কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
স্পেশাল টাস্ক ফোর্স (এসটিএফ)-এর তথ্য বলছে, সীমান্তের ওপার থেকে জঙ্গিরা প্রথমে দক্ষিণ দিনাজপুরে আসত। সেখান থেকে তাদের গন্তব্য ছিল আরামবাগ। আপাত শান্ত এই এলাকাকে তারা করিডর হিসেবে ব্যবহার করার চেষ্টাতেও ছিল। তাই আরামবাগে ঘাঁটি গেড়ে তারা ছড়িয়ে পড়ছিল দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অভিযোগ, জঙ্গিদের ‘আশ্রয়দাতা’র ভূমিকায় ছিল ধৃত আহসান ওরফে হাসান। হাসানের মা ফরিদা বেগমও জানাচ্ছেন, ছেলের সঙ্গে ‘মেহমানরা’ আসত। যথাসময়ে তাদের জন্য চা-জলখাবার পৌঁছে দিতেন তিনি। তবে তাদের সঙ্গে দেখা হয়নি কোনওদিন। গ্রামের লোকেরা আগুন্তুকদের দেখলেও বিশেষ মাথা ঘামাতেন না। তাঁরাও মনে করতেন ওঁরা নিশ্চয় হাসানের বাড়ির ‘মেহমান’ বা অতিথি। আর এই ‘মেহমান’ বেশধারী আগন্তুকরা আসলে আল কায়দার সক্রিয় সদস্য কি না, সেটা জানাই এখন এসটিএফের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।
সামতা গ্ৰামের ধান জমি লাগোয়া মাদ্রাসার শিক্ষক সফি উল্লার দোতলা পাকা বাড়ি। দোতলাটি হয়েছে কিছুদিন আগেই। বাড়িতে বসানো হয়েছে জলের পাম্প। গাছগাছালিতে ঘেরা মুফতি সাহেবের এই বাড়ি বেশ ছিমছাম। এখন অবশ্য এলাকায় বাড়িটির পরিচয় হয়ে উঠেছে আল কায়দার ঘাঁটি বলে। গড়ের ঘাট যাওয়ার মূল রাস্তা থেকে সামতা মোড়। সেখান থেকে সহজেই পৌঁছনো যায় এই গ্ৰামে। এতদিন যে বাড়িকে মুফতি সাহেবের বাড়ি বলে চিনতেন গ্রামবাসীরা, তাঁরাই এখন বলছেন, ‘ও আচ্ছা, হাসানের বাড়ি যাবেন। ওই তো মাঠের পাশে।’
বলছেন বটে, তবে সবার মুখেই আতঙ্কের ছাপ। কথা হচ্ছিল সেখ নিজামুদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলছিলেন, ‘হাসানের গ্রেপ্তারের ঘটনায় চারপাশে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। দু’দিনে গ্রামের পরিবেশ বদলে গিয়েছে।’ গ্রামের অনেকেরই আবার আশঙ্কা, হাসানের হাত ধরে হয়তো এলাকার অল্পবয়সী ছেলেরা গোপনে আল কায়দায় যুক্ত হয়েছে।
আরামবাগ শহর থেকে অনেকটাই দূরে সামতা গ্রাম। প্রত্যন্ত গ্ৰামীণ এলাকা বলতে যা বোঝায় তেমনই। গ্রামের অধিকাংশ মানুষের মূল জীবিকা চাষবাস কিংবা ছোটখাটো কাজ-কারবার। পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন আল কায়দা অথবা লাদেনের নাম হয়তো শুনেছেন। কিন্তু তার বেশি গ্ৰামবাসীদের এই সংগঠনের কার্যকলাপ নিয়ে কোনও ধারণাই নেই।
তবে, জেলায় নিষিদ্ধ সংগঠনের সক্রিয়তা যে বাড়ছে, তা মানছেন পুলিস প্রশাসনের আধিকারিকরা। ২০২০ সালে ধনিয়াখালি থানার পশ্চিম কেশবপুরের বাসিন্দা আয়েশা জান্নাত মোহনা বা জান্নাতুত তাসনিমকে বাংলাদেশের গোয়েন্দা পুলিস গ্ৰেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, সে নব্য জেএমবি সংগঠনের সদস্যা। ওমান প্রবাসী এক বাংলাদেশীকে বিয়ে করে। সংগঠনের বিস্তারের কাজে পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশে নিয়মিত যাতায়াত করত তাসনিম। পশ্চিমবঙ্গে সংগঠনের শাখাপ্রশাখা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজেও যুক্ত ছিল সে। এবার আল কায়দার মতো কট্টরপন্থী সংগঠনে যুক্ত আরামবাগের যুবকের নাম উঠে এল। জেলার এক উচ্চপদস্থ পুলিস অফিসার এদিন কথায় কথায় বলছিলেন, আরামবাগ শহর বাদ দিলে মহকুমার অধিকাংশ জায়গা গ্ৰামীণ। গ্ৰামগুলো দূরে দূরে অবস্থিত।
জনঘনত্বও খুব বেশি নয়। ফলে গ্রামবাসীদের সঙ্গে জঙ্গিরা আসা-যাওয়া করলে তাদের সহজে চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। সম্ভবত সেই কারণেই জঙ্গিরা এইসব গ্রামগুলিকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাইছে। বিজেপির আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সহ সভাপতি হেমন্ত বাগ বলছিলেন, ‘আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। পুলিস-প্রশাসনের উচিত দেশবিরোধী শক্তিগুলিকে কড়া হাতে মোকাবিলা করা।’ জঙ্গি সন্দেহে ধৃত যুবকের মা।-নিজস্ব চিত্র