কর্মে শুভ। নতুন কর্মপ্রাপ্তি বা কর্মসূত্রে দূররাজ্য বা বিদেশ গমন হতে পারে। আনন্দানুষ্ঠানে যোগদান ও ... বিশদ
এবছর সাধারণতন্ত্র দিবসে রাজধানী দিল্লিতে বাংলার ট্যাবলো বাদ দিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু পিংলার সুবিখ্যাত পটচিত্রকে অগ্রাহ্য করতে পারেননি দিল্লির কর্তারা। আগামী ২৬ জানুয়ারি রাজধানী দিল্লিতে মহাসমারোহে পালিত হবে সাধারণতন্ত্র দিবস। দিল্লির রাজপথের দু’ধারে প্রায় দেড় কিলোমিটার অংশ জুড়ে থাকবে শিল্পীদের ক্যানভাস। তাতে থাকবে ভারতের বিপ্লবীদের ইতিহাস ও স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শৌর্যের কাহিনী। সেখানেই স্থান পেতে চলেছে পিংলার নয়ার এলাকার চিত্রশিল্পীদের পটচিত্র। গত নভেম্বরে ওড়িশার বালাসোরে ভারতের সংস্কৃত ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে কর্মশালার আয়োজন করা হয়। সেখানে পট আঁকার জন্য ডাক পান চিত্রশিল্পী বাহাদুর চিত্রকর। বাহাদুরবাবুর নেতৃত্বে নয়াগ্রামের ৩২জন শিল্পী পাড়ি দেন বালাসোরে। সেখানেই টানা সাতদিন ধরে ৫০ফুট লম্বা ও ৬ফুট চওড়া ৬টি পটচিত্র আঁকেন তাঁরা। ক্যানভাসে ফুটিয়ে তোলেন নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর জন্মবৃত্তান্ত, ক্ষুদিরামের বড়লাটকে মারার পরিকল্পনা থেকে ফাঁসি। মাতঙ্গিনী হাজরার ৪২’এর ভারতছাড়ো আন্দোলন, সিধু কানুর ব্রিটিশ বিরোধী লড়াই। তিতুমীরের বাঁশের কেল্লা ও বিনয়-বাদল-দীনেশের সংগ্রামী ইতিহাসের কাহিনী।
কীভাবে এই সুযোগ পেলেন বাহাদুরবাবু? তিনি বলেন, গতবছর ২৩ জানুয়ারি নেতাজির জন্মদিন উপলক্ষে কলকাতায় আসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেই উপলক্ষে কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে নেতাজির জন্মবৃত্তান্ত নিয়ে একটি ৬ ফুট চওড়া ও ১২০ ফুট লম্বা পট এঁকেছিলাম। সেই ছবি দেখেই মোহিত হয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। সেই অনুষ্ঠানে তাঁর সঙ্গে বার্তা বিনিময়ও হয়েছিল। কয়েকমাস আগে হঠাৎ করে একদিন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর থেকে ফোন আসে। সেখানেই আমাকে সাধারণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে বাংলার স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি আঁকার প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাঁর ছবি দিল্লির রাজপথে স্থান পেলেও রাজ্য সরকারের ট্যাবলোকে বাদ দেওয়ায় বাহাদুরবাবুর গলায় আক্ষেপের সুর। তিনি বলেন, আজ আমাদের পটচিত্র দিল্লিতে স্থান পেয়েছে, তার পিছনে রাজ্য সরকারের অবদান অস্বীকার করা যায় না। সরকার প্রতি মাসে আমাদের এক হাজার টাকা করে উৎসাহ ভাতা বাবদ দেয়। আমাদের শিল্পকে প্রচারের আলোয় নিয়ে আসার জন্য রাজ্যজুড়ে মেলা করে। রাজ্যের ট্যাবলোও স্থান পেলে আরও ভালো লাগত।
যদিও ছেলের সাফল্যে অত্যন্ত খুশি বাহাদুরবাবুর মা বাহাদুরজান চিত্রকর। তিনি বলেন, একটা সময় লোকের বাড়ি বাড়ি পটের গান গেয়ে ভিক্ষা করতাম। কেউ দু’মুঠো চাল, আলু দিলে তবেই সংসার চলত। কিন্তু বর্তমানে অবস্থার উন্নতি হয়েছে। আমাদের ছবি দিল্লিতে প্রদর্শিত হতে চলেছে। এর থেকে আনন্দের আর কী হতে পারে!
পিংলার বিডিও বিশ্বরঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, এটি অত্যন্ত গর্বের বিষয়। জেলার ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পদপ্তরের অধিকারিক দেবব্রত রায় বলেন, এর ফলে জেলার নাম উজ্জ্বল হল। গোটা রাজ্য থেকে একমাত্র পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার পটচিত্র প্রদর্শিত হবে। এর থেকে গর্বের আর কী হতে পারে?