নিজস্ব প্রতিনিধি, আরামবাগ: উৎসবের আলোয় যখন চারিদিক আলোকিত। মণ্ডপে মণ্ডপে আলোর রোশনাই। ঘরে ঘরে শারদোৎসবের আনন্দ। ঠিক তখনই মাটির ভাঙা ঘরে প্রায় না খেয়ে দিন কাটছে গোঘাটের শ্যামবাজার গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অশীতিপর অঞ্জনা প্রামাণিকের। অসুস্থ ছেলে ভর্তি মানসিক হাসপাতালে। ছেলের চিকিৎসার খরচ কোথা থেকে আসবে জানেন না। দুইবেলা খাবার ও ছেলের চিকিৎসার খরচের জন্য জনে জনে আবেদন করছেন। উৎসব ও আনন্দের মাঝে সাহায্যের আশায় দোরে দোরে ঘুরছেন অসহায় বৃদ্ধা মা। 
প্রতিকূলতার মাঝেও অশক্ত শরীর ও অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে জীবনযুদ্ধে লড়ছিলেন অঞ্জনা ভৌমিক। স্বামী হারা হয়েছেন প্রায় তিরিশ বছর আগে। স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে দেখেননি সংসারের স্বাচ্ছল্য। স্বামীর মৃত্যুর পর ছেলে সংসারের হাল ধরলেও স্ত্রীকে হারিয়ে সেই ছেলে এখন মানসিক ভারসাম্যহীন। শুক্রবার রাতে অসুস্থ ছেলেকে ভদ্রেশ্বর থানার মানসিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অসুস্থ ছেলেকে সারিয়ে তুলতে দীর্ঘদিন ধরে লড়াই করছেন। সেই যুদ্ধে খরচ হয়ে গিয়েছে সংসারের যাবতীয় সঞ্চিত অর্থ। বর্তমানে ছেলের চিকিৎসার অর্থও নেই। স্থানীয় গ্ৰাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ভাতার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলেও তার সবটাই বেরিয়ে যায় ছেলের ওষুধ কিনতে। যেখানে ভালো করে খাবারের অর্থই জোটে না, সেখানে ছেলের চিকিৎসার খরচ কীভাবে জোটাব, বলছেন বৃদ্ধা। পাড়া প্রতিবেশী ও স্থানীয় পঞ্চায়েতের সদস্যরা সহযোগিতা করেন, তাই কোনওরকমে দিন চলছে। জানি না মৃত্যুর পর ছেলের কী হবে। এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য কিংকর বেজ বলেন, বৃদ্ধার এই কষ্ট দেখলে যেমন খারাপ লাগে, তেমন অনুপ্রাণিতও হই। এই বয়সে সকাল হলে শুকনো ডাল কুড়োতে বেরিয়ে পড়েন। উঠোনে মাটির উনুনে হাঁড়িতে ভাত ফুটিয়ে ছেলেকে খাওয়ানোর পর নিজে খান। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে ওই বৃদ্ধাকে যথাসাধ্য সহযোগিতার চেষ্টা করা হচ্ছে। পঞ্চায়েতে প্রধান গিয়াসউদ্দিন বলেন, ওই বৃদ্ধার জন্য ভাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাটির ঘরে ত্রিপল খাটিয়ে থাকেন। ঘরে বিদ্যুৎতের লাইন কেটে দেওয়া হয়েছিল। লন্ঠনের আলোয় রাত কাটাতেন। কয়েকদিনে আগে আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে আমাদের ক্ষমতা খুব সীমিত। ওই বৃদ্ধা যাতে সবরকম সরকারি সহযোগিতা পান তারজন্য প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আবেদন করা হয়েছে। গোঘাট-২ পঞ্চায়েতের সমিতির সভাপতি অনিমা কাটারি বলেন, বিষয়টি শুনেছি। পুজোর পরেই ওঁর বাড়িতে যাব। আমাদের পক্ষ থেকে যতটা সহযোগিতা করা সম্ভব তার চেষ্টা করা হবে। গোঘাট-২ ব্লকের বিডিও দেবাশিস মণ্ডল বলেন, খাবারের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। পর্যাপ্ত চাল সরবরাহের ব্যাবস্থা আছে। তবে এখনই ঘর তৈরি করার কোনও স্কিম নেই। তবে ওই মহিলার বিষয়টি মানবিক দৃষ্টিতে দেখা হবে।  অর্ধাহারে দিন কাটছে গোঘাটের শ্যামবাজার গ্ৰাম পঞ্চায়েতের অঞ্জনা প্রামাণিকের।