উচ্চতর বিদ্যায় শুভ। যে কোনও কর্মে উপার্জন বাড়বে। ব্যবসার গতি ও আয় বাড়বে। ... বিশদ
সঈফ আনসারি। নলহাটি পুরসভার তিন নম্বর ওয়ার্ডের বিধু পাড়ার বাসিন্দা তিনি। ছোটবেলা থেকেই মনের ভাব প্রকাশ করতে না পেরে সব কিছুর প্রতি ইরিটেট হয়ে পড়েছিলেন। এখন তিনি অনর্গল কথা বলতে পারছেন। উচ্ছ্বসিত হয়ে এক মিনিট সাতান্ন সেকেণ্ড টানা কথা বলেছেন। সেই ভিডিও আপলোডও করেছেন সোশ্যাল মিডিয়ায়। ফেসবুক বন্ধুদের শুভেচ্ছায় ভরে উঠেছে তাঁর কমেন্ট বক্স। চিকিৎসকদেরও কুর্নিশ জানিয়েছেন তাঁদের অনেকেই।
শিশুদের মধ্যে আধো আধো কথা বলা কিংবা সামান্য তোতলামি কোনও নতুন বিষয় নয়। ব্যতিক্রমী ছিলেন না আনসারিও। ফলে সেই সময় পরিবারের সদস্যরা তাঁর তোতলামি নিয়ে খুব একটা গুরুত্ব দেননি। আনসারির বাবা সৌকত আনসারির ভেবেছিলেন বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এগুলো কমে যাবে। তাঁর এই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়। ১৭ বছর বয়সে আনসারির তোতলামির সমস্যা প্রকট হয়ে ওঠে। হীনমন্যতায় ভুগতে শুরু করেন তিনি। লোকজনের সামনে কথা বলতে ইতস্তত বোধ করতেন। এই অবস্থায় আনসারি উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করেন। একটি মোবাইল মেরামতের দোকান খোলেন। খদ্দেরকে বোঝাতে গেলে সমস্যায় পড়তে হতো তাঁকে। একরাশ বিরক্তি তাঁকে গ্রাস করত। ২০২১ সালের প্রথম দিকে একেবারেই কথা বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। সাত মাস আগে রামপুরহাট মেডিক্যালে আসেন আনসারি। চিকিৎসকরা তাঁকে জানিয়ে দেন, কোনও ওষুধে কাজ হবে না। স্রেফ স্পিচ থেরাপিতেই তিনি কথা বলতে পারবেন।
সেই মতো সপ্তাহে তিনদিন স্পিচ ফেরাপি শুরু হয় অনসারির। তাতেই আনসারির মুখে কথা ফোটে। এদিন তিনি বলছিলেন, ‘সাত মাস আগে আমার মুখ থেকে কথা বেরনো পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হাসপাতালে গিয়ে নিজের নামটাও বলতে পারছিলাম না। এখন কথা বলতে পেরে বেশ ভালো লাগছে। একসময় তো বাঁচার ইচ্ছেটাই হারিয়ে ফেলেছিলাম। এখন মনে হচ্ছে, নতুন জীবন পেলাম।’
বোবা মুখে কথা ফুটিয়ে খুশি রামপুরহাট মেডিক্যালের স্পিচ থেরাপিস্ট রাজশেখর নন্দী। তিনি বলছিলেন, ‘সঈফ প্রথম যেদিন এসেছিলেন, সেদিন নিজের নাম বলতে গিয়ে চোখ উল্টে ফেলেছিলেন। না পারার আক্ষেপ থেকে কপাল চাপড়াচ্ছিলেন। পরে তিনি নাম লিখে দিয়েছিলেন।’ রাজশেখরবাবু জানিয়েছেন, সঈফের সমস্যাটি আসলে নিউরোলজিক্যাল স্টাটারিং ডিসঅর্ডার। সমস্যা। স্পিচ থেরাপিই একমাত্র ওষুধ। সেই মতো থেরাপি শুরু হয় তাঁর। ওঁরও কথা বলার খুব চেষ্টা ছিল। অবশেষে ছমাসের মাথায় কথা বলতে শুরু করে সঈফ।’