বিদ্যায় অধিক পরিশ্রম করতে হবে। ব্যবসায় যুক্ত ব্যক্তির পক্ষে দিনটি শুভ। প্রেম-প্রীতিতে আগ্রহ বাড়বে। নতুন ... বিশদ
নয়াদিল্লি, ১৩ মার্চ: ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ২-৩ ব্যবধানে ওয়ান ডে সিরিজ হেরে বিশ্বকাপের আগে জোর ধাক্কা খেল ভারত। যদিও প্রথম দু’টি ম্যাচ জেতার পর মনে হয়েছিল বিরাট কোহিলিরাই হাসতে হাসতে সিরিজটা জিতবেন। কিন্তু তৃতীয় ম্যাচে দারুণ কামব্যাক করে অজি ব্রিগেড। সাফল্য ধরে রেখে চতুর্থ ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে রেকর্ড জয় ছিনিয়ে নিয়ে সিরিজে সমতা ফেরান খাওয়াজারা। আর সেই ‘জোশ’ নিয়ে অস্ট্রেলিয়া পঞ্চম ম্যাচেও বাজিমাত করল। বুধবার ফিরোজ শাহ কোটলায় কোহলি বাহিনীকে ব্যাটে-বলে টেক্কা দিয়ে ৩৫ রানে জয় ছিনিয়ে নেয় ক্যাঙ্গারু বাহিনী। ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে গিয়েও ‘টিম ইন্ডিয়া’কে এভাবে সিরিজ ‘উপহার’ দিতে দেখে অনেকেই বিস্মিত। প্রাক্তন ক্রিকেটাররা হতাশ ভারতীয় দলের রণকৌশল নিয়েও। প্রশ্ন উঠছে, আদৌ কি বিশ্বকাপের জন্য তৈরি কোহলি ব্রিগেড? প্রাক্তন ক্রিকেটার সুনীল গাভাসকরের মতে, দল নিয়ে বেশি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়েই ডুবল ভারত। সিরিজ পকেটে পুরে ফেলার পরেই ঝুঁকি নেওয়া উচিত ছিল। অনেকে আবার লোকেশ রাহুলকে না খেলানো নিয়েও কোচ রবি শাস্ত্রীর সমালোচনা করেছেন।
উসমান খাওয়াজার দুরন্ত শতরান ও পিটার হ্যান্ডসকম্বের হাফ-সেঞ্চুরির সুবাদে অস্ট্রেলিয়া প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সামনে ২৭৩ রানের টার্গেট খাড়া করে। ম্যাচটা ছিল কোহলির হোম গ্রাউন্ডে। তাই ভারতীয় সমর্থকরা আশায় ছিলেন ক্যাপ্টেনের ব্যাটে ভর করেই ভারত ম্যাচ ও সিরিজ-দু’টোই জিতবে। কিন্তু গোড়াতেই ভারতীয় ব্যাটিংয়ে গলদ ধরা পড়ে। ওপেনার শিখর ধাওয়ান দীর্ঘদিনের খরা কাটিয়ে গত ম্যাচে সেঞ্চুরি করার পর মনে হয়েছিল তিনি ফর্মে ফিরে এসেছেন। কিন্তু এদিন ১৫ বলে মাত্র ১২ রান করেই প্যাট কামিন্সের বলে আউট হয়ে যান শিখর। যদিও রহিত শর্মা শুরুটা করেন সাবধানে। বিরাট কোহলি ব্যাট করতে নামার পর কোটলার গ্যালারিতে শোনা যাচ্ছিল বিরাট গর্জন। চলতি সিরিজে বিরাট দু’টি সেঞ্চুরি করে প্রত্যাশা আরও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, ‘ফাইনালে’ তিনি ফের ব্যাট হাতে জ্বলে উঠবেন। প্রত্যাশা মতোই ধীরে ধীরে জয়ের ভিত গড়ে তোলার চেষ্টা করছিলেন রহিত-কোহলি জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁরা অর্ধশতরানের পার্টনারশিপ গড়ার পর চিন্তা বাড়ছিল অজি শিবিরে। ঠিক তখনই স্টোইনিসের শর্ট এবং ওয়াইড বলে কট বিহাইন্ড হন কোহলি (২০)। যা মোটেও প্রত্যাশিত ছিল না। কোহলির বিদায়ের পর চাপটা গিয়ে পড়ে রহিতের উপর। রহিত হাফ-সেঞ্চুরি