১, ইমাদ ১০-০-৪৯-০, শাদাব ৯-০-৬১-০, শোয়েব ১-০-১১-০, হাফিজ ১-০-১১-০।
পাকিস্তান: ইমাম-উল-হক এলবিডব্লু বো শঙ্কর ৭, ফখর জামান ক চাহাল বো কুলদীপ ৬২, বাবর আজম বো কুলদীপ ৪৮, হাফিজ ক শঙ্কর বো হার্দিক ৯, সরফরাজ বো শঙ্কর ১২, শোয়েব মালিক বো হার্দিক ০, ইমাদ অপরাজিত ৪৬, শাদাব খান অপরাজিত ২০, অতিরিক্ত ৫, মোট ৪০ ওভারে ৬ উইকেটে ২১২।
উইকেট পতন: ১৩-১, ১১৭-২, ১২৬-৩, ১২৯-৪, ১২৯-৫,
১৬৫-৬। বোলিং: ভুবনেশ্বর ২.৪-০-৮-০, বুমরাহ: ৮-০-৫২-০, শঙ্কর: ৫.২-০-২২-২, হার্দিক: ৮-০-৪৪-২, কুলদীপ: ৯-১-৩২-২, চাহাল: ৭-০-৫৩-০। ভারত জয়ী ৮৯ রানে (ডিএল মেথডে) ম্যাচের সেরা-রহিত।