বাধা ও অসফলতার জন্য চিন্তা। মানসিক টানাপোড়েনের মধ্যে কোনও ভালো যোগাযোগ পেতে পারেন। ... বিশদ
ওড়িশার বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনার খবর রাতেই পেয়েছিলেন শিল্পী। তারপরও আশায় বুক বেঁধেছিলেন। স্বামী সুস্থ অবস্থায় ঠিক ফোন করবেন। কিন্তু না, তেমনটা হল না। শনিবার বিকেল ৩.২৫ মিনিট নাগাদ শক্তিগড় থানার বড়শুল পঞ্চায়েতের কুমিরকোলা গ্রামের ওই বাড়িতে ফোন এল। ফোনের ওপার থেকে জানিয়ে দেওয়া হল, সফিক কাজি আর বেঁচে নেই। এক লহমায় পুরো গ্রামটাই যেন শোকে মুহ্যমান হয়ে পড়ল। কোলে ছেলেকে নিয়ে শিল্পী বারবার বলতে থাকলেন, ‘বাবু তোর বাবা আর কোনওদিনই ভিডিও কল করবে না। তুই বাবার সঙ্গে আর দুষ্টুমি করতে পারবি না। আমাদের আর পাকা বাড়ি হবে না। সব শেষ হয়ে গেল।
সফিক কাজি তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে করমণ্ডল এক্সপ্রেসে চড়ে রওনা দিয়েছিলেন চেন্নাইয়ের উদ্দেশে। পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করেন। কয়েকদিন আগে বাড়ি ফিরেছিলেন। ২০-২২ দিন বাড়িতে থাকার পর আবার কর্মস্থলে ফিরছিলেন। কিন্তু এবার আর কাজের জায়গায় যাওয়া হল না। বালেশ্বরে ট্রেন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালেন তিনি।
মৃতের দাদা বাবু কাজি ফোনে বলেন, শুক্রবার রাতে রেল দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার পরই বিভিন্ন জায়গায় ফোন করতে থাকি। কোথাও খোঁজ না পেয়ে শনিবার সকালে ওড়িশার উদ্দেশে রওনা দিই। বিভিন্ন হাসপাতাল ও মর্গে খোঁজাখুঁজি করি। প্রথম দিকে কোথাও ওকে খুঁজে পাইনি। পরে জানতে পারি একটি হাসপাতালে ওর মৃতদেহ রয়েছে। ভাইকে এই অবস্থায় দেখতে হবে কোনদিনও ভাবিনি। আমাদের গরিবের সংসার। ও পরিযায়ী শ্রমিকের কাজ করে টাকা জমাচ্ছিল। ওর খুব ইচ্ছে ছিল একটি পাকা বাড়ি করার। ওর সেই স্বপ্ন অধরা থেকে গেল। দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকেই বাড়ি ফিরেছেন। কিন্তু আমার ভাই আর কোনওদিনই ঘরে ফিরবে না।
সফিকের স্ত্রী বলেন, ছেলে ওর বাবাকে দেখার জন্য বারবার জেদ ধরে। স্বামী বাইরে থাকলেও প্রতিদিনই ছেলেকে একবার করে ভিডিও কল করত। দু’জনে খুনসুটি করত। ছেলে কোনওকিছু নিয়ে জেদ ধরলে ওকে বাবার সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলিয়ে দিলেই শান্ত হয়ে যেত। বাবাকে না দেখে ও থাকতে পারে না। ছেলে বাবাকে ভিডিও কলে দেখতে চাইলে কী জবাব দেব!