করার পর মনে হচ্ছিল মঞ্চটা হয়তো তাঁর জন্যই সাজানো হয়েছে। কিন্তু সেটা হয়নি। অর্ধশতরানের পরেও বড় নড়বড়ে দেখিয়েছে তাঁকে। অ্যাডাম জাম্পার স্পিন কাঁপুনি ধরিয়ে দিয়েছিল ভারতীয় ব্যাটিংয়ে। রহিত দু’বার আউট হতে গিয়ে বেঁচে যান। কিন্তু ক্যাট ড্রপের সুবিধা কাজে লাগাতে পারেননি ভারতীয় ওপেনারটি। শেষ পর্যন্ত জাম্পার বলে কেরি স্টাম্পিং করেন রহিতকে (৫৬)। একই ওভারে জাম্পা ফেরান রবীন্দ্র জদেজাকেও (০)। চার নম্বরে বিশ্বকাপে কাকে খেলানো হবে তা এখনও ঠিক করে উঠতে পারেনি ভারতীয় টিম ম্যানেজমেন্ট। ঋষভ পন্থকে এদিন চারে নামিয়েছিলেন কোচ রবি শাস্ত্রী। শুরুতে কয়েকটা নজরকাড়া শট খেললেও ঋষভ ১৬ রানে নাথান লিয়ঁর বলে টার্নারের হাতে ধরা পড়েন। ঋষভের কিপিংটাও বড় দুর্বল। গত ম্যাচে তিনি দলকে ডুবিয়েছিলেন। এদিনও ক্যাচ ফেলেন তিনি। এই ব্যর্থতা ঋষভের বিশ্বকাপ খেলা অনিশ্চিত করে দিল।
ভারতের মিডল অর্ডারকে টলিয়ে দেন অস্ট্রেলিয়ার দুই স্পিনার নাথান লিয়ঁ ও অ্যাডাম জাম্পা। পাঁচে ব্যাট করতে নেমে বিজয় শঙ্কর তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ১৬ রানে জাম্পার বলে আউট হন। একটা ছক্কা মারার পর ফের তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ তোলেন বিজয়। নিয়মিত উইকেট পতনে আস্কিং রেট মাথা চাড়া দেয়। একটা সময় ভারতের স্কোর ছিল ৬ উইকেটে ১৩২ রান। সেই অবস্থায় ভুবনেশ্বর কুমারকে সঙ্গে নিয়ে কেদার যাদব ৯১ রান যোগ করায় ফের জয়ের আশা জেগে ওঠে ভারতীয় শিবিরে। শেষ পাঁচ ওভারে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৫৯ রান। কিন্তু প্যাট কামিন্সের বলে ভুবনেশ্বর ৪৬ রানে আউট হতেই চেপে বসে অস্ট্রেলিয়া। ৪৪ রানে সাজঘরে ফেরেন কেদার। সেই সঙ্গে ভারতের আশাও শেষ হয়ে যায়। জাম্পা ১০ ওভারে একটি মেডেন সহ ৪৬ রান দিয়ে ৩টি উইকেট নিয়েছেন। নাথান লিয়ঁ ১০ ওভারে একটি মেডেন সহ ৩৪ রান দিয়ে পেয়েছেন ১টি উইকেট। আর প্যাট কামিন্স ও রিচার্ডসন তুলে নিয়েছেন দু’টি করে উইকেট। সেই তুলনায় ভারতীয় বোলিং ছিল বড়ই দুর্বল। দেশের সেরা রিস্ট স্পিনার কুলদীপ যাদব ১০ ওভারে ৭৪ রান দিয়ে নেন মাত্র ১টি উইকেট। রবীন্দ্র জাদেজা (১০-০-৪৫-২) কিছুটা লড়াই করেন। সামি দু’টি উইকেট পেলেও ৯ ওভারে দিয়েছেন ৫৭ রান।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করে ভারতের সামনে বড় টার্গেট খাড়া করে অস্ট্রেলিয়া। দারুণ ছন্দে রয়েছেন উসমান খাওয়াজা। এদিন তিনি অনবদ্য ব্যাটিং করেন। ওপেনিং জুটিতে ক্যাপ্টেন অ্যারন ফিনচের সঙ্গে তিনি যোগ করেন ৭৬ রান। তবে ফিনচ শুরুটা ভালো করলেও রবীন্দ্র জাদেজার বলে ২৭ রানে বোল্ড হয়ে যান। এই মুহূর্তে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিংয়ের বড় ভরসা পিটার হ্যান্ডসকম্ব। গত ম্যাচেও তিনি শতরান করেছিলেন। এদিনও তিনি দারুণ ব্যাট করেন। দ্বিতীয় উইকেটে খাওয়াজা-হ্যান্ডসকম্ব যোগ করেন ৯৯ রান। তাতে বেশ চাপে পড়ে যায় ভারতীয় বোলাররা। হ্যান্ডসকম্ব হাফ-সেঞ্চুরি করার পর আচমকাই আউট হয়ে যান ৫২ রানে। তারপর ক্রমাগত উইকেট পড়তে থাকে অস্ট্রেলিয়ার। একটা সময় হয়েছিল তিনশোর বেশি রান তুলে ফেলবে ফিনচ বাহিনী। কিন্তু গ্লেন ম্যাক্সওয়েল (১), মার্কাস স্টোইনিস (২০), অ্যালেক্স কেরি (৩) দ্রুত আউট হয়ে যান। গত ম্যাচে ঝোড়ো ব্যাটিং করে অ্যাস্টন টার্নার অস্ট্রেলিয়াকে জিতিয়েছিলেন। এদিন অবশ্য খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। ২০ বলে ২০ রান করে তিনি কুলদীপের বলে জাদেজার হাতে ধরা পড়েন। একটা সময় অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল ৭ উইকেটে ২২৯ রান। ঝাই রিচার্ডসন ও প্যাট কামিন্স দারুণ লড়াই করে দলের স্কোর ২৭৩ রানে পৌঁছে দেন। রিচার্ডসন ২৯ করে রান আউট হন। দারুণ কৃপণ বোলিং করলেও বুমরাহ শেষ দিকে মার খান। তাঁর এক ওভারে রিচার্ডসন তোলেন ১৯ রান। কামিন্সের সংগ্রহ ৮ বলে ১৫ রান।
ম্যাচ শেষে বিরাট কোহলি বলেন, ‘যোগ্য দল হিসাবেই অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতেছে। তবে টার্গেট মোটেও কঠিন ছিল না। আমরা ভালো ব্যাট করতে পারিনি। একটা ওভারেই ম্যাচের মোড় ঘুরে গিয়েছে।’ আসলে মোহালিতে রাতে শিশির ফ্যাক্টর হয়েছিল। কোটলায় তা হল না!
কোটলার স্কোর
অস্ট্রেলিয়া: খাওয়াজা ক কোহলি বো ভুবনেশ্বর ১০০, ফিনচ বো জাদেজা ২৭, হ্যান্ডসকম্ব ক পন্থ বো সামি ৫২, ম্যাক্সওয়েল ক কোহলি বো জাদেজা ১, স্টোইনিস বো ভুবনেশ্বর ২০, টার্নার ক জাদেজা বো কুলদীপ ২০, কেরি ক পন্থ বো সামি ৩, রিচার্ডসন রান আউট ২৯, কামিন্স ক অ্যান্ড বো ভুবনেশ্বর ১৫, লিয়ঁ অপরাজিত ১, অতিরিক্ত ৪, মোট ৫০ ওভারে ৯ উইকেটে ২৭২।
উইকেট পতন: ৭৬-১, ১৭৫-২, ১৭৮-৩, ১৮২-৪, ২১০-৫, ২২৫-৬, ২২৯-৭, ২৬৩-৮, ২৭২-৯।
বোলিং: ভুবনেশ্বর ১০-০-৪৮-৩, সামি ৯-০-৫৭-২, বুমরাহ ১০-০-৩৯-০, কুলদীপ ১০-০-৭৪-১, জাদেজা ১০-০-৪৫-২, কেদার ১-০-৮-০।
ভারত: রহিত স্টাম্পড কেরি বো জাম্পা ৫৬, ধাওয়ান ক কেরি বো কামিন্স ১২, কোহলি ক কেরি বো স্টোইনিস ২০, ঋষভ ক টার্নার বো লিয়ঁ ১৬, বিজয় ক খাওয়াজা বো জাম্পা ১৬, কেদার ক ম্যাক্সওয়েল বো রিচার্ডসন ৪৪, জাদেজা স্টাম্পড কেরি বো জাম্পা ০, ভুবনেশ্বর ক ফিনচ বো কামিন্স ৪৬, সামি ক অ্যান্ড বো রিচার্ডসন ৩, কুলদীপ বো স্টোইনিস ৮, বুমরাহ অপরাজিত ১, অতিরিক্ত ১৫, মোট ৫০ ওভারে ১০ উইকেটে ২৩৭।
উইকেট পতন: ১৫-১, ৬৮-২, ৯১-৩, ১২০-৪, ১৩২-৫, ১৩২-৬, ২২৩-৭, ২২৩-৮, ২৩০-৯, ২৩৭-১০।
বোলিং: কামিন্স ১০-১-৩৮-২, রিচার্ডসন ১০-০-৪৭-২, স্টোইনিস ৪-০-৩১-২, লিয়ঁ ১০-১-৩৪-১, জাম্পা ১০-১-৪৬-৩, ম্যাক্সওয়েল ৬-০-৩৪-০।
অস্ট্রেলিয়া সিরিজ জিতল
৩-২ ব্যবধানে।
ম্যাচ ও সিরিজের সেরা:
উসমান খাওয়াজা।