সন্তানের কর্মলাভের সুখবর পেতে পারেন ... বিশদ
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ থেকে প্রশংসা শুনে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েন ঝর্ণাদেবী। তাঁকে যখন দৃষ্টান্ত হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী তুলে ধরছেন, তখন তিনি পঞ্চায়েতের কাজে ব্যস্ত। তিনি বলেন, মনে হচ্ছে স্বপ্ন দেখছি। মুখ্যমন্ত্রী আমার নাম বলবেন এটা কোনওদিনই ভাবতে পারিনি। আমি মনে করি নিজের পরিশ্রমের টাকায় সংসার চালানোটা সম্মানের। কষ্ট হলেও মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা যায়।
মুখ্যমন্ত্রী অন্যান্য জনপ্রতিনিধিদেরও কার্যত তাঁকে অনুসরণ করার পরামর্শ দিয়েছেন। জনপ্রতিনিধি হয়ে গেলে লাইফ স্টাইল বদলানো উচিত নয় বলেও তিনি ইঙ্গিত দেন। তিনি জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশে বলেন, নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মাথায় করে ইট বইবেন। গ্রামে গ্রামে যাবেন। গ্রামের রাস্তাগুলি ঠিক করবেন। নিজের সংগ্রামের কথা বলতে গিয়ে এদিনের প্রশাসনিক সভা থেকে নিজের ছোটবেলার কাহিনি তুলে ধরেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। তিনি ধান কাটতে ও রুইতে পারেন বলে জানান। জনপ্রতিনিধিদের কে কে ধান কাটতে পারেন সেটাও তিনি জানতে চান।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ঝর্ণা রায় দুই বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন। একটি বাড়িতে ৫০০ ও অন্য বাড়িতে এক হাজার টাকা পান। পঞ্চায়েত প্রধান হিসেবে পাঁচ হাজার টাকা ভাতা পান। ওঁর স্বামী কিডনির রোগী। ধার করে তাঁকে ওষুধ কিনতে হয়। তিনি মাটির ঘরে থাকেন। তাঁকে হ্যাটস অফ। খণ্ডঘোষের একটি পঞ্চায়েত ই-টেন্ডার করে আয় বাড়িয়েছে। বালির লরির জন্য তাদের মতো অন্যান্যদেরও ই-টেন্ডার করতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী পূর্ব বর্ধমানের পঞ্চায়েত প্রধানকে সততার দৃষ্টান্ত হিসেবে তুলে ধরায় খুশি অন্যান্য জনপ্রতিনিধিরাও। মেমারি-২ ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তথা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ মহম্মদ ইসমাইল বলেন, ওই প্রধান আমাদের কাছে গর্ব। তাঁর চলার পথ সত্যিই শিক্ষনীয়। ওই পঞ্চায়েত প্রধানের দুই মেয়ে রয়েছে। তিনি নিজে কাজ করে তাঁদের বিয়ে দিয়েছেন। স্বামী কাজ করতে পারেন না। তাঁর চিকিৎসার খরচও তিনি জোগাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠিত হওয়ার জন্য তিনি নিজেও পড়াশোনা করছেন। কম্পিউটার শিখছেন। তাঁর লড়াইকে স্যালুট জানাতে হয়।
পূর্ব বর্ধমান জেলা পরিষদের সহ সভাধিপতি দেবু টুডু বলেন, অন্যান্যদেরও তাঁকে অনুসরণ করতে বলব। আমাদের জেলার আউশগ্রামের আরএক পঞ্চায়েত প্রধান সব্জি বিক্রি করেন। তিনিও ভোর বেলা বেরিয়ে যান। কালনার এক মহিলা উপপ্রধানও মাঠে দিনমজুরের কাজ করেন। আমাদের দলেই এটা সম্ভব। এরকম আরও আছে। তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধাও নেন না।
তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, সামনের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এধরণের সৎ জনপ্রতিনিধিদেরই সামনে আনা হবে। শাসক দলের পক্ষ থেকে তা নিয়ে সার্ভেও করা হচ্ছে। আগামী দিনে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারেও ঝর্ণাদের জীবন সংগ্রামের কাহিনি তুলে ধরা হবে।