বিতর্ক বিবাদ এড়িয়ে চলা প্রয়োজন। প্রেম পরিণয়ে মানসিক স্থিরতা নষ্ট। নানা উপায়ে অর্থ উপার্জনের সুযোগ। ... বিশদ
নিউটাউনে বিশ্ববাংলা কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত ন্যাসকম আন্তর্জাতিক এসইমি কনক্লেভে এক আলোচনা সভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তাঁর জীবনের অনেক অকথিত কথাই বললেন। ব্যর্থতা থেকে সাফল্যর হাইওয়েতে আসা প্রসঙ্গে শুক্রবার গোঁপীচাঁদ বলেন,‘খেলাধূলার প্রতি আগ্রহ দেখে আমাকে বাবা-মা গড়পড়তা ভারতীয়র মতোই স্থানীয় একটি ক্রিকেট সেন্টারে নিয়ে যান। কিন্তু গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ-গাভাসকর-কপিলের সাফল্যে ক্রিকেট আকাডেমিতে এত ভিড় যে আমার জায়গা হয়নি। এরপর তাঁরা একটি টেনিস আকাদেমিতে নিয়ে যান। ওই আকাদেমির খরচ এত বেশি ছিল যে, আমার পরিবার বহন করতে পারেনি। এরপর হায়দরাবাদের ফতেবাজারের ছ’ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা আবিদ হুসেনের কোচিং ক্যাম্পে নিয়ে যান। তখনই আমার ব্যাডমিন্টনে হাতেখড়ি হয়। বাবা-মা’র সঙ্গে চুক্তি হয়, স্কুলের পরীক্ষায় নির্দিষ্ট নম্বর পেলে ব্যাডমিন্টন খেলায় তাঁরা বাধা দেবেন না। আমি খেলার পাশাপাশি প্রতিশ্রুতিমতো নম্বর পেয়েছিলাম। এবার তাঁরা আমাকে ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার জন্য পরীক্ষায় বসালেন। ভাগ্যিস, অকৃতকার্য হয়েছিলাম। তাই র্যাকেট হাতে এত সাফল্য পেয়েছি। দেশকে হয়তো কিছু ফিরিয়ে দিতে পেরেছি।’
তিনি বলেন,‘কলকাতায় এলে আমার জুনিয়র ন্যাশনালে ঘুমিয়ে পড়ার কথা মনে পড়ে। সেবার প্রতিযোগিতা ছিল নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে। আমরা থাকতাম সল্টলেক স্টেডিয়ামের আলো-আঁধারির যুব আবাসে। রাতে ভালো ঘুম হত না। সকালে ম্যাচ খেলে বিশ্রাম নিতে আসি। ক্লান্তির জন্য বিকেলের ম্যাচে সময়মতো যেতে পারিনি। জীবনে সবথেকে বেশি কান্না সেদিনই কেঁদেছিলাম।’ অকপট গোপীচাঁদকে বলতে শোনা যায়,‘আবিদ স্যার আমাকে টেকনিকের ব্যাপারে খুব সাহায্য করেছিলেন তা নয়। তবে খেলাটিকে ভালোবাসতে শিখিয়েছিলেন। ব্যাডমিন্টনের টেকনিক আমি শিখেছি আরিফ স্যারের কাছে। জাতীয় স্তর থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে উত্তরণের সময়ে পাশে পেয়েছি প্রসাদ স্যারকে। আন্তর্জাতিক ব্যাডমিন্টনে দীর্ঘদিন টিকে থাকতে হলে কী করতে হবে তা শিখিয়েছেন প্রকাশ পাড়ুকোনই। তাঁর কাছে আমি অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। তবে বিশ্ব সার্কিটে আমার কেরিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন চাইনিজ কোচ চো হন সুঙ। এই পাঁচজনের পরামর্শ থেকেই কোচ গোপীচাঁদের জীবন দর্শন। আমার আকাদেমিতে যে সব কোচ আছেন তাঁদেরও উল্লেখিত পাঁচ কোচের জীবন দর্শন থেকে নেওয়া শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয়। আমার বাবা-মা তো ছেলেকে ইঞ্জিনিয়ার তৈরি করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জমি পাওয়ার পর তাঁরা বসতবাড়ি ব্যাঙ্কের কাছে বন্ধক রেখে আকাদেমির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। স্ত্রীও আমাকে সঙ্গত করেন। আমার আগে পুরুষ বিভাগে সুরেশ গোয়েল-প্রকাশ পাড়ুকোন সুনাম অর্জন করেছিলেন। কিন্তু মহিলা বিভাগে কেউ ছিলেন না। তাই আমি মহিলা চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে চেয়েছিলাম। সাইনা নেহওয়ালের মতো বাধ্য ছাত্রী পেয়েছিলাম। ভারতীয় ব্যাডমিন্টনকে ‘ব্রেক’ দিয়ে গিয়েছে সাইনার ওলিম্পিক পদক। এখন সার্কিটে প্রচুর মহিলা খেলোয়াড়। পাশে শ্রীকান্ত-প্রণয়-কাশ্যপরা রয়েছে। বাংলার ঋতুপর্ণা দাস চোট কাটিয়ে ব্যাডমিন্টন লিগে ভালো খেলছে। ওর দিকে নজর রাখুন। ২০২০ সাল থেকে আরও ভালো খেলবে। ২০১৮ সাল ভারতীয় ব্যাডমিন্টনের পক্ষে ভালো গিয়েছে। চোকার্স আখ্যা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে পিভি সিন্ধু। নতুন বছরে সিন্ধুর টার্গেট তিনটি টুর্নামেন্ট। এগুলি হল অল ইংল্যান্ড, প্রি-ওলিম্পিক ও বিশ্বচ্যাম্পিয়নশিপ। আমার আকাডেমিতে এখন ফিজিক্যাল ফিটনেসের উপর সবথেকে বেশি জোর দেওয়া হয়। স্বাক্ষরতা বৃদ্ধির মতোই এটি নিয়ে সামাজিক আন্দোলনের প্রয়োজন আছে।